E-Paper

কর্নাটকে প্রশ্নে বিদ্ধ যন্ত্রেই প্রসূতিদের রক্ত পরীক্ষা

চিকিৎসকদের মতে, প্রসূতিদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ঠিকঠাক যাচাই না হলে ভ্রূণের বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ হয়, মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বাড়ে, প্রসূতিদেরও প্রাণ সংশয় হতে পারে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৭

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

কর্নাটকে নিষিদ্ধ সংস্থার ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যবহার এবং তার জেরে এক প্রসূতি-মৃত্যুর অভিযোগে তোলপাড় চলছে। সেই কর্নাটকেই ‘শো-কজ়’-এর মুখে পড়া অন্য সংস্থার ‘ডিজিটাল হিমোগ্লোবিনোমিটার’ বঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রসূতিদের দেহে হিমোগ্লোবিন মাপায় ব্যবহারের অভিযোগ উঠল। চিন থেকে ওই ‘নিম্ন মানের’ যন্ত্র আমদানি করে হায়দরাবাদের একটি সংস্থা কম দামে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে সরবরাহ করে বলে সূত্রের দাবি।

চিকিৎসকদের মতে, প্রসূতিদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ঠিকঠাক যাচাই না হলে ভ্রূণের বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ হয়, মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বাড়ে, প্রসূতিদেরও প্রাণ সংশয় হতে পারে। রাজ্যে মোট অন্তঃসত্ত্বা বা প্রসূতিদের ২২ শতাংশ গুরুতর রক্তাল্পতায় ভোগেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই যন্ত্র এবং তাতে ব্যবহৃত ‘স্ট্রিপ’ (যার মধ্যে রক্তের বিন্দু ফেলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ মাপা হয়)-এর মান নিয়ে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কাছে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। একাধিক জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের (সিএমওএইচ) দফতর থেকে লিখিত জানানো হয়েছে, যন্ত্রে প্রসূতিদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের ভুল রিপোর্ট আসছে। ওই যন্ত্রে জল দিলেও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ফুটে উঠছে! তবে স্বাস্থ্যসচিব এবং হায়দরাবাদের সংস্থার এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর এম নাগারাজু বুধবার ফোন ধরেননি। মোবাইল-বার্তার জবাবও দেননি।

গত এপ্রিলে হায়দরাবাদের সংস্থাটি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এই যন্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষার সময়ে একাধিক বিশেষজ্ঞ লিখিত আপত্তি জানান। তাও ওই সংস্থা গত সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে যন্ত্র সরবরাহের সুযোগ পায়। প্রথম দফায় ১৬ হাজার যন্ত্র ও ২৫ লক্ষ ‘স্ট্রিপ’ সরবরাহ হয়।

গত ২৭ নভেম্বর ‘কর্নাটক স্টেট মেডিক্যাল সাপ্লাইজ় কর্পোরেশন’ নিম্নমানের জিনিস সরবরাহের অভিযোগে সংস্থাটিকে ‘শো-কজ়’ করে। গত ৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ দিনাজপুরের সিএমওএইচের দফতর থেকে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠিতে জানানো হয়, তারা যে হিমোগ্লোবিনোমিটার ও ‘স্ট্রিপ’ পেয়েছে, তাতে প্রসূতিদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষায় ভুল ফল আসছে।

সিএমওএইচের দফতরের বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মাসুদ সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) দিয়ে দাবি করেন, ওই ‘স্ট্রিপ’-এ জল ফেললেও যন্ত্রে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ দেখাচ্ছে! মাসুদের কথায়, “স্বাস্থ্যভবন বলল, শুধু আমরাই অভিযোগ করছি। অন্য জেলা করছে না।”

গত ১৪ জানুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সিএমওএইচের দফতর থেকেও হিমোগ্লোবিনোমিটার ও ‘স্ট্রিপ’-এর নিম্ন মান নিয়ে অভিযোগ হয়েছে। পরে ২৯টি যন্ত্র বদলানো হয়, ৫৮টি বদলানোর আশ্বাস মিলেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Midnapore Medical College and Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy