Advertisement
E-Paper

রেল অবরোধ জারি কোচবিহারে, দুর্ভোগ

ঘটনা এক— মঞ্চ বেঁধে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর অনুষ্ঠানের সব কাজ শেষ। শুধু অনুষ্ঠানটাই হল না। ফুল-মালায় সাজানো ট্রেন দাঁড়িয়ে রইল পাশের লাইনে, ঠা ঠা রোদে। মঞ্চও এক সময় খুলে নেওয়া হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩১
নিউ কোচবিহার স্টেশনে রবিবারও চলছে অবরোধ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নিউ কোচবিহার স্টেশনে রবিবারও চলছে অবরোধ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ঘটনা এক— মঞ্চ বেঁধে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর অনুষ্ঠানের সব কাজ শেষ। শুধু অনুষ্ঠানটাই হল না। ফুল-মালায় সাজানো ট্রেন দাঁড়িয়ে রইল পাশের লাইনে, ঠা ঠা রোদে। মঞ্চও এক সময় খুলে নেওয়া হল।

ঘটনা দুই— আন্দোলনের ফলে আট ঘণ্টা দেরিতে চলছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। তাতে চেপে বিহারের কিষানগঞ্জে যাচ্ছিলেন দীনেশ ঠাকুর (২৯)। ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর প্রতিবেশী তথা সহযাত্রী মুকেশ ঠাকুরের কথায়, ‘‘ট্রেনে হঠাৎ দীনেশের নাক মুখ দিয়ে রক্ত উঠতে থাকে। আমরা খোঁজ করেও কোনও রেলকর্মীর দেখা পাইনি।’’ এর পরে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং ট্রেনেই তিনি মারা যান।

ঘটনা তিন— শনিবার সকাল থেকে গ্রেটার কোচবিহারের দাবিতে যে আন্দোলনকারীরা লাইনে দিন কাবার করছেন, তাঁদের নেতা বংশীবদন বর্মণ এ দিন বুঝিয়ে দিলেন, আন্দোলন ছাড়া তাঁদের আর কোনও পথ নেই।

ঘটনা চার— এ দিন বংশীবদনের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে কামতাপুর পিপলস পার্টির জেলা সভাপতি কংসরাজ বর্মণ বলেন, “প্রয়োজনে এমন আলাদা রাজ্যের আন্দোলন মালদহ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেব।”

সব মিলিয়ে দু’দিন ধরে চলা রেল অবরোধে যতই যাত্রী দুর্ভোগ চলুক, এমনকী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটুক, আন্দোলনকারীদের মধ্যে এই নিয়ে বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি। বরং চট করে তাঁরা লাইন ছেড়ে উঠবেন, এমন ইঙ্গিত মেলেনি। গ্রেটার আন্দোলনকারীদের একাংশ অবশ্য এ ভাবে মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে আন্দোলন চালানোর বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য, আন্দোলনের নানা পথ রয়েছে। রেলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে কেন মানুষদের হয়রানি করা হবে?

রেলের কাছে বড় ধাক্কা এ দিন রেলমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যাওয়া। ঠিক ছিল, সকাল ৯টা নাগাদ রেলমন্ত্রী রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিউ কোচবিহার স্টেশন থেকে একটি ডেমু ট্রেনের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। উত্তর-পূর্ব রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম সঞ্জীব কিশোর বলেন, “ওই ট্রেন উদ্বোধন করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। রেল অবরোধ চলছে। সেখানেই অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। পরে তা উদ্বোধন করা হবে।”

এই ঘটনায় বংশীবদন বর্মণ বলেছেন, “ঘটনাটি দুঃখের। সে জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার ছিল না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘৬৪ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। অধিকার আদায়ে আন্দোলন ছাড়া কোনও পথ নেই।”

তবে এর থেকেও বড় ঘটনা ট্রেনে দীনেশের মৃত্যু। গুয়াহাটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় চেপেছিলেন দীনেশ ও তাঁর স্ত্রী অর্চনা দেবী। ৮ ঘণ্টা দেরিতে চলছিল ট্রেনটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, ট্রেনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন দীনেশ। তাঁর সহযাত্রী মুকেশ জানান, রক্তবমি করতে থাকেন তিনি। ১৪ ঘণ্টা ধরে ট্রেনে কাটানোর মধ্যে সাধারণ কামরার এই যাত্রীরা কোনও রেলের লোকের কাছেও সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ। মুকেশ জানান, এই অবস্থায় এক সময় দীনেশের স্ত্রী গুয়াহাটিতে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে কথা বলেন। বেগুসরাইয়ে দীনেশের বাড়ি। সবে গত বছর বিয়ে হয়েছিল। তাঁর বাড়ির লোকেরা অর্চনাকে পরামর্শ দেন, দীনেশকে কিষানগঞ্জ পর্যন্ত এনে হাসপাতালে ভর্তি করতে। ‘‘কিন্তু আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশনে ঢোকার আগেই দীনেশের মৃত্যু হয়,’’ বললেন মুকেশ।

উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম সঞ্জীব কিশোর বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশনে আসার আগে কেউ বিষয়টি রেলকে জানায়নি। জানালে ট্রেনে ওই রোগীকে দেখতে চিকিসৎক পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতো।” ওই কামারায় টিকিট চেকার বা সুরক্ষাকর্মীর দেখা মেলেনি কেন, এই প্রশ্নের জবাবে ওই রেলকর্তা জানান, সাধারণ শ্রেণির কামরায় সাধারণ টিকিট চেকার সব সময় ওঠেন না।

এত কিছুর পরেও আন্দোলনকারীরা এ দিনও লাইন ছেড়ে ওঠেননি। তবে তাঁদের এড়াতে ট্রেনগুলি অন্য লাইনে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও যাত্রীদের হয়রানি এ দিনও কম হয়নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে একটি স্টেশনে বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

রেল দফতর সূত্রের খবর, রবিবার রাজধানী, কামরূপ, ব্রহ্মপুত্র ও বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস নিউ কোচবিহারের পরিবর্তে আলিপুরদুয়ার জংশন হয়ে চলাচল করানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস এবং তিস্তা তোর্ষা চলাচল করে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে। শিলিগুড়ি-ধুবুরি ইন্টারসিটি, এনজেপি-রঙ্গিয়া প্যাসেঞ্জার এবং বামনহাট-শিলিগুড়ি প্যাসেঞ্জার বাতিল করে দেওয়া হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy