Advertisement
E-Paper

অনুভবেই রেঁধে বাজিমাত দৃষ্টিহীন মাম্পি-রেখাদের

রন্ধন প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘শীতের সব্জি’। সেখানেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আনাজ কাটা থেকে মশলা বাটা, সবই নিজের হাতে করেছেন প্রতিযোগীরা। ইনডাকশনে রান্নার সময়ে পরিমাণমতো মশলা মিশিয়েছেন আন্দাজেই।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২৮
রাঁধুনি: রান্নাঘরে দৃষ্টিহীন প্রতিযোগীরা। রবিবার, শ্যামবাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ

রাঁধুনি: রান্নাঘরে দৃষ্টিহীন প্রতিযোগীরা। রবিবার, শ্যামবাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ

রন্ধন প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘শীতের সব্জি’। সেখানেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আনাজ কাটা থেকে মশলা বাটা, সবই নিজের হাতে করেছেন প্রতিযোগীরা। ইনডাকশনে রান্নার সময়ে পরিমাণমতো মশলা মিশিয়েছেন আন্দাজেই। কেউ কেউ আবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে অনুরোধ করেছেন, রান্নাটা একটু চেখে দেখতে। প্রতিযোগীদের কেউই চোখে দেখতে পান না, তাও রন্ধনকাজে কোনও ভুলচুক নেই।

রবিবার শ্যামবাজারে একটি রন্ধন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তি খোয়ানো মানুষদের নিয়েই। দৃষ্টিহীন তরুণী থেকে দৃষ্টিশক্তি হারানো দম্পতি— প্রতিযোগীদের তালিকায় ছিলেন এমন অনেকেই।

এমন উদ্যোগ কেন? আয়োজক সমিত সাহার বক্তব্য, ‘‘দৃষ্টিহীনেরা পরনির্ভরশীল, সে ভাবেই অনেকে তাঁদের দেখেন। কিন্তু তাঁরাও যে সব করতে পারেন, সেই বার্তা দিতেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। আজ যাঁরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন, তাঁরা অন্যদের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাও হতে পারেন।’’ সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের অভিনব কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারই অংশ হিসাবে এ দিনের এই আয়োজন বলে জানাচ্ছেন ওই সংস্থার সদস্যরা।

এ দিনের প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ফুলকপি-বাঁধাকপির সঙ্গে শিম ভাপা, বেগুন বাহার, মুলোর ঘণ্ট, রকমারি আনাজের সঙ্গে পালং শাক— এ সবই ছিল প্রতিযোগীদের তৈরি খাবারে। সে ভাবেই মুলোর ঘণ্ট রেঁধে এ দিন বিচারকদের চমকে দিলেন হাতিবাগানের মাম্পি মণ্ডল। বাংলায় সদ্য স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ওই তরুণী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় শিশুদের পড়ান। সেই সঙ্গে সেলাইয়ের কাজও করেন তিনি। এর সঙ্গে রীতিমতো রন্ধনপটিয়সী। চোখে দেখতে না পেলেও নিজের রান্না কখনওই চেখে দেখেন না মাম্পি। বরং কড়াইয়ে পেঁয়াজ-রসুন দিতে ভরসা করেন নিজের আন্দাজকেই। কখনও কখনও পাশে কেউ থাকলে তাঁকে অবশ্য একটু খেয়ে দেখতে বলেন, রান্নায় নুন-চিনি সব পরিমাণমতো আছে কি না। এ দিন মুলোর ঘণ্ট রেঁধে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে মাম্পি বলছেন, ‘‘রান্না করতে বরাবরই ভাল লাগে।’’

নিরামিষ আলুর দম রেঁধে এ দিন বিচারকদের মন জিতে নিসেন টালিগঞ্জের দম্পতি মনোরঞ্জন ও রেখা মণ্ডল। রান্না করতে অবশ্য স্ত্রীকে বরাবরই সাহায্য করে গেলেন মনোরঞ্জনবাবু। ওই প্রতিযোগীর কথায়, ‘‘দিল্লি বা দক্ষিণ ভারতে এই ধরনের প্রতিযোগিতার কথা শুনেছি। কিন্তু বাংলায় এমন কিছু আগে হয়নি। এ দিনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালই লাগছে। অভিনব প্রয়াস।’’ আর এক প্রতিযোগী মল্লিকা মণ্ডল আবার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান জিতে নিলেন আলুর দম বেঁধে।

দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও হাতাখুন্তি নিয়ে এমন রান্না কী ভাবে সম্ভব? চক্ষু বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় দত্ত বলছেন, ‘‘ঘরোয়া কাজের জন্য দৃষ্টিহীনদের বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সে ভাবেই ওঁরা কাজ শিখে যান। অনেকে আবার ঘরের কাজ করতে করতেও অনেক কিছুই শেখেন।’’

NGO Cooking Competition Blind People Shyambazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy