Advertisement
E-Paper

দেড় মাস বৈঠকে বসেনি বীরভূম তৃণমূলের কোর কমিটি, একাই ‘অপারেশন বোলপুর’ চালাচ্ছেন কেষ্ট, কোথায় প্রতিপক্ষ কাজল?

সম্প্রতি নলহাটিতে সভা করে অনুব্রত ঘোষণা করেছেন রামপুরহাট, সিউড়ি এবং বোলপুরে তিনি ২৫, ২৬ এবং ২৭ মে দেড় লক্ষ লোকের মিছিল করবেন। যে ঘোষণা থেকে স্পষ্ট, বীরভূম জেলায় সংগঠনের ‘নিয়ন্ত্রণ’ পুরোপুরি নিজের হাতেই রাখতে চাইছেন তিনি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৫ ১৩:০৫
Core committee meeting has not been held for the last one and a half months, Anubrata Mondal is single-handedly controlling the TMC organization in Birbhum

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দেশ আলোড়িত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে। আর বীরভূম জেলা তৃণমূল আলোড়িত ‘অপারেশন বোলপুর’ নিয়ে। চালাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল । যেমনটা আগে চলত। তিনি কারাবন্দি থাকাকালীন সেই ধারায় ছেদ পড়েছিল। কিন্তু জেল থেকে জামিন পেয়ে ফিরে-আসা কেষ্ট (অনুব্রতের ডাকনাম) আবার পুরনো মেজাজে। আবার তিনিই গোটা দল নিয়ন্ত্রণ করছেন বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি থেকে। সেই ‘অপারেশন বোলপুর’ বীরভূম তৃণমূলের কোর কমিটিকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দিয়েছে। জেলা তৃণমূলের অন্দরে এখন তেমনই জল্পনা।

গত দেড় মাস জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। সমান্তরাল ভাবে কেষ্ট তাঁর পারিষদদের নিয়ে ব্লকে ব্লকে কর্মসূচি করে ২০২৬ সালের ভোটের নান্দীমুখ সেরে রাখছেন। অনুব্রতের সেই কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছেন কোর কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ।

বীরভূমের রাজনীতিতে কেষ্ট-কাজল সম্পর্ক যে ‘মধুর’, তা সর্বজনবিদিত। কোর কমিটির বৈঠক না-হওয়া নিয়ে আনন্দবাজার ডট কম-কে কাজল বলেছেন, ‘‘যত দিন না কোর কমিটির বৈঠক হবে, তত দিন আমি কোনও কর্মসূচিতে যাব না। আমার নানুর ব্লক এবং জেলা পরিষদের কাজ নিয়েই থাকব।’’ আর কেষ্ট বলছেন, ‘‘কোনও সমস্যাই নেই। এই তো দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে কথা হল! সবাই তো আমার সঙ্গে কর্মসূচিতে থাকছেন।’’ পাশাপাশিই, কেষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জেলার কোর কমিটি বোলপুর-কেন্দ্রিক। তাঁর বক্তব্য তিনি নিজে বোলপুরের, যুবনেতা সুদীপ্ত ঘোষ বোলপুরের, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও বোলপুরের বাসিন্দা। কমিটির অনেকেই যেহেতু বোলপুরের বাসিন্দা, তাই কোর কমিটিতে সারা জেলার প্রতিনিধিত্ব নেই।

গরুপাচার মামলায় ২০২২ সালে কেষ্ট গ্রেফতার হওয়ার পরে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, তিনি নিজে বীরভূমের সংগঠন দেখবেন। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীর নির্দেশেই বীরভূমের সংগঠন পরিচালনার জন্য তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল কোর কমিটি। এ কথা ঠিক যে, কেষ্ট জেলে গেলেও তাঁকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরায়নি তৃণমূল। ফলে তিনি জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর তাঁকে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়ারও প্রশ্ন ছিল না। কারণ ওই পদে কেষ্ট ছিলেন। কেষ্টই থেকেছেন। কিন্তু কোর কমিটি তুলে দেওয়া হয়নি। বরং কেষ্টকে নেত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোর কমিটির সঙ্গে ‘সমন্বয়’ রেখেই জেলায় দল চালাতে হবে তাঁকে। কিন্তু কেষ্টর মধ্যে কোর কমিটিকে ‘এড়িয়ে’ জেলা চষে ফেলার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

তৃণমূলের একটি অংশের বক্তব্য, কেষ্ট ছাড়া বীরভূমের সংগঠন চলবে না, সেই ‘মিথ’ ভেঙে গিয়েছে গত লোকসভা ভোটে। কেষ্ট তখন জেলে ছিলেন। কিন্তু কোর কমিটিই সংগঠন পরিচালনা করে জেলার দু’টি লোকসভা আসনে দলকে জিতিয়েছে। এমনকি, যে দুবরাজপুর বিধানসভায় ২০২১ সালে বিজেপি জিতেছিল, সেখানেও ‘লিড’ পেয়েছে শাসকদল। ফলে দলের মধ্যে এটা প্রমাণিত যে, কেষ্ট ছাড়াও ভোটে জেতা সম্ভব। ফলে কেষ্ট চাইছেন নিজের নেতৃত্বকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। এ ব্যাখ্যা অবশ্য কেষ্টর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনের। পক্ষান্তরে, কেষ্টর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কেষ্টর সাজানো সংগঠনের উপর দাঁড়িয়েই লোকসভা ভোটে সাফল্য পেয়েছিল দল। বিধানসভার আগে ফের সংগঠন ঝালিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি নলহাটিতে সভা করে কেষ্ট ঘোষণা করেছেন রামপুরহাট, সিউড়ি এবং বোলপুরে তিনি ২৫, ২৬ এবং ২৭ মে দেড় লক্ষ লোকের মিছিল করবেন। যে ঘোষণা থেকে স্পষ্ট, সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজের হাতে রাখতে চাইছেন তিনি। কেষ্টর অনুপস্থিতিতে দলকে যাঁরা জিতিয়েছিলেন, তাঁরা সরে থাকছেন। রাজ্য তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘একটা জেলায় যেমন পুলিশ সুপার এক জনই হন, তেমনই কেষ্টও চান একাই সংগঠনের সুপার হয়ে থাকতে। আবার কোর কমিটির সদস্যেরা চান কেষ্টর প্রতাপ খর্ব করতে। ফলে সংঘাত রয়েছে।’’

বীরভূম জেলার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালেরা বলছেন, আপাতত জেলার সংগঠনে আড়াআড়ি বিভাজন রয়েছে। এক দিকে কেষ্ট, বিকাশ রায়চৌধুরী, সুদীপ্ত এবং চন্দ্রনাথ আর অন্য দিকে কাজল, রামপুরহাটের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ (রানা)। দুই শিবির থেকেই ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রাখছেন দুই সাংসদ শতাব্দী রায় এবং অসিত মাল।

আমেরিকার মধ্যস্থতায় (মতান্তরে, হুঁশিয়ারিতে) ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি করেছে। বীরভূমে কেষ্টর ‘অপারেশন বোলপুর’ থামাতে কালীঘাট কি পদক্ষেপ করবে? তৃণমূলের অনেকে অবশ্য বলছেন, শুধু কালীঘাট নয়, ক্যামাক স্ট্রিটেরও ভূমিকা থাকতে হবে। নইলে কাজলকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

Anubrata Mondal Kajal Sheikh TMC Leaders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy