Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
tajpur

Tajpur: বছর ঘুরেও বাঁধ না পেয়ে হতাশা

কোথাও ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাঁধের বাঁধন— শালগাছের খুঁটি। শঙ্করপুর থেকে তাজপুর পর্যন্ত ৩.৩ কিলোমিটার সমুদ্র বাঁধের অবস্থা এখন ভাল নয়।

ইয়াসের পরের এক বছরে দিঘার সৌন্দর্যায়ন আরও ভাল হলেও শঙ্করপুরের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলির বেশিরভাগের হাল একই রয়ে গিয়েছে।

ইয়াসের পরের এক বছরে দিঘার সৌন্দর্যায়ন আরও ভাল হলেও শঙ্করপুরের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলির বেশিরভাগের হাল একই রয়ে গিয়েছে। ছবি: কিংশুক আইচ।

কেশব মান্না
তাজপুর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২২ ০৫:৪২
Share: Save:

ঘুরেছে সময়ের কাঁটা। এসেছে নুতন বছর। ফিরেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর স্মৃতি। গত বছর ২৬ মে পূ্র্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকায় এই ঝড়ের ফলে হয়েছিল প্রবল জলোচ্ছ্বাস। লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সৈকত শহর দিঘা।

সেই দগদগে ক্ষতের উপরে কিছুটা প্রলেপ পড়লেও ভুক্তভোগীদের মনে থেকে গিয়েছে তার বিধ্বংসী রূপের ছবি। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলের কিছু অংশে নতুন কংক্রিটের গার্ডওয়াল মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কোথাও ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাঁধের বাঁধন— শালগাছের খুঁটি। শঙ্করপুর থেকে তাজপুর পর্যন্ত ৩.৩ কিলোমিটার সমুদ্র বাঁধের অবস্থা এখন ভাল নয়। জোয়ারের সময় শাল গাছের খুঁটি দিয়ে তৈরি বাঁধ ছাপিয়ে বঙ্গোপসাগরের জল এলাকা প্লাবিত করে। যে রাস্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প দিঘা যাওয়ার মেরিন ড্রাইভ তৈরির কথা ছিল, তার পিচ সরে গিয়ে রাস্তার কঙ্কালসার দশা বেরিয়ে এসেছে। গত কয়েকমাসে পাকাপাকিভাবে সামুদ্রিক বাঁধ তৈরির কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় সমুদ্র যেন জনবসতির আরও কাছে চলে এসেছে।

আগামী জুন, জুলাই, অগস্টে ভরা বর্ষার মরসুম চলবে। সে সময় সমুদ্র আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। ফলে স্থানীয় চাঁদপুর, তাজপুর, জামড়া, লছিমপুর এবং জলধা গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। তাজপুরের রঞ্জিত মল্লিক বলেন, ‘‘২০০৮-’১০ সাল নাগাদ পরপর দুবার সমুদ্রে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইয়াসে জলোচ্ছ্বাসে সেই বাঁধের ছিটেফোঁটাও নেই।’’ জলধা গ্রামের বাসিন্দা ভবেশ চাউলিয়া বলেন, ‘‘গত বছর বাঁধ না থাকায় সব কিছু হারিয়েছি। এতদিন বাদেও কংক্রিটের বাঁধ তৈরি সম্পূর্ণ হয়নি।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সামুদ্রিক বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। সে জন্য রাজ্য সরকার ৮০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ শেষ করা হবে।’’

ইয়াসে দুই ২৪ পরগনার বহু এলাকায় একরের পর একর কৃষিজমি ডুবে গিয়েছিল নোনা জলে। সেই জমি এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি বলে দাবি চাষিদের। নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ, গোসাবা ব্লকের পাখিরালয়, দুমকি, সোনাগাঁ, কুমিরমারি, আমতলি, রাঙাবেলিয়া এলাকার চাষে বিপুল ক্ষতি হয়েছিল। হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েতের কুমিরমারি, টিনপাড়া, রূপমারি গ্রামেও চাষ নষ্ট হয়ে যায়। যে সব জমি তিন ফসলি ছিল সেখানে এখন একটি ফসলও ভাল ভাবে হচ্ছে না। কমেছে ফলনের পরিমাণও। একই অবস্থা বাঁধেরও। ইয়াসের পর কিছু কিছু নদীবাঁধ মেরামতি হলেও বহু জমি নদী গর্ভে চলে গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। সন্দেশখালি-১ ব্লকের কালীনগর, শেয়ারা রাধানগর, ন্যাজাট-১ এবং ২ এলাকার নদীবাঁধ এখনও বেহাল। কংক্রিটের বাঁধের দাবিতে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধের উপর মঙ্গলবার বিক্ষোভও দেখান এলাকাবাসী। বুধবার ডায়মন্ড হারবারের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসক পি উলগানথন বলেন, ‘‘নোনা মাটিতে মাছ, ধান, আনাজ চাষের উপযোগী করার জন্য ব্লক প্রশাসন কৃষি দফতরের মাধ্যমে উদ্যোগী হচ্ছে। চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’

(সহ প্রতিবেদন: প্রসেনজিৎ সাহা, নবেন্দু ঘোষ, দিলীপ নস্কর)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tajpur dam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE