Advertisement
E-Paper

অহেতুক দেরি করায় বাঁচানো গেল না রোগীকে

নদিয়ার কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতাল ও কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের যৌথ চেষ্টায় গত বুধবার গভীর রাতে রোগীকে কলকাতায় আনা হয়।

পিটিআই-এর প্রতীকী ছবি।

পিটিআই-এর প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০৬:৫৭
Share
Save

যে সময় রোগীকে বাঁচানোর জন্য কোনও সময় নষ্ট না-করে জেলা থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার কথা ঠিক তখনই তাঁকে ফেলে পালিয়েছিলেন বাড়ির লোক! কারণ, রোগীর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল!

সাধারণত সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগী প্রত্যাখ্যান করা বা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হয়েছিল সম্পূর্ণ উল্টো। পুলিশের পাটিয়ে সরকারি হাসপাতালই পলাতক আত্মীয়দের খুঁজে আনে। তার পর নদিয়ার কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতাল ও কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের যৌথ চেষ্টায় গত বুধবার গভীর রাতে রোগীকে কলকাতায় আনা হয়।

রোগীর খাদ্যনালী ফুটো হয়ে গিয়েছিল। করোনা-আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও রাত দেড়টায় সরাসরি তাঁকে নীলরতনের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থাও হয়েছিল। কিন্তু এত কিছু পরেও বাঁচানো গেল না রোগীকে। বৃহস্পতিবার সকাল দশটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। তাতেই আফশোস যাচ্ছে না ওই দুই হাসপাতালের চিকিৎসকদের।

তাঁরা জানিয়েছেন, বাড়ির লোক করোনার ভয়ে রোগীকে ফেলে পালানোয় অত্যন্ত জরুরি ২৪ ঘণ্টা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক দিন আগে রোগীকে নীলরতনে আনা গেলে তাঁকে হয়তো বাঁচানো যেত। অনেক ক্ষেত্রে করোনা রোগীকে অচ্ছুৎ করে রাখা, দূরে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতায় এই ভাবেই তাঁদের প্রাণসংশয় হচ্ছে।

কিন্তু কেন রোগীকে কল্যাণী জেএনএম থেকে নীলরতনে আনতে হল? কেন জেএনএমে অস্ত্রোপচার হল না?

জেএনএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই হাসপাতালে আপাতত করোনা-আক্রান্ত প্রসূতি ছাড়া অন্য কোনও করোনা রোগীর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নেই। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের হরিশপুর এলাকার ওই রোগীকে ১১ মে পেটের অস্ত্রোপচারের জন্য ওটিতে ঢোকানোর আগে তাঁর রুটিন করোনা পরীক্ষা হয়। তাতে করোনা ধরা পড়ে।

কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে নীলরতনে পাঠিয়ে অস্ত্রোপচারের সব ব্যবস্থা করে ফেলেছিলাম। কিন্তু করোনা হয়েছে শুনে তাঁর পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দেন। এমনকি, মোবাইলের সুইচ বন্ধ করে রেখে দেন! বাধ্য হয়েই রোগীকে গোটা একটা দিন জেএনএমেই রাখতে হয়। শেষে কোতয়ালি থানার পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের লোকজনকে বাড়ি থেকে জোর করে নিয়ে আসা হয়।”

জেএনএম থেকে এর পর নীলরতনে যোগাযোগ করা হয়। নীলরতনের সুপার ও সহকারি সুপারের সহযোগিতায় শয্যা নিশ্চিৎ করা হয়। নীলরতনের শল্য চিকিৎসক সুদেব সাহা বলেন, “আমরা সবাই মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারলাম না। আসলে রোগীকে নিয়ে আসতেই অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল।”

কেন তাঁরা এই দেরি করলেন? কেন নিকটজনকে ফেলে পালিয়ে গেলেন?

মৃতের ছেলের কথায়, “করোনার কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তা ছাড়া বাবাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার মতো টাকাও ছিল না আমার কাছে। তাই বাড়ি ফিরে আসি। মোবাইলের সুইচ অফ করিনি। চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছিল বলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।” আর তাঁর দিদির কথায়,“আসলে ভাইয়ের বয়স মাত্র একুশ বছর। ওর পক্ষে কিছু করার ছিল না।”

Coronavirus in West Bengal COVID19 Corona Death

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}