প্রতীকী ছবি।
প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও রেলের টিকিটে ছাড় না পাওয়ায় মামলা গড়াল ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। প্রতিবন্ধী ওই মহিলাকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা নীলাঞ্জনা সিংহের পরিবার ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল মুম্বই যাওয়ার জন্য গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরার টিকিট কাটে। পরিবারের গন্তব্য ছিল বাদনেরা। নীলাঞ্জনা মানসিক প্রতিবন্ধী। নিয়ম মতো, এক জন প্রতিবন্ধীর সফরসঙ্গী হিসেবে আর এক জন ট্রেনের টিকিটে অর্ধেক ছাড় পান। সেই মতো নীলাঞ্জনার প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের প্রতিলিপি রেলকে দেওয়া হলেও ‘বুকিং ক্লার্ক’ ওই ছাড় দেননি বলে অভিযোগ। নীলাঞ্জনার জেঠু কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি প্রভেন্দুনারায়ণ সিংহের অভিযোগ, ‘‘টিকিটে ছাড় না পাওয়ার বিষয়টি একাধিক বার রেল কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। কলকাতায় ফিরে এসে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম। তাতেও কাজ হয়নি। এতেই প্রমাণিত যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ওঁরা এখনও বঞ্চিত। তাই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলাম।’’
বছর তিনেক আগে প্রথমে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে রেলের বিরুদ্ধে চার লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করে সিংহ পরিবার। গত মে-তে ওই আদালত রেলকে ভর্ৎসনা করে জানায়, এক মহিলার পঁচাত্তর শতাংশ মানসিক প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও রেলের ছাড় না পাওয়ার অর্থ বঞ্চনার শিকার ওঁরা। জেলা ক্রেতা আদালত প্রায় চার হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। ক্ষতিপূরণের টাকায় সন্তুষ্ট না হয়ে জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা আদালতে মামলা করে ওই পরিবারটি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক শ্যামল গুপ্ত তাঁর রায়ে রেলের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘‘প্রতিটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষকে রেলের কর্মীদের আলাদা চোখে দেখা দরকার। ভারতীয় রেলের মতো শতবর্ষপ্রাচীন একটি সংস্থার ওঁদের ন্যায্য সুবিধা দেওয়া দরকার। উপরন্তু বঞ্চনার শিকার হয়ে তাঁরা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এটা খারাপ দৃষ্টান্ত।’’ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়িয়ে মামলাকারীকে দেড় মাসের মধ্যে এক লক্ষ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও যাত্রাপথে হেনস্থা হওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। বছর দুয়েক আগে গৌড় এক্সপ্রেসের যাত্রী এক প্রতিবন্ধী মহিলাকে জোর করে ট্রেন থেকে মালদহ স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বছর সাতেক আগে সমাজকর্মী তথা প্রতিবন্ধী জিজা ঘোষকে কলকাতা বিমানবন্দরে জোর করে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। জিজা বলেন, ‘‘২০১২ সালের জুলাইয়ের ওই ঘটনার পরে আমরা লাগাতার আন্দোলন চালালেও হেনস্থার ঘটনা থেমে নেই। অবস্থা এতই খারাপ যে জিয়াগঞ্জের ওই মহিলাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হল। আদালত ওঁর পাশে দাঁড়ানোয় ভাল লাগছে।’’
এ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী তরুণীর ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। রেলের আইন বিভাগ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিষয়টি দেখে নিয়ে আমরা অভিযোগকারীকে টাকা ফেরত দেব। না বলে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy