E-Paper

রবীন্দ্রভারতীতে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক চরমে

কুটা সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, ইউজিসি বিধি অনুযায়ী কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে গেলে ন্যূনতম দশ বছরের অভিজ্ঞতা আবশ্যিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫১
Subhro Kamal Mukherjee and C V Ananda Bose

প্রাক্তন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে নিয়োগ নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক। —ফাইল চিত্র।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে প্রাক্তন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে নিয়োগ নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক। শিক্ষামহলের দাবি, ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী তাঁর উপাচার্যের চেয়ারে বসার যোগ্যতাই নেই। বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রভারতীর রেজিস্ট্রার সুবীর মৈত্র জানিয়েছেন, আজ, শুক্রবার শুভ্রকমল অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার নেবেন।

পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-র পক্ষ থেকে এই নিয়োগের প্রতিবাদ করে জানানো হয়েছে, রাজ্যের শিক্ষা দফতর এবং রাজ্যপালের দ্বৈরথে বেশ কিছুকাল যাবৎ উচ্চশিক্ষা জগতে যে নৈরাজ্য ও অচলাবস্থা চলেছে তাতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও উপাচার্য নেই। ওয়েবকুটার অভিযোগ, ইতিমধ্যেই বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির যোগ্যতা মান লঙ্ঘন করে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত না থাকা একজন প্রাক্তন বিচারপতিকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ ইউজিসি বিধির পরিপন্থী এবং চরম অনৈতিক পদক্ষেপ। ওয়েবকুটার সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত এবং সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্যের আবেদন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাকে সুপরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’’

একই রকম বিরোধিতায় কলকাতা (কুটা) এবং যাদবপুর (জুটা) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কুটা সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, ইউজিসি বিধি অনুযায়ী কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে গেলে ন্যূনতম দশ বছরের অভিজ্ঞতা আবশ্যিক। বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরের বাইরের কোনও ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করার উদ্দেশ্য ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা জগতের মানুষের কি খুব কি অভাব পড়ল? আমরা উচ্চশিক্ষা বিরোধী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি।’’

জুটার সভাপতি পার্থপ্রতিম বিশ্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, স্থায়ী উপাচার্যের বদলে উপাচার্য অস্থায়ী হলেও সেই পদে বসার আবশ্যিক যোগ্যতার মান ভিন্ন হতে পারে না। এই প্রেক্ষিতে বর্তমান অস্থায়ী উপাচার্যের নিয়োগ সেই বিধি ভঙ্গেরই সামিল। রাজ্যে ১৯৮১ সালের আইন কিংবা পরবর্তীতে সংশোধিত আইন চালু হওয়ার পরে কোনও রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা জগতের বাইরে থেকে এমন উপাচার্য নিয়োগ নজিরবিহীন বলে তাঁদের দাবি। এমন নিয়োগ প্রাত্যহিক নিয়মে পরিণত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের অধোগতি হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

যে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত দাসের বক্তব্য, নীতিগত ভাবে প্রথম থেকেই আমাদের সমিতির দাবি ছিল ইউজিসির নিয়ম মেনে পূর্ণকালীন উপাচার্য নিয়োগ করা হোক। সমিতি সেই দাবিতেই অবিচল আছে। এ ছাড়াও এই নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আবুটা, সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটি। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও রাজ্যপালের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। প্রতিবাদ জানায় রাইট টু এডুকেশন ফোরাম।

বিষয়টি নিয়ে বির্তক তৈরি হয়েছ রাজনৈতিক মহলেও। এ দিনই রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার টুইট করে অভিযোগ করেন, এই নতুন উপাচার্য ব্যাঙ্গালোর হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে বিতর্কিত ছিলেন। তিনি এতটাই কুখ্যাতছিলেন যে ফেয়ারওয়েল ছাড়াই তাঁকে বিদায় দেওয়া হয়। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর কথায়, “এটা রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত। আমি রাজভবনের মুখপাত্র নই।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বেঁধে দেওয়া নির্দেশিকায় খাপ খেলে যে কেউ উপাচার্য হিসেবে কাজ করতে পারেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Subhro Kamal Mukherjee C V Ananda Bose Rabindra Bharati University

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy