E-Paper

ভোটার তালিকায় হেরফের, মমতার দাবি ঘিরে বিতর্ক

ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বা সংশোধনে বুথ স্তরে বিএলও থেকে শুরু করে জেলাশাসক পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কর্মী ও আধিকারিকেরাই দায়িত্বে থাকেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:২১
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যে প্রতি বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় ২০-৩০ হাজার করে নাম অনলাইনে ভোটার তালিকায় তোলা হবে। বাইরে থেকে আনা এই লোকজনের মাধ্যমেই বিজেপি ভোট করার চেষ্টা করবে, এমনই অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, মহারাষ্ট্র ও দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে এই কৌশলেই বিজেপি বাজিমাত করেছে। তবে বাংলায় এমন ‘চুরি’ তাঁরা হতে দেবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মমতা। তাঁর ওই মন্তব্যের জেরেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগের বছরে ফের বিতর্কের উত্তাপ বাড়ছে ভোটার তালিকা ঘিরে।

দলীয় প্রয়োজনে দিল্লি যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর ওই দাবি প্রসঙ্গে বলেছেন, “ওঁর কি কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে গিয়েছে? উনি ১৪ বছর মুখ্যমন্ত্রী আছেন। ভোটার তালিকার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক কে? সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক। নিশ্চয়ই উনি জানেন।”

বিরোধীদের প্রশ্ন, কেউ যদি বাইরে থেকে লোকজনের নাম ভোটার তালিকায় ঢোকানোর চেষ্টাও করে, জেলাশাসক এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নজর এড়িয়ে তা করা যাবে কী ভাবে? ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বা সংশোধনে বুথ স্তরে বিএলও থেকে শুরু করে জেলাশাসক পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কর্মী ও আধিকারিকেরাই দায়িত্বে থাকেন। একই সঙ্গে বিরোধী দলনেতা ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, “এই রাজ্যে প্রায় ১৬ লক্ষ ভুয়ো নাম আছে। তালিকা সংশোধনের সময়ে আমরা বলেছিলাম। ভোটের (বিধানসভা) আগে আমরা এগুলো কাটিয়ে দেওয়ার কথা বলব।”

শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য রাজ্যের দায়িত্বের প্রসঙ্গে না-গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে বিজেপিকে তোপ এবং নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ তৈরি করছে। পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দু’এক দিনের মধ্যে বৈঠক ডাকছি। আমি নিজে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যাব। চিঠিও দেব। পরিষ্কার বক্তব্য, তথ্য যাচাই না-করে একটি ভোটারের নামও সংযুক্ত হবে না। নাম নথিভুক্ত হবে না অনলাইন মাধ্যমে। যদি হয়, আমরা মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামব। পশ্চিমবঙ্গকে দিল্লি-হরিয়ানা করতে দেব না।!” তাঁর সংযোজন, “কমিশনকে জানাব, অনলাইনে নাম তোলা যাবে না। যাচাই করতে হবে, শুনানি হবে, তবে নাম উঠবে ভোটার তালিকায়। এক জায়গা থেকে ইশারা এল আর নাম উঠে গেল, হবে না! আমরা সতর্ক প্রহরী, সেই কাজই করব।”

এই বিতর্কের নতুন করে সূত্রপাত বুধবার রাজ্য বাজেটের পরে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। মহারাষ্ট্র ও দিল্লির মতো এ রাজ্যেও ভোটার তালিকায় নতুন নাম তুলে ‘চুরি’র চেষ্টা হতে পারে বলে সরব হয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন বলেছেন, “দিল্লিতেও ওরা (বিজেপি) এটা করেছে। যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বোঝে, তারা বুঝবে। ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৮ মাসে চার লক্ষ নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে। এটা গত ১৪ বছরে হয়নি। দিল্লির কিছু আসনে ভোটারের সংখ্যা হঠাৎ করে কমে গেছে, আবার কিছু জায়গায় বেড়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা দেখেছি।”

এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “যে কোনও বুথে ৩০-৪০ জন মৃত বা অনুপস্থিত ভোটার পাওয়া যাবে। বুথের মোট সংখ্যা ধরলে মুখ্যমন্ত্রী যে কারসাজির সংখ্যা বলছেন, তার চেয়ে বেশিই হবে। মহারাষ্ট্রে যেটা বিজেপি করেছে, সেটা বাংলায় তৃণমূল আগেই করেছে। বিডিও, জেলাশাসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি কেন? ভুয়ো সরকারের ভুয়ো মুখ্যমন্ত্রী উনি!” আর রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় নাম তুলছে তাঁর (মমতা) দলই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy