Advertisement
E-Paper

মধ্যমগ্রাম গণধর্ষণে দোষী ৫

গণধর্ষিতা নাবালিকার মৃত্যুর পরে তার গর্ভস্থ ভ্রূণের ডিএনএ পরীক্ষা করে শনাক্ত করা গেল অপরাধীদের। বৃহস্পতিবার, ঘটনার সাড়ে দশ মাসের মাথায় মধ্যমগ্রামের গণধর্ষিতা কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল বারাসত আদালত। আজ, শুক্রবার সাজা শোনাবেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বিশেষ আদালতের বিচারক শান্তনু ঝা।ঁ অভিযুক্তদের এক জনকে রাজসাক্ষী করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি বিপ্লব রায়।

নিজস্ব‌ সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৩০

গণধর্ষিতা নাবালিকার মৃত্যুর পরে তার গর্ভস্থ ভ্রূণের ডিএনএ পরীক্ষা করে শনাক্ত করা গেল অপরাধীদের। বৃহস্পতিবার, ঘটনার সাড়ে দশ মাসের মাথায় মধ্যমগ্রামের গণধর্ষিতা কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল বারাসত আদালত। আজ, শুক্রবার সাজা শোনাবেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বিশেষ আদালতের বিচারক শান্তনু ঝা।ঁ অভিযুক্তদের এক জনকে রাজসাক্ষী করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি বিপ্লব রায়।

দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের মতোই ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তি হল গণধর্ষণের মামলাটির। যার প্রেক্ষিতে এ দিন বিকালে সাংবাদিক বৈঠক করে সরকার ও বিভিন্ন দফতরের প্রশংসা করেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। মামলার তদন্তকারী অফিসারদের পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রাজ্যের আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ দিন নবান্নে বলেন, “ঘটনার এক বছরেরও আগে বিচারপর্ব শেষ হল। সরকার যে নারী নির্যাতনের ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে, এটাই তার প্রমাণ।” সরকারি পর্যায়ে কোনও মামলাতেই বিলম্ব করা হচ্ছে না বলে তাঁর দাবি। কিন্তু তা হলে পার্কস্ট্রিট বা কামদুনির মতো আরও পুরনো মামলা এখনও ঝুলে রইল কী করে? মন্ত্রীর যুক্তি, “বেশি সাক্ষী থাকলে বিচারপর্ব শেষ করতে দেরি হয়। কামদুনি এবং পার্কস্ট্রিটের ক্ষেত্রেও তদন্ত ঠিক মতো হয়েছে। বিচার চলছে।”

২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর মধ্যমগ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিহারের বাসিন্দা এক ট্যাক্সিচালকের নাবালিকা মেয়েকে গণধর্ষণ করে ছ’জন যুবক। পর দিন মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ জানান ওই কিশোরী। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হয়। অভিযোগ, থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই নাবালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ফের মেয়েটিকে ধর্ষণ করে আগের বার ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জীব তালুকদার ওরফে ছোট্টু। দ্বিতীয়বার ধর্ষণের অভিযোগের বিচার চলছে বারাসত আদালতে।

জখম কিশোরীকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ছোট্টু-সহ ৬ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। ফের অভিযোগ ওঠে, ছোট্টুর সাগরেদরা মেয়েটির পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে মধ্যমগ্রামের বাস গুটিয়ে এয়ারপোর্টের কাছে ঘর ভাড়া করে পরিবারটি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ছোট্টুর প্রতিবেশীরা মধ্যমগ্রাম থেকে এয়ারপোর্টে গিয়ে ওই নাবালিকার উপরে মানসিক অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।

২৩ ডিসেম্বর এয়ারপোর্টের বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয় কিশোরীটি। ৩১ ডিসেম্বর আরজিকর হাসপাতালে মেয়েটির মৃত্যু হয়। সৎকার-পর্ব নিয়ে চলে একপ্রস্থ নাটক। পুলিশ পরিবারকে ছাড়াই দেহ সৎকারের চেষ্টা চালায়। পরে বিহার পুলিশের তদন্তকারী দল এ রাজ্যে আসে। নাবালিকার মৃত্যুর তদন্তভার নেয় সিআইডি। তারা দু’জনকে গ্রেফতারও করে। সেই মামলাটির বিচার চলছে ব্যারাকপুর আদালতে। ফলে এখনও জানা যায়নি, মেয়েটি আত্মঘাতী হয়েছিল, নাকি আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল তাকে।

গণধর্ষণের মামলার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বারাসত আদালতে ফাস্ট ট্র্যাকের বিশেষ আদালতে গোপন ক্যামেরার সামনে বিচার শুরু হয়। বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি ছাড়াও বিচার কার্যে নিয়োগ করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়কে।

ময়না-তদন্তের রিপোর্টে ডাক্তার মণিমালা সেনের নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ দল জানিয়ে দেয়, মৃত্যুর সময়ে ওই নাবালিকা প্রায় দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ভ্রূণের ওজন ও আয়তন দেখে গর্ভধারণের সময় নির্ধারণ করা হয়। জানা যায়, ঠিক দু’মাস আগে গণধর্ষণের দিনের সঙ্গে তা মিলে যাচ্ছে।

ভ্রূণের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে। ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়। অভিযুক্ত ৬ জনেরও ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। ডাক্তার সোমা রায়ের নেতৃত্বে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল জানিয়ে দেয়, অভিযুক্তদের এক জনের সঙ্গে ওই ভ্রূণের ডিএনএ-র মিল রয়েছে।

এরপরেই ৫ মার্চ অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।

গণধর্ষণ ছাড়াও ‘প্রোটেকশন অব চাইল্ড ফর্ম সেক্সুয়াল অফেন্স’ (পসকো) আইনেও অভিযোগ আনা হয়। আট মাস ধরে ওই দুই চিকিৎসক-সহ ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। অভিযুক্তদের এক জন অ্যান্টনি সচ্চি আদালতে নিজের দোষ কবুল করে। কৌঁসুলি বিপ্লববাবু বলেন, “অ্যান্টনিকে এই মামলায় রাজসাক্ষী করে ছোট্টু, পলাশ দেবনাথ, রাজেশ মণ্ডল, পাপাই রায় ও রাজীব বিশ্বাসকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।” এ দিন আদালতে অভিযুক্তদের তোলা হলেও তাদের পরিবার বা নির্যাতিতা মেয়েটির পরিবারের কেউ ছিলেন না।

madhyamgram case gang rape case state news online state news guilty justice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy