Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Congress

সিপিএমের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেসি মিঠু, জোরাল হচ্ছে দূরত্বের জল্পনা

তাঁর কাছে কি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও প্রস্তাব এসেছে? শনিবার সরাসরি প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়েছেন দেবপ্রসাদ রায় (মিঠু)।

সিপিএম নেতৃত্বের ভূমিকায় তিনি যে প্রবল ক্ষুব্ধ, তা গোপন করেননি দেবপ্রসাদ।

সিপিএম নেতৃত্বের ভূমিকায় তিনি যে প্রবল ক্ষুব্ধ, তা গোপন করেননি দেবপ্রসাদ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:০৫
Share: Save:

রাজ্যের প্রবীণ কংগ্রেসনেতা দেবপ্রসাদ রায় (মিঠু) কি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যেতে পারেন? রাজ্য রাজনীতিতে, বিশেষত উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে ক্রমশ জোরাল হচ্ছে এই জল্পনা। তাঁর কাছে কি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও প্রস্তাব এসেছে? শনিবার সরাসরি প্রশ্ন করা হলে দেবপ্রসাদ এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই প্রশ্ন আমার জন্য অবমাননাকর। যখন রাজ্য এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে যে, বিজেপি ক্ষমতা দখল করবে না গণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসবে, তখন সেই লড়াইয়ের সৈনিক অবশ্যই হওয়া যায়। কিন্তু সামনের সারিতে গিয়ে যুদ্ধ করব না পিছনের সারিতে থেকে অয়্যারলেস সেট চালানোর কাজ করব, সেটা আমার দক্ষতার উপর নির্ভর করবে।’’

প্রবীণ কংগ্রেস নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘আমার অবস্থানগত বদল হতেই পারে। যেহেতু একটা প্ররোচনা এসেছে। আর সেটা নিয়ে কেউ কিছু বলছেনও না।’’

যে ‘প্ররোচনা’র কথা দেবপ্রসাদ বলছেন, তা এসেছে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের তরফে। তাদের ভূমিকায় তিনি যে প্রবল ক্ষুব্ধ, তা গোপন করেননি দেবপ্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘গত ২২ জানুয়ারি আলিপুরদুয়ারের জেলা সিপিএম সম্পাদক মৃণালকান্তি রায় প্রকাশ্যেই বলেছেন, আমি এ বার আলিপুরদুয়ারে বিরোধী জোটের প্রার্থী হলে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে কাজ করবেন। গতবারের ভোটে আমি নাকি কংগ্রেসের প্রার্থীকে তলে তলে হারানোর কাজ করেছিলাম! তৃণমূলের সৌরভ চক্রবর্তীকে জেতানোর পিছনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলাম! অথচ কংগ্রেসের প্রার্থী নিজেও তেমন কোনও অভিযোগ করেননি।’’

মৃণালকান্তির ওই বক্তব্য দেবপ্রসাদ লিখিত ভাবে সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে জানিয়েছিলেন। দেবপ্রসাদের কথায়, ‘‘উনি নীরব থেকেছেন। ওঁর নীরবতা দেখে আমি ওঁকে ফোন করে বলি, আমি একটা বিষয় পাঠিয়েছি। সেটা কি দেখেছেন? সুজন বলেন, ‘এখনই দেখছি মিঠুবাবু।’ কিন্তু উনি তার পরেও সেটা দেখেছএন বলে অন্তত আমি তো দেখতে পেলাম না। ফলে প্ররোচনা যথেষ্টই রয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এখনও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সরাসরি প্রস্তাব আসেনি।’’

বস্তুত, গত ৫৭ বছর ধরে দেবপ্রসাদ নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কংগ্রেস রাজনীতিই করছেন। ১৯৭০ সালে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দলের সর্বক্ষণের কর্মী হয়েছিলেন। আগে দিল্লিতে সর্বভারতীয় স্তরে কাজ করলেও এখন ‘জলপাইগুড়ির ভূমিপুত্র’ রাজ্যের রাজনীতিতেই সম্পৃক্ত। ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত তিনি ছিলেন জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক। ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক। ২০১৬ সালে তিনি ভোটে দাঁড়াননি। তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, তখন তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার অব্যবহিত আগে তাঁকে ফোন করে আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সুব্রত বক্সি। কিন্তু তিনি রাজি হননি। গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের একটি জেলাতেও তৃণমূল খাতা খুলতে না পারায় বিধানসভা ভোট তাদের কাছে কঠিন পরীক্ষা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেবপ্রসাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তৃণমূলের কাছে। যিনি আবার ইতিমধ্যেই ‘প্ররোচিত’।

ঘটনাচক্রে, সিপিএমের তরফে অবস্থান বদলের ‘প্ররোচনা’র পাশাপাশি নিজের দলের তরফেও ‘প্ররোচনা’ রয়েছে বলে দেবপ্রসাদের সতীর্থদের একাংশের বক্তব্য। প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘সিপিএম বা বিজেপি কেউ এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল জ্বালায়নি। অথচ ধর্মতলায় কংগ্রেস মমতার কুশপুতুল জ্বালিয়ে দিল! কংগ্রেসের তো উচিত ছিল নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল জ্বালানো! এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যিনি লড়ছেন, কংগ্রেস তাঁরই কুশপুতুল জ্বালাচ্ছে! আমাদের দল কি আদৌ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়তে আগ্রহী? তো সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Congress CPM Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE