Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Education

মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষকের বদলিতে বিতর্ক

একটি ক্ষেত্রে এক পুরুষ শিক্ষককে মেয়েদের স্কুলে বদলি করা হয়েছে। শিক্ষক বদলির বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী যেটা সম্ভব নয় বলে শিক্ষকদের একাংশের অভিমত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:০৮
Share: Save:

সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাধারণ বদলি ফের সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই অন্তত দু’টি বদলি ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে।

একটি ক্ষেত্রে এক পুরুষ শিক্ষককে মেয়েদের স্কুলে বদলি করা হয়েছে। শিক্ষক বদলির বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী যেটা সম্ভব নয় বলে শিক্ষকদের একাংশের অভিমত। দ্বিতীয় ঘটনায় এক গ্রন্থাগারিককে এমন একটি স্কুলে বদলি করা হয়েছে, যেখানে ওই পদই নেই! ওই গ্রন্থাগারিক জানান, বদলির জন্য তিনি যে-তিনটি বিদ্যালয় বেছে নিয়েছিলেন, সেই তালিকায় ওই স্কুলের নাম ছিল না। শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, শিক্ষক বদলিতে অনিয়মের অভিযোগ আগেও আকছার উঠত। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির কাছের স্কুলে শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরে আশা করা হচ্ছিল, নতুন ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ কমবে। কিন্তু আবার অনিয়মের এই সব ঘটনায় বদলির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

কোচবিহারের গোপালপুর হাইস্কুল থেকে এডুকেশন বা শিক্ষাতত্ত্বের এক শিক্ষককে সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধমুয়া বালিকা বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। প্রথম অভিযোগ, ওই স্কুলে এডুকেশনের কোনও শূন্য পদ নেই। তা সত্ত্বেও ওই শিক্ষককে কী ভাবে সেখানে বদলি করা হল, সেই প্রশ্ন উঠছে। দ্বিতীয় অভিযোগ, মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ করা হল কেন? বদলির বর্তমান নিয়মে ছেলেদের স্কুলে শিক্ষিকা নিয়োগ করা গেলেও মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগের সংস্থান নেই। ধমুয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শেফালি সরকার বলেন, “আমাদের এখানে এডুকেশনের শিক্ষকপদ ফাঁকা নেই। কী ভাবে এই নিয়োগ হচ্ছে, আমার জানা নেই। শিক্ষা দফতরই যা বলার বলতে পারবে।”

অনিয়মের দ্বিতীয় অভিযোগ উঠছে নদিয়ার শক্তিনগর গার্লস স্কুলে। প্রার্থী পুরুষ না মহিলা, সেখানে এই প্রশ্নের অবকাশ নেই। কিন্তু ওই স্কুলে গ্রন্থাগারিকের পদ না-থাকা সত্ত্বেও গ্রন্থাগারিক হিসেবে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হচ্ছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অরুন্ধতী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেয়েদের স্কুলে পুরুষ করণিক বা পুরুষ গ্রন্থাগারিকও নিয়োগ করতে বাধা নেই। কিন্তু আমাদের স্কুলে তো গ্রন্থাগারিকের কোনও পদই নেই। তাই কী ভাবে এক জন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করা হচ্ছে, তা জানা নেই আমার।’’

শিক্ষক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, ২০১৮ সালে উত্তর ২৪ পরগনার দাড়িভিট স্কুলে শিক্ষক বদলি নিয়ে ব্যাপক গন্ডগোলের পরেও শিক্ষা নেয়নি বিদ্যালয় শিক্ষা দফতর। ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘আমরা বার বার শিক্ষক বদলিতে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি যে হয়নি, সাম্প্রতিক এই সব ঘটনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’’ তিনি জানান, বদলিতে আগ্রহী শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীরা অনেক ধাপ পেরিয়ে নিয়োগপত্র পান। সব স্তরের নজর এড়িয়ে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষকের নিয়োগপত্র পাওয়া তাই অত্যন্ত উদ্বেগের।

‘‘মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আগে বদলির আইন বদল করতে হবে। নইলে বদলি ঘিরে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠবেই,’’ বলেন শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগে যে-ভুল হয়েছে, সেটা আমরা ঠিক করে দিচ্ছি। তবে নদিয়ার ওই স্কুলে গ্রন্থাগারিকের পদ তৈরি করেই সেই পদে নিয়োগ করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE