নবদম্পতি: ছাদনাতলায় সৌরভ কর্মকার এবং স্বাতী পাতর। শুক্রবার, খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র
তাঁর ধনুক-ভাঙা পণ, বিয়ে তিনি করবেনই। এবং এই লকডাউনের বাজারেই।
শ্রীরামপুরের বাসিন্দা শৌনক দাস ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেছেন, বুধবারই বেঙ্গালুরুর অদূরে খামারবাড়িতে বিয়ে করেছেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর ছেলে নিখিল গৌড়া। বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট থেকে নম্বর জোগাড় করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ফোন করে শৌনক জানতে চান, নিখিল বিয়ে করতে পারলে তিনি কেন পারবেন না?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, কোনও বাধা নেই। স্থানীয় থানাকে জানিয়ে রাখতে হবে। সে কাজ অনেক আগেই সেরে রেখেছিলেন শৌনক। বৃহস্পতিবার জেলার পুলিশকর্তার সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে তাঁর। আজ, শনিবার বিয়ে করতে যাবেন ১৫ মিনিট দূরে সিঙ্গুর থানা এলাকায়। বরযাত্রী বলতে শুধু বাবা। মেয়ের বাড়িতে পাত্রী ছাড়া থাকবেন তাঁর বাবা-মা এবং পুরোহিত। রেজিস্ট্রেশনের জন্য নোটিস দিয়ে রেখেছিলেন আগেই। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ম্যারেজ অফিসারকে রাজি করাতে পারেননি।
কিন্তু, লকডাউনের মধ্যে করা বিয়েকে কি আইনি বৈধতা দেওয়া হবে? সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের ম্যারেজ অফিসারদের সংগঠনের সম্পাদক জয়ন্ত মিত্র। তাঁর দাবি, প্রতিটি শংসাপত্রে নোটিসের দিন, বিয়ের দিন এমনকি শংসাপত্র দেওয়ার দিন উল্লেখ করা থাকে। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগে বিয়ের এই শংসাপত্র। পরবর্তী সময়ে যখন দেখা যাবে বিয়ে হয়েছে লকডাউন চলাকালীন এবং আইন দফতরের অধীনস্থ ম্যারেজ অফিসার তা করিয়েছেন, তখন কি আইন না-মানার অভিযোগ উঠবে না? পুরো বিষয়টি জানিয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি লিখেছেন জয়ন্তবাবু।
আরও পড়ুন: বাবার মৃত্যুতে বাড়ি ফেরার পথে ‘বাধা’ রাজ্যের সীমানায়
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইন দফতরের অধীনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, লকডাউনের মধ্যে শুধু এপ্রিলের ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিয়ের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে ৭৪৬ জনকে। যে দিন বিয়ে হয়, তার কয়েক দিন পরে এই শংসাপত্র দেন ম্যারেজ অফিসার। জয়ন্তবাবুর প্রশ্ন, তবে কি এই সমস্ত বিয়েই লকডাউনের আগে হয়ে গিয়েছে? এখন বাড়িতে বসে এক-এক করে শংসাপত্র দিচ্ছেন ম্যারেজ অফিসারেরা?
জয়ন্তবাবুর দাবি, তা মেনে নেওয়া যাবে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে ম্যারেজ অফিসার গিয়ে বিয়ে দেবেন, সেটা মেনে নেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে তিনি সংশয়ে।
ওই ওয়েবসাইটে দেখা গিয়েছে, বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে করতে গেলে যে নোটিস দিতে হয়, যে নোটিসের এক মাস পরে এবং তার তিন মাসের মধ্যে বিয়ে করতে হয়, লকডাউনে সেই নোটিসও দেওয়া হচ্ছে। কেউ নোটিস দিয়েছেন ১ এপ্রিল। তার বৈধতা থাকবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। কেউ যদি বিয়ে নিয়ে আপত্তি করতে চান, সেই জন্যই এই এক মাসের নোটিস দেওয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু যে নোটিস দেওয়া এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের পুরোটাই লকডাউনের মধ্যে কেটে যাচ্ছে, সেখানে কেউ চাইলেও কী ভাবে আপত্তি জানাবেন, সেই প্রশ্নের উত্তরও রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে চেয়েছেন জয়ন্তবাবু।
আরও পড়ুন: কাজ হারানোর ভয়, তাই আধপেটা খেয়েই ডিউটি
তবে শ্রীরামপুরের বাসিন্দা যুবকের বিয়ের আইনি বৈধতা নিয়ে যখন কিছুটা হলেও সংশয় রয়েছে, সেই সময়েই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চার হাত এক হল খড়্গপুর শহরের তালবাগিচার বামনপাড়ার এক পরিবারে। শুভদৃষ্টি থেকে মালাবদল— সবই হল মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। পাত্র সৌরভ কর্মকারের বাড়ির মন্দিরেই হয়েছে অনাড়ম্বর বিয়ে। পাত্রী স্বাতী পাতর ঝাড়গ্রামের মেয়ে। সব মিলিয়ে ছিলেন জনা পনেরো লোক। আয়োজন হয়নি প্রীতিভোজের। সেই টাকায় লকডাউনে বিপাকে পড়া অসহায় মানুষদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন নবদম্পতি। একই পথে হাঁটার কথা ভাবছেন শৌনকও।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy