Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Jhargram

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে একজোট নাসিরুদ্দিন-গোপালেরা

দল গড়ে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভাবনাটা দহিজুড়ির বাসিন্দা মণ্ডপ নির্মাণের ব্যবসায়ী বছর পঞ্চাশের অমর পালের।

দহিজুড়িতে আক্রান্তের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন কোভিড যোদ্ধারা।

দহিজুড়িতে আক্রান্তের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন কোভিড যোদ্ধারা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
বিনপুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০৭:০৬
Share: Save:

অনেকের সচেতনতা নেই। কারও নেই ক্ষমতা। করোনায় কাবু হচ্ছেন সকলেই।

পরিস্থিতি বিচার করে পবিত্র রমজ়ান মাসের উপবাসের দিনগুলিতেও বিশ্রামের কথা ভাবেননি বেলপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মী কবীর মুন্সি, দহিজুড়ি পঞ্চায়েতের কর্মী আনিসুর বক্স, ব্যবসায়ী ইমাম বক্স, সমাজসেবী শেখ নাসিরুদ্দিনরা। ব্যবসায়ী অমর পাল, স্কুলশিক্ষক ভ্রমর রাউত, গোপাল রাউতদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করোনা যুদ্ধে শামিল হয়েছেন ইমাম, নাসিরুদ্দিনরা। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন দহিজুড়ি পঞ্চায়েতের হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক স্বরূপ মাইতি।

ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর-১ ব্লকের দহিজুড়ি এলাকার খেটেখাওয়া গরিব মানুষজন ততটা স্বাস্থ্য-সচেতন নন। অনেকের আর্থিক ক্ষমতাও কম। তাই অমর, ভ্রমর, কবির, নাসিরুদ্দিনরা নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘দহিজুড়ি কোভিড-১৯ সহায়তা দল’। এই দলের সদস্যেরা জ্বরের উপসর্গ আছে এমন বাসিন্দাদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন, নিভৃতবাসে থাকা রোগীদের বাড়িতে খাবার, ওষুধপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন। উপযুক্ত রক্ষাকবচ নিয়ে আক্রান্তদের বাড়ি গিয়ে অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা মাপছেন।

যাঁরা নিজেরা ব্যবহার করতে পারবেন সেই পরিবারগুলিকে অক্সিমিটার দেওয়া হয়েছে। নিখরচায় প্রয়োজনে অক্সিজেন সিলিন্ডারও সরবরাহ করা হচ্ছে। পেশায় দিনমজুর এক করোনা আক্রান্ত জানালেন, ‘‘আমরা দিন আনি দিন খাই। অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি থাকব কীভাবে চিন্তায় ছিলাম। অমরবাবু, কবির ভাইয়েরা বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। ওষুধও কিনে দিয়েছেন। রোজ আমাদের
খোঁজখবর নিচ্ছেন।’’

দল গড়ে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভাবনাটা দহিজুড়ির বাসিন্দা মণ্ডপ নির্মাণের ব্যবসায়ী বছর পঞ্চাশের অমর পালের। তাঁর আহ্বানে গত বছরই এলাকার বিভিন্ন পেশার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের যুবকেরা এই কর্মসূচিতে শামিল হন। এ বার করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গেও সমান সক্রিয় তাঁরা।

রমজানের মধ্যেও কবির, নাসিরুদ্দিনরা সন্দেহভাজনদের করোনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে। পজ়িটিভ ধরা পড়লে হোম আইসোলেশনে থাকা অসুস্থদের অভয় দিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা।

তবে দহিজুড়ি থেকে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালও ১২ কিলোমিটার দূরে। তাই এলাকার অনেকে করোনা পরীক্ষা করাতে দূরে যেতে চাইছেন না। অমর, কবিরদের আবেদনে সাড়া দিয়ে কাল, শনিবার দহিজুড়ির উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা শিবির হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

আজ, শুক্রবার ইদ। প্রয়োজন হলে আজও করোনা আক্রান্তকে বাঁচাতে গোপালদের সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ছুটবেন নাসিরুদ্দিনরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE