বাংলায় ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধনের (এসআইআর) বিজ্ঞপ্তি জারির আগে সব দলের সঙ্গে আলোচনা এবং গোটা প্রক্রিয়া থেকে পক্ষপাতদুষ্ট আধিকারিকদের বাদ দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে দাবি জানাল কংগ্রেস। পাশাপাশিই, যে রাজ্যে পূর্ববঙ্গ থেকে বহু পরিবার বছরের পর বছর ধরে রয়েছে, সেখানে বাবা-মায়ের জন্মে নথি চাওয়ার জটিলতা বাদ দেওয়ার জন্য আর্জি জানাল তারা। বিহারে কোনও সর্বদল বৈঠক ছাড়াই এসআইআর শুরু করে দেওয়া হয়েছিল। এখানে তেমন করা যাবে না বলে আগাম দাবি তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) অবশ্য জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তাঁদের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের উপরে নির্ভর করতে হবে। নভেম্বরেই বাংলায় এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে।
এসআইআর শুরু হওয়ার আগে বাংলায় রাজনৈতিক উত্তাপ এখন পুরো মাত্রায় জারি রয়েছে। কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এক জন বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে এক লক্ষ মানুষ কমিশন ঘেরাও করবে। সেই মেজাজেই রাজ্যে এসআইআর শুরুর সম্ভাব্য সময় ধরে নিয়ে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শহিদ মিনারে বড় সমাবেশ করতে চাইছে তৃণমূল। এসআইআর-বিরোধিতার নামে বিশৃঙ্খলা করতে গেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তার জবাবে ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক পাল্টা বলেছেন, ‘‘আগেও বলেছি, এখনও বলছি, এক জনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। যদি কোনও বৈধ ভোটারের নাম এসআইআরে বাদ যায়, তবে সুকান্ত মজুমদারও তাঁর নিজের বাড়িতে থাকতে পারবেন না!’’
বিহারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলায় যাতে এসআইআর-এর সময়ে কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ হয়, সেই সংক্রান্ত ১৬ দফা দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রতিনিধিদলে ছিলেন কংগ্রেসের এসআইআর সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারপার্সন প্রসেনজিৎ বসু, প্রশান্ত দত্ত, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, রোহন মিত্র, পূজা রায়চৌধুরী, পার্থ ভৌমিক, মৃণাল নস্কর, রহিম শেখরা। তাঁরা দাবি করেছেন, বিএলও, ইআরও, ডিইও-সহ নির্বাচনী আধিকারিকদের ‘পক্ষপাত বা দলবাজি’র নানা অভিযোগ সামনে আসছে। এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর নির্দিষ্ট সংস্থান রাখতে হবে এবং ‘দোষী’ আধিকারিকদের গোটা প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কমিশনে তাঁরা আরও ব্যাখ্যা করেছেন, পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বহু পরিবার বাংলায় রয়েছে। সেই সমস্ত পরিবারের লোকজনের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মায়ের জন্ম সংক্রান্ত নথি থাকে না এবং সে সব কেউ কোথাও চায়ও না। এসআইআর-এর সময়ে এই সমস্যার কথা কমিশনকে খেয়াল রাখার আর্জি জানিয়েছে কংগ্রেস। পরে প্রসেনজিৎ বলেছেন, “বিহারে এসআইআর করে বহু বিবাহিত মহিলা ও পরিযায়ী শ্রমিকের নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু সেখানে অনুপ্রবেশকারীর নাম বা সংখ্যা কমিশন দিতে পারেনি। ভোটার তালিকার শুদ্ধকরণ আমরাও চাই। সেটা যাতে ঠিক ভাবে হয়, তার জন্যই কমিশনের কাছে নির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছি।”
বিজেপির তরফে অবশ্য এসআইআর-প্রশ্নে নানা হুঙ্কার অব্যাহত। উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি ও নাগরাকাটায় গিয়ে এ দিনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘আমরা গত লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ৪২ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলাম। এ বার এসআইআর। ইতিমধ্যে দু’কোটি ৪০ লক্ষ নাম বাদ পড়ছে। এর মধ্যে মৃত, ভুয়ো, দু-তিনটি স্থানে নাম থাকা ভোটার, অনুপ্রবেশকারীরা রয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভারতীয় মুসলমানদের কোনও চিন্তা নেই। সংবিধান শেষ কথা বলবে। পিসি-ভাইপো এসআইআর-এর বিরোধিতা করছেন। বেশি বিরোধিতা করলে এসআইআর হবে না। তা হলে ভোট হবে না। আগামী ৪ মে’র পরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে যাবে।’’ কমিশনের নাম করে নানাবিধ যে দাবি শুভেন্দুরা করে চলেছেন, তা নিয়ে কমিশনের বক্তব্য জানাতে সিইও-র কাছে দাবি জানিয়েছেন প্রসেনজিতেরা। কারণ, রাহুল গান্ধীর দাবির প্রেক্ষিতে স্বয়ং মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সরব হয়েছিলেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)