মাস্ক বিলি করছেন সাহজাহান আলম। ছবি: সন্দীপ পাল
‘মুতুল মিয়াঁ বাড়ি আছো?’ টিনের চাল ছাওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ডাকছেন হাইস্কুল শিক্ষক মহম্মদ সাহজাহান আলম। সাদা পাঞ্জাবি, সাদা প্যান্ট। বাইকের হ্যান্ডেলের দু’দিকে দু’টি বড় ব্যাগ। ডাক শুনে বাইরে এসে মুতুলের স্ত্রী জানালেন, বর ঠেলাভ্যান নিয়ে বেরিয়েছেন। শিক্ষক বললেন, “মাসুদা, মুখে মাস্ক নেই কেন?” মহিলা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকলেন। শিক্ষক বললেন, “ওতে হবে না।” ব্যাগ থেকে কয়েকটা মাস্ক বার করে হাতে দিলেন। সঙ্গে দিলেন প্যাকেটে ভরা সেমই, চিনি, দুধ। শিক্ষক বললেন, “এগুলো খেয়ে রোজা ভাঙবে। ইদের দিন মাস্ক ছাড়়া বেরোবে না।”
রাত পোহালেই ইদের উৎসব। পড়শিরা, পরিজনেরা একে অপরের বাড়ি যেতে পারে। মাস্ক না-থাকলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা আছে— এই চিন্তাতেই নিজে রোজা রেখেও বাড়ি বাড়ি মাস্ক বিলি করলেন মাস্টারমশাই। জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ার গলিতে মাস্টারমশাইয়ের বাইক দেখেই জটলা। মুদির দোকানদার ইউনিস আলির হাতে লুঙ্গি দিলেন মাস্টারমশাই। সঙ্গে সাবান, মাস্ক। স্যানিটাইজ়ার বার করে সওকত আলির হাত ধুইয়ে দিলেন। সকলের হাতে থোকা থোকা মাস্ক দিয়ে হাতজোড় করে অনুরোধ করলেন, “ইদের দিন কিন্তু বেরোলেও মাস্ক অবশ্যই পরবেন।”
এরপর জমিদার পাড়া। সাহজাহান আলমের বাইক রাজ্য সড়ক পেরিয়ে পাড়ার সরু গলির সামনে থেমে গেল। হাতে কিছু প্যাকেট নিয়ে রাস্তার পাশের দরমা-বেড়ার আধ পাকা বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লেন তিনি। উঠোনে বসে প্রবীণ মোয়াজ্জেম মহম্মদ কাফিরুদ্দিন। তাঁর মুখে মাস্ক নেই দেখে হইহই করে উঠলেন মাস্টারমশাই— “আরে চাচা, তোমার কথা কত লোকে শোনে। তুমি মাস্ক পরনি কেন?” নিজে হাতে মাস্ক পরিয়ে দিয়ে কাফিরুদ্দিনকে।
জলপাইগুড়ির কম্পোজিট কমপ্লেক্স লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা সাহজাহান দিনভর এলাকার ২৫টি দুঃস্থ বাড়িতে গিয়ে শা্ড়ি-লুঙ্গি এবং রোজা ভাঙার খাবারদাবারের সঙ্গে বিলি করে গেলেন মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার। নন্দনপুর বোয়ালমারি হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষক সবটাই আয়োজন করেছিলেন নিজের মাইনের টাকা থেকে। বাড়িতে স্ত্রী-মেয়ে প্যাকেট করে দিয়েছে। এ বারই প্রথম। কেন? নিজেও রোজা রাখা শিক্ষকের মন্তব্য, ‘‘বাইরে বার হলে মাস্ক পরতেই হবে। আর গরিব মানুষগুলো কোথা থেকে পাবে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার কেনার টাকা?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy