E-Paper

‘বাংলার বাড়ি’ শংসাপত্র নিয়ে শুনানিতে জট

কমিশনের বিধিবদ্ধ নথিগুলির মধ‍্যে একটি হল, সরকারের দেওয়া জমি বা বাড়ির শংসাপত্র (অ‍্যালটমেন্ট সার্টিফিকেট)। অর্থাৎ, রাজ‍্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কাউকে জমির পাট্টা দিতে পারে অথবা দিতে পারে বাড়ি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫১

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

শুনানি পর্বে নথির প্রশ্নে এত কড়াকড়ি যে হবে, শুরুতে তা আঁচ করতে পারেননি জেলা প্রশাসনিক কর্তারা। তবে শুনানি হতেই তা টের পেলেন তাঁরা। কমিশনের স্থির করে দেওয়া বিধির বাইরে নথি আপলোড তো করাই যাচ্ছে না, এমনকি আধার দাখিল হলেও, দিতেই হচ্ছে বিকল্প আর একটি নথি। অবশ‍্য, এই বিধি আগেই জানিয়ে দিয়েছিল কমিশন। সব থেকে গোল বেধেছে ‘বাংলার বাড়ি’ শংসাপত্র নিয়ে। এ রাজ্যে এসআইআর চালু হওয়ার পর থেকে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে এই শংসাপত্র উপভোক্তাদের দিতে শুরু করেছিল পঞ্চায়েত দফতর। কিন্তু তা আপাতত আপলোড করতে চাইছেন না শুনানির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা। এমনকি, এমন নথি হাতে থাকা অনেক ব‍্যক্তিকে ফেরাতে হয়েছে বিকল্প নথি আনতে। অন‍্য দিকে, তিন জন বিএলও-র বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে কমিশনকে জানিয়েছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর।

কমিশনের বিধিবদ্ধ নথিগুলির মধ‍্যে একটি হল, সরকারের দেওয়া জমি বা বাড়ির শংসাপত্র (অ‍্যালটমেন্ট সার্টিফিকেট)। অর্থাৎ, রাজ‍্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কাউকে জমির পাট্টা দিতে পারে অথবা দিতে পারে বাড়ি। সরকারি বিধিতে এই হস্তান্তর হয় নির্দিষ্ট নথির ভিত্তিতে। পোশাকি ভাষায় তাকেই ‘অ‍্যালটমেন্ট সার্টিফিকেট’ বলা হয়।

এ রাজ্যে অনেক দিন ধরেই চলছে আবাস যোজনার কাজ। কেন্দ্রের বরাদ্দ আপাতত বন্ধ থাকায় ‘বাংলার বাড়ি’ নামে একই প্রকল্প চালাচ্ছে নবান্ন। এ পর্যন্ত ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরি বাবদ কিছু অর্থ (মাথাপিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা) দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে জানুয়ারি থেকে সেই অর্থ দেওয়ার কাজ শুরু করবে নবান্ন। তা দিয়ে বাড়ি তৈরি করিয়ে নেবেন উপভোক্তা নিজেই। পঞ্চায়েত দফতর মনে করেছিল, এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের শংসাপত্র দিলেই তা কাজে লাগানো যাবে। বাস্তবে তা হচ্ছে না।

কেন এই সমস‍্যা?

নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, তাদের বিধিতে সরকারের তরফে জমি-বাড়ি পাওয়ার ‘অ‍্যালটমেন্ট সার্টিফিকেট’ গ্রাহ্য। ফলে জমির পাট্টা পাওয়া ব‍্যক্তিরা সেই তথ্য দেখালে কোনও সমস্যা নেই। তবে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পটি টাকা দেওয়ার জন‍্য। যা দিয়ে উপভোক্তা নিজে বাড়ি তৈরি করিয়ে নেন। ফলে তার শংসাপত্র গ্রাহ্য নয়। যদি এমন হয়, আবাসন, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর বা সরকারের অন্য কোনও দফতর কাউকে তৈরি বাড়ি দিচ্ছে, সেই ‘অ‍্যালটমেন্ট সার্টিফিকেট’ বৈধ হবে। তা ছাড়া, আবাস প্রকল্পের উপভোক্তা যাচাই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বহু ভুয়ো উপভোক্তা বৈধ ব‍্যক্তির বদলে প্রকল্পের অর্থ পেয়েছেন, এই অভিযোগে বরাদ্দ বন্ধ করেছিল কেন্দ্র। তার পরে রাজ্যের তরফে সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, বরাদ্দ জটমুক্ত হয়নি। আবার এখন যে নতুন ১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ির টাকা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেই তালিকায় কেন্দ্রের অনুমোদন নেই (অবশ্য রাজ‍্যের দাবি, নিজস্ব অর্থে প্রকল্প চলছে বলে কেন্দ্রের অনুমোদন দরকার নেই)। সব মিলিয়ে তাই ওই শংসাপত্র ভোটারদের একাংশ দাখিল করলেও, তা আপলোড করতে পারছেন না শুনানির দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা।

ঘটনাচক্রে, শুধু আধার কেউ দাখিল করলেও, তা আপলোড করা যাচ্ছে না। কারণ, এর আগেই সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করে কমিশন জানিয়েছিল, শুধু আধার (সচিত্র পরিচয়পত্র হিসেবে, যা নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়) দাখিল করলে তার সঙ্গে তালিকাভুক্ত অন্য যে কোনও একটি নথি দিতে হবে ভোটারকে।

অন‍্য দিকে, একাধিক রিপোর্টের ভিত্তিতে কমিশন তিন জন বিএলও-র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের প্রস্তাব বিবেচনা করছে। শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাবে সিলমোহর দিলে তেমন পদক্ষেপ করতে পারে সিইও কার্যালয়। শুনানি পর্বে সেই সম্ভাবনা ইআরও বা এইআরও-দের ক্ষেত্রেও থেকে যাচ্ছে বলে কমিশন সূত্রের দাবি। কারণ, এই পর্বে নথি যাচাই এবং শুনানি করে ভোটারের যোগ্যতা নির্ধারণ করবেন তাঁরাই। সমান্তরালে জেলাশাসকেরাও দাখিল হওয়া নথি পৃথক ভাবে যাচাই করা শুরু করেছেন। ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রের সূত্র অভিন্ন থাকতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy