Advertisement
E-Paper

সহজ করে খাতা দেখতে বলে বিতর্কে সংসদ

সহজ কথা যায় না বলা সহজে। সহজ করে খাতা দেখাও কি যায়? নাকি দেখা উচিত? প্রশ্নটা উঠছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সাম্প্রতিক এক নির্দেশিকাকে ঘিরে। গত ৭ এপ্রিল জারি করা ওই নির্দেশিকা মূলত বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। স্কুলে স্কুলে পাঠানো সেই নির্দেশিকার বয়ান অনুযায়ী, একাদশের বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীদের বার্ষিক পরীক্ষার খাতা বিশেষ যত্নের সঙ্গে এবং সহজ ভাবে দেখতে হবে। পরীক্ষার নতুন ধাঁচের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের পরিচিত করানোর জন্যই এ কথা বলা হচ্ছে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৪:১৩

সহজ কথা যায় না বলা সহজে। সহজ করে খাতা দেখাও কি যায়? নাকি দেখা উচিত?

প্রশ্নটা উঠছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সাম্প্রতিক এক নির্দেশিকাকে ঘিরে। গত ৭ এপ্রিল জারি করা ওই নির্দেশিকা মূলত বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। স্কুলে স্কুলে পাঠানো সেই নির্দেশিকার বয়ান অনুযায়ী, একাদশের বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীদের বার্ষিক পরীক্ষার খাতা বিশেষ যত্নের সঙ্গে এবং সহজ ভাবে দেখতে হবে। পরীক্ষার নতুন ধাঁচের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের পরিচিত করানোর জন্যই এ কথা বলা হচ্ছে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

দীর্ঘ উত্তর লিখতে হয়, এমন প্রশ্নের বদলে ছোট ছোট প্রশ্ন বাড়িয়ে দেওয়ার মানে তবু বোঝা যায়। কিন্তু সংসদ একাদশের খাতা সহজ করে দেখার নির্দেশ দেওয়ায় বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাই বিভ্রান্ত। তাঁদের প্রশ্ন, ‘সহজ করে খাতা দেখা’র মানে কী?

বিতর্ক মূলত খাতা দেখার প্রক্রিয়ায় ওই ‘সহজ’ বিশেষণটিকে নিয়ে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশ্ন, ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় ঠিক লিখলে নম্বর পাবেন, না-হলে পাবেন না। এর বাইরে গিয়ে সহজ করে খাতা দেখতে বলা হচ্ছে কেন? সংসদ-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বিজ্ঞান পঠনপাঠনে যাতে পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়ে, সেই জন্যই এই নির্দেশ। এই নিয়ে বিতর্ক তৈরির মানে হয় না বলে কর্তাদের অভিমত।

আগ্রহ বাড়বে কি না, সেই প্রশ্নের থেকেও এতে মান অবনমনের আশঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষক। বহু স্কুল-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এ ভাবে আসলে পঠনপাঠনের মানের সঙ্গেই আপস করছে সংসদ। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা যেমন লিখবে, তেমনই মূল্যায়ন হবে। কিন্তু সহজ করে খাতা দেখা মানে তো মূল্যায়নেরও সরলীকরণ! এটা কি কোনও শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব?’’

সংসদ-কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, মান বা মূল্যায়নের সঙ্গে আপস করার কোনও প্রশ্নই নেই। সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ কম। আমরা ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানমুখী করার চেষ্টা চালাচ্ছি। সেই জন্য পাঠ্যক্রম বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নপত্র, মূল্যায়নের ধাঁচও বদলানো হয়েছে।’’

আইসিএসই, সিবিএসই-র মতো দিল্লি বোর্ডের সঙ্গে নম্বরের প্রতিযোগিতায় রাজ্য বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা কেন পিছিয়ে পড়েন এবং কী ভাবে এই সমস্যা মেটানো যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র, মূল্যায়নের ধাঁচ বদলানোর পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর সেই উদ্বেগেরও প্রভাব আছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। যদিও সংসদের দাবি, পরীক্ষার মূল্যায়ন যাতে আরও বিজ্ঞানসম্মত হয়, সে-দিকে লক্ষ রেখেই প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন পদ্ধতি বদলানো হয়েছে।

মহুয়াদেবীর বক্তব্য, সংসদের তরফে একটি প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ছোট কিন্তু যথাযথ উত্তর লেখা সত্ত্বেও বিজ্ঞানের পরীক্ষায় এখনও পূর্ণ নম্বর দিচ্ছেন না অনেক শিক্ষক। অনেক ক্ষেত্রে ভুল বানান, বাক্য গঠনের দুর্বলতার জন্যও নম্বর হেরফের করা হচ্ছে। কিন্তু এই খুঁটিনাটিগুলি এড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞানের ধারণা গড়ে তোলা এবং তা বোঝার উপরে জোর দিতে চায় সংসদ। তাদের আশা, তা হলেই পড়ুয়াদের বিজ্ঞান-মনস্কতা বাড়ানো যাবে। সভানেত্রী জানান, সেই জন্যই ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

প্রশ্ন, উত্তর এবং তার মূল্যায়নের ব্যাপারেও সংসদের ভাবনার কথা জানিয়ে দিয়েছেন সভানেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘বিজ্ঞানে এখন বড় প্রশ্নে পূর্ণ মান চার-পাঁচের বেশি থাকে না। আমরা চাই, ছাত্রছাত্রীরা সংক্ষেপে গুছিয়ে ‘টু দ্য পয়েন্ট আনসার’ বা ঠিক উত্তর লিখুক। বুঝতে পারছি, এই ধাঁচের সঙ্গে পরিচিত হতে শিক্ষকদেরও কিছুটা সময় লাগবে।’’

বিজ্ঞান-মনস্কতা বাড়ানোই তাঁদের উদ্দেশ্য বলে জানিয়ে সংসদ-প্রধান ওই নির্দেশিকা জারির যে-ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা ঠিক নয় বলে শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায়ের অভিমত। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন পাঠ্যক্রমে যে-ধরনের গবেষণাগারের প্রয়োজন, রাজ্যের কোনও সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলেই তা নেই। সেই খামতি ঢেকে নম্বরের দৌড়ে অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে এগিয়ে থাকার তাগিদেই এই ধরনের নির্দেশিকা জারি করছে সংসদ।’’ মহুয়াদেবী অবশ্য উৎপলবাবুর যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু এই চাপান-উতোরের মধ্যে যে-প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে, সেটি হল, সহজে বেশি নম্বর পেয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের যথার্থ মূল্যায়ন হবে কি? সদুত্তর দেওয়ার কেউ নেই। সংসদ বনাম শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি আর পাল্টা দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা তাই থেকেই যাচ্ছে।

Controversial order Council of higher secondary education WBCHSE HS student teacher school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy