কত ক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম জানি না। তবে যখন জ্ঞান ফিরল, দেখলাম বাইরের দিকে কামরায় জানলায় ঝুলেরয়েছি। জানলাটা ভেঙে চুরমার। জানলার একটা রড হাঁটুর পাশে গেঁথে গিয়েছে। সেই অবস্থাতেই ঝুলে রয়েছি।
সেখান থেকে কে বা কারা আমাকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন, জানি না। আধ ঘণ্টা পর যখন সব কিছু বোঝার মতো অবস্থায় ফিরলাম, দেখি লাইনের কিছু দূরে পড়ে রয়েছি। আমার আশপাশে জখম আরও অনেকেই পড়ে রয়েছেন। তেষ্টা পাচ্ছিল। ‘জল দাও, জল দাও’ বলে চিৎকার করছিলাম। গ্রামের লোকেরা কেউ জল দেননি। তবে আমার গায়ে জলের ছিটে দিচ্ছিলেন।ওঁরা বললেন, ‘‘তোমাদের কাউকে জল খেতে দেব না। জল খেলে তোমরা মরে যাবে। আমরা দায়িত্ব নিতে পারব না। জলের ছিটে দিচ্ছি। যা যাচ্ছে মুখে, ওইটুকুই খাও।’’
এর পর আর কিছু মনে নেই। বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বা ফের জ্ঞান হারিয়েছিলাম। পরদিনসকালে দেখলাম, হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে রয়েছি। বালেশ্বরের একটি হাসপাতালে। সেখান থেকে আমাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। শনিবার থেকে এখানেভর্তি রয়েছি। আমার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের শ্যামনগরে। করমণ্ডলের এস-৩ কামরায় ছিলাম আমরা। রবি বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর সঙ্গে কেরলে যাচ্ছিলাম। রবি কাঠের কাজ করে। ও আগে অনেক বার যাতায়াত করেছে। আমার এই প্রথম যাওয়া। আদতে কাজের খোঁজেই কেরলের উদ্দেশে রওনা হওয়া। ওখানে হয় রাজমিস্ত্রির, নয়তো রাঁধুনির কাজ নিতাম।
শুক্রবার তখন সন্ধ্যা সাতটা হবে। সবে আমরা খেতে বসেছিলাম। খেয়ে উঠে বাথরুমে গিয়েছিলাম।হাত ধুয়ে বেরিয়ে সিটের দিকে আসছি। তখনই বিরাট একটা আওয়াজ হল। মুহূর্তে কামরার সবআলো-ফ্যান বন্ধ। তার পর আর কিছু মনে নেই।
লেখক করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী, মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)