রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত খারিজ করে বিজেপি-কে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ (রথযাত্রা) করার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার ওই অনুমতি দিয়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং খামখেয়ালিপনার নামান্তর।
রথযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আসন্ন গঙ্গাসাগর মেলার জন্য বাহিনীর অভাব দেখিয়ে রায়ের উপর স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়েছিলেন। বিচারপতি তা মঞ্জুর করেননি। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে রাজ্য।
বিজেপি আদালতে তাদের আর্জিতে বলেছিল, ২২ ডিসেম্বর কোচবিহার, ২৪ তারিখ সাগর এবং ২৬ তারিখ তারাপীঠ থেকে রথযাত্রা শুরু করতে চায় তারা। যাত্রা চলবে ৩৫ থেকে ৪২ দিন।
এ দিন যাত্রার অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপির উপর কিছু শর্তও আরোপ করেছেন বিচারপতি। তিনি বলেছেন, কোন সময় কোন জেলায় যাত্রা ঢুকবে, তা সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে ১২ ঘণ্টা আগে জানাতে হবে। যাত্রা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। সরকার ও জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি হলে তার দায় বিজেপির। যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না।
রথযাত্রা নিয়ে রাজ্যকে অবহিত করার পরেও তাদের পক্ষ থেকে কিছু জানানো না-হওয়ায় নভেম্বরের শেষে বিচারপতি চক্রবর্তীর আদালতে প্রথমে মামলা করেছিল বিজেপি। ৬ ডিসেম্বর তিনি যাত্রার উপর অন্তর্বর্তিকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেন। স্থগিতাদেশ চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করে বিজেপি। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি-কে বৈঠকে বসতে হবে বিজেপির তিন প্রতিনিধির সঙ্গে। রথযাত্রা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত বিজেপি-কে জানিয়ে দিতে হবে ১৫ ডিসেম্বর। সেই বৈঠকের পরে রাজ্য অনুমতি না-দেওয়ায় দ্বিতীয় দফায় বিচারপতি চক্রবর্তীর আদালতে নতুন মামলা করে বিজেপি।
রথযাত্রার অনুমতি না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন খামখেয়ালি ও অযৌক্তিক, রায়ে তার ব্যাখ্যা দিয়ে বিচারপতি চক্রবর্তী বলেছেন, যাত্রার উপর যুক্তিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। ২৯ অক্টোবর যাত্রা নিয়ে প্রথম অবগত করা হয় রাজ্য প্রশাসনকে। তখন গোয়েন্দা রিপোর্ট পেশ করে সাম্প্রদায়িক গোলমালের
আশঙ্কার কথা জানানো হয়নি। ৬ ডিসেম্বর প্রথম মামলার দ্বিতীয় শুনানির দিন আদালতকে জানানো হয় কোচবিহারের পুলিশ সুপার রিপোর্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক গোলমালের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এটা আদালতকে বিস্মিত করেছে বলে পর্যবেক্ষণ বিচারপতির।
তিনি আরও জানিয়েছেন, কোচবিহারে সাম্প্রদায়িক গোলমালের ইতিহাস রয়েছে বলে পুলিশ রিপোর্ট দিলেও, গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, কোতোয়ালি থানায় সেই ধরনের গোলমাল নিয়ে একটি মাত্র ফৌজদারি মামলা রুজু হয়েছে। কোচবিহার ছাড়া আরও কোনও জেলা থেকে গোয়েন্দা রিপোর্ট মেলেনি। প্রশাসনের যে শীর্ষ কর্তারা বিজেপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন, তাঁরাও অন্য কোনও জেলার নাম উল্লেখ করেননি। যাত্রার অনুমতির বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না।
বিচারপতি চক্রবর্তী তাঁর রায়ে এও পর্যবেক্ষণ করেছেন, যাত্রার বেআইনি উদ্দেশ্য নেই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কার বিষয়টি প্রশাসনের কল্পনা মাত্র। রাজ্য যে ভাবে যাত্রার অনুমতি না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে ‘যান্ত্রিক’ বলেও মন্তব্য করেছেন বিচারপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy