Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জাল ভেটকি ধরতে জাল পাতছে সরকার

সাধ করে অর্ডার দিয়েছেন ভেটকি ফ্রাই। অপেক্ষা পেরিয়ে পাতে এল, পেটও ভরল। তবে মন ভরল কই! ভেটকির সে স্বাদই যে নেই। স্বাদের হেরফের হবে না-ই বা কেন! অভিযোগ, খাঁটি ভেটকির নাম করে শহরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন পদ রাঁধা হচ্ছে কম দাম, নিম্ন মানের কিংবা অন্য মাছে। এই পরিস্থিতি এড়াতেই এ বার উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দফতর।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

সাধ করে অর্ডার দিয়েছেন ভেটকি ফ্রাই। অপেক্ষা পেরিয়ে পাতে এল, পেটও ভরল। তবে মন ভরল কই! ভেটকির সে স্বাদই যে নেই।

স্বাদের হেরফের হবে না-ই বা কেন! অভিযোগ, খাঁটি ভেটকির নাম করে শহরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন পদ রাঁধা হচ্ছে কম দাম, নিম্ন মানের কিংবা অন্য মাছে।

এই পরিস্থিতি এড়াতেই এ বার উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। ভেটকি বলে বাসা, বম্বে ভেটকি বলে হাঙর যাতে রেস্তোরাঁয় ভোজের পাতে না পৌঁছয়, তার জন্য অভিযানে নামছেন দফতরের কর্মীরা। পুজোর দিনগুলোয় রকমারি খাওয়াদাওয়ায় দেদার খরচ করেন মানুষ। রেস্তোরাঁ-রেস্তোরাঁয় লম্বা লাইন এবং খাবারের মানে ঠকার আশঙ্কা সেই সময়ে বেশি ধরে নিয়ে শারদোৎসবের মরসুমেই এই অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর জানিয়েছে, খাবারে নিম্ন মানের মাছ দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ হলে মাছের পদের নমুনা-সহ সরকারের কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। উৎসবের মরসুমে খদ্দের সেজে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় হানাও দেবেন দফতরের অফিসার-কর্মীরা।

ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে জানান, শহরের বিভিন্ন হোটেলে-রেস্তোরাঁয়, বিশেষত ফ্রাই, পাতুরি, কাবাব ও হরেক রকম চিনা রান্নায় এক রকম মাছের কথা বলে অন্য রকম, কম দামের ও নিম্ন মানের মাছ আকছার পরিবেশন করা হচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই কিছু অভিযোগ এসেছে। মন্ত্রী বলছেন, “খদ্দেরকে ঠকাবেন না। বাসা দিলে বলুন, এটা বাসা। বম্বে ভেটকি বা অন্য কোনও সামুদ্রিক মাছ দিলে সেটাও মেনুতে উল্লেখ করে দিন।”

সম্প্রতি বিলেতে মাছভাজা বিক্রির ক্ষেত্রে খদ্দেরদের ঠকানো নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে সেখানকার প্রশাসন। ইংল্যান্ডে চালু খাবার ফিশ অ্যান্ড চিপ্সে কড্ কিংবা হ্যাডক মাছের ফিলে হাল্কা ব্যাটার মাখিয়ে ভাজা হয়। কিন্তু কিছু দিন আগে বার্মিংহাম, ম্যাঞ্চেস্টার ও গ্লাসগোয় সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ফিশ অ্যান্ড চিপ্স-এর বেশ কয়েকটি দোকান কড্ ও হ্যাডক-এর নাম করে ইদানীং চালাচ্ছে হোয়াইটিং মাছের ফ্রাই। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাদে-গন্ধে-দামে-গুণে কড্ ও হ্যাডকের চেয়ে হোয়াইটিং নিম্ন মানের।

কলকাতা ও আশপাশে রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি খাবার খেতে গিয়ে ভোজনরসিক বাঙালি যে মাছ পছন্দ করেন, তা হল খাঁটি ভেটকি। যার দাম বাজারে বছরভর চড়ার দিকেই থাকে। রূপচাঁদ মুখার্জি লেনে ফিশ ফ্রাই আর ফিশ রোলের জন্য বিখ্যাত পুরনো এক রেস্তোরাঁর ম্যানেজার অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “খাঁটি ভেটকি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কখনও আপস করি না।” সদানন্দ রোডের এক দোকানে ফিশ ফ্রাইয়ের দাম বাড়ে-কমে পাইকারি বাজারে ভেটকির দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। কর্ণধার প্রভাস ঘোষ জানান, তাঁদের ফ্রাই খেয়ে খোদ সত্যজিৎ রায় এক বার ধরে ফেলেছিলেন, বম্বে ভেটকি দেওয়া হয়েছে, তার পর থেকে খাঁটি ভেটকি ছাড়া অন্য কিছু ঢোকে না।

আসলে বম্বে ভেটকি বা সামুদ্রিক ভেটকি, বাসা বা বিলিতি পাঙাস, হোয়াইট ও ব্ল্যাক স্ন্যাপার, সার্ডিন, ম্যাকারেল এবং আরও কিছু সামুদ্রিক মাছ, এমনকী হাঙর পর্যন্ত ভেটকির সস্তা বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবং বহু রেস্তোরাঁয় সে সব মাছের পদকেই ভেটকি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এটাই বন্ধ করতে চেয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের বক্তব্য, যে মাছ দেওয়া হচ্ছে, তার নামই মেনুতে উল্লেখ করা হোক।

একটি নামী রেস্তোরাঁ গোষ্ঠীর জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস ঘোষ বলেন, “মিথ্যাচার বন্ধ হওয়াই উচিত।” তিনি জানান, তাঁদের চিনা রেস্তোরাঁ চেন-এ মূলত বাসা মাছ ব্যবহার করা হলেও সেটা উল্লেখ করা হয় না। তাঁর বক্তব্য, “উল্লেখ করা নিয়ম হলে আমরাও তা-ই করব।” তবে বাঙালি রেস্তোরাঁর একটি চেন-এর মেনুতে বাসা মাছের ফ্রাই আর ভেটকি ফ্রাইয়ের আলাদা উল্লেখ রয়েছে। তাদের অন্যতম ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ বসুর কথায়, “সরকার সত্যিই এটা কার্যকর করতে পারলে আমরা সততার দাম পাব।”

আসলে বহু রেস্তোরাঁ দেশি ভেটকির নামে অন্য মাছ চালালেও দাম কম রাখছেন না। রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া মানুষের একটা বড় অংশ মাছের প্রভেদ করতে জানেন না। তাঁদের কাছে খাবারটা সুস্বাদু হওয়া নিয়েই কথা আর মাছে যাতে গন্ধ না থাকে। এ ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর।

মন্ত্রী সাধনবাবু বলেন, “ধরা পড়লে প্রথমে রেস্তোরাঁ মালিককে সতর্ক, তার পরে জরিমানা করা হবে। তা সত্ত্বেও ফের ধরা পড়লে লাইসেন্সও কেড়ে নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE