কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে তৃণমূল পাঠিয়েছে লোকসভার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারকে। ফাইল চিত্র ।
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার প্রতিবাদে বিরোধীদের নিয়ে জোট বাঁধতে প্রস্তুত কংগ্রেস। সেই আবহে গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের ডাকা বৈঠকে সোমবার প্রতিনিধি পাঠাবে বিভিন্ন বিরোধী দল। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূলের দুই সাংসদও। কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে তৃণমূল পাঠিয়েছে লোকসভার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারকে।
কাহিনির ‘মোচ়ড়’ এখানেই। সোমবারের বৈঠকে যে দুই সাংসদকে তৃণমূল পাঠিয়েছে, তাঁরা প্রচলিত অর্থে ‘রাজনীতিক’ নন। প্রসূন এবং জহর দু’জনের কেউই পেশাগত বাবে রাজনীতিক নন। তাঁরা সমাজের অন্য পরিসর থেকে এসে যথাক্রমে লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। কিন্তু একইসঙ্গে তাঁরা তৃণমূলের সাংসদও বটে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই বৈঠকে পাঠানো হয়নি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন বা সুখেন্দুশেখর রায়কে। যাঁরা তুলনায় ‘ওজনদার’। যাঁদের জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে দলের তরফে মতামত দেওয়ার অধিকার রয়েছে।
তৃণমূলের এই পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট যে, রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর দেশ জুড়ে বিজেপি-বিরোধী যে মনোভাব তৈরি হয়েছে এবং কংগ্রেসের পালে সামান্য হলেও হাওয়া লেগেছে, সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত থেকে ঘটনাবলি থেকে দূরে থাকতে চাইছে না তৃণমূল। তেমন হলে তা ‘কৌশলগত’ দিক থেকে ঠিক হবে না বলেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অভিমত। আবার পাশাপাশিই ‘ওজনদার’ নেতা পাঠিয়ে কংগ্রেসের বৈঠককে বাড়তি গুরুত্ব দিতেও তারা নারাজ। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা দেখে নিতে চাই, কংগ্রেস কোন পথে এগোচ্ছে। তাই ওই দুই সাংসদকে পাঠানো হয়েছে জল মাপতে। বৈঠক থেকে ফিরে এসে তাঁরা দলীয় নেতৃত্বকে রিপোর্ট করলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে ভাবব।’’
রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়া নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুলের নাম না করলেও তিনি লিখেছিলেন, সমস্ত বিরোধীপক্ষই এখন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘টার্গেট’ হয়েছে। অর্থপূর্ণ টুইট করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের পরেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে তৎপর হয়েছে কংগ্রেস। রাহুল নিজে যেমন বিরোধীদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন, তেমনই সোনিয়া গান্ধী বিরোধীদের আলাদা আলাদা করে সরব না হয়ে ‘পদ্ধতিগত এবং সঙ্ঘবদ্ধ’ ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করার ডাক দিয়েছেন। তবে তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি জানিয়েছিল, বিজেপি-বিরোধী জোট হলেও তা হবে কংগ্রেসকে বাদ রেখে। কোনও ভাবে কংগ্রেসকে জোটসঙ্গী করতে রাজি নয় তারা। বস্তুত, তৃণমূল একধাপ এগিয়ে কংগ্রেসের ‘দাদাগিরি’র কথাও উল্লেখ করেছিল।
সেই মনোভাবের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকের চরিত্র এবং বাকি বিরোধী দলগুলির ভাবগতিক বুঝতে প্রসূন এবং জহরকে সোমবারের বৈঠকে পাঠানো হয়েছে। অনেকের মতে, তৃণমূল এই বার্তাও পাঠাতে চাইছে যে, তারা গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে কংগ্রেসের সঙ্গে সহমত। কিন্তু তার অর্থ একেবারে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ল়ড়তে প্রস্তুত না, তা-ও নয়।
সোমবার রাহুল প্রশ্নে সংসদে তিন দফার কর্মসূচি নিয়ে এগোতে চাইছে তৃণমূল। সকালে বৈঠকের পর সুদীপের নেতৃত্বে আলাদা করে বৈঠকও করার কথা তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদদের। সেখানেই ঠিক হবে আগামী রণনীতি। এর পর বিরোধী সাংসদদের সঙ্গে মুখে কালো কাপ়ড় বেঁধে সংসদ চত্বরে প্রতিবাদে শামিল হবেন তৃণমূল সাংসদরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy