বিজেপির শীর্ষ নেতারা বুথকে দুর্গ বানানোর ডাক দিচ্ছেন। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, বাস্তবে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) গণনা-পত্র বিলির সময়ে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) সঙ্গে দলের বুথ লেভেল এজেন্টদের (বিএলএ ২) সে ভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সন্ত্রাস’ ও ‘চিহ্নিত (মার্কড) হওয়ার ভয়ে’ই এই হাল বলে দাবি। অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির লোক নেই বলে পাল্টা কটাক্ষকরেছে তৃণমূল।
কমিশনের হিসাবে, এখনও পর্যন্ত বিএলএ নিযুক্তিতে তৃণমূল-সহ অন্য দলগুলির থেকে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। রাজ্যের মোট ৮১ হাজার বুথের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজারে বিএলএ ২-এর তালিকা জমা দিয়েছে বিজেপি। বাকি বুথগুলি সংখ্যালঘু-প্রধান হওয়ায় সাংগঠনিক শক্তির ‘অপচয়’ করা হয়নি। কিন্তু ৬০ হাজার বুথে বিএলও-দের সঙ্গে কেন সে ভাবে বিজেপির বিএলএ-দের দেখা যাচ্ছে না? দলের একাংশের দাবি, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের পরে যে সন্ত্রাসের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, সেই ‘অভিজ্ঞতা’ থেকেই পাড়ায়-পাড়ায় শাসক-বাহিনীর মোকাবিলা করা কার্যত অসম্ভব। আরও অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএলও-দের ঘিরে রেখে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে তৃণমূল-বাহিনী। রাজ্য বিজেপির এক নেতাও বলছেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লোক-চিহ্নিত (‘ম্যান মার্কিং’) করার কথা বলেছিলেন। কর্মীরা ভয় পাচ্ছেন। অনেক জায়গায় লুকিয়ে দল করতে হয়। কর্মীরা ভাবছেন, নির্বাচনের আগে চিহ্নিত হলে ভোটের সময় প্রচারে বা ভোটের দিন বুথে বসার লোক পাওয়া যাবে না।”
এসআইআর-প্রক্রিয়ায় বিএলএ-দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখতে চাইছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের এজেন্টরা আক্রান্ত হলে ‘হিসাব’ বুঝে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার পরেও এই হাল হওয়ায় রাজ্য বিজেপির এক নেতার পর্যবেক্ষণ, “আমরা যাঁদের নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানাতাম, সেই সব ক্ষেত্রে তৃণমূল একতরফা ফর্ম পূরণ করছে। আর আমাদের মতুয়া ভোটারদের বড় অংশের নাম ২০০২-এর তালিকায় নেই। ফলে এসআইআর-এর সুফল বাস্তবে কতটা মিলবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” এই আবহে সব দলের বিএলএ-দের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে বিএলও-দের ‘নিরপেক্ষতা’র উপরে ভরসা রাখছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল। সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, “বিহারে ৮০ জন বিএলও-র জেল হয়েছিল, সেটা যেন কেউ ভুলে না যান। আর তৃণমূল সন্ত্রাস করে ফাঁকা মাঠে খেলবে ভাবলে ভুল ভাবছে।” তাঁর সংযোজন, “খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে অভিযোগ জানানোর সুযোগ আছে। গায়ের জোরে বাদ না-দিতে দেওয়া ভুয়ো ও মৃত ভোটারদের নাম তখন বাদ যাবে।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, “কোথাও সন্ত্রাস নেই। ওঁদের লোক নেই। ওঁরা রাজ্য কমিটি তৈরি করতে পারেননি, বুথে এজেন্ট দিতে পারেন না। তাই নাটক করছেন।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)