এক জোড়া লোকাল ট্রেন চাই। যার যাত্রা শেষ হবে বিধাননগরে। ফিরতি যাত্রাও শুরু হবে সেখান থেকেই!
হাজার গণ্ডা বায়নাক্কায় শিয়ালদহ ডিভিশনে বিক্ষোভ হয়েছে বিস্তর। অবরোধ হয়েছে। কিন্তু বিধাননগর থেকে ট্রেন চালাতে হবে, এমন দাবি অতি উচ্চাকাঙ্খী কোনও সংগঠন বা যাত্রী মঞ্চও কোনও দিন তোলেনি! অথচ এমনই এক দাবি নিয়ে ফ্যাসাদে পড়েছে রেল।
সল্টলেকে আগামী ১৮ জানুয়ারি মহাসমাবেশ ডেকেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। যেখানে প্রধান বক্তা দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। থাকার কথা কাশ্মীরের মহম্মদ ইউসুফ তারিগামিরও। জেলা সম্পাদক গৌতম দেব তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দাবি করেছেন, এক লাখ লোক সে দিন বিধাননগর ভরিয়ে দেবেন! তাতে কোনও অসুবিধা ছিল না।
কিন্তু জেলা সম্পাদকের আরও দাবি, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিশেষ লোকাল ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে। গোল বেধেছে সেখানেই!
এমনিতে রাজনৈতিক দলের বড় কর্মসূচি থাকলে অনুরোধ সাপেক্ষে রেল বিশেষ ট্রেন দিয়েই থাকে। ব্রিগেড বা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বড় সমাবেশ উপলক্ষে সিপিএমও কেন্দ্রে কংগ্রেস এবং বিজেপি, দুই সরকারের কাছ থেকেই ট্রেনের দাক্ষিণ্য পেয়েছে। বর্তমান রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু তো এ ব্যাপারে আরও দরাজ। কিন্তু গৌতমবাবুর এ বারের দাবি নিয়ে সিপিএম নেতৃত্বের তরফে প্রথমে ঘরোয়া ভাবে কথা বলা হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এবং রেলের কাছ থেকে তাঁরা সেটাই শুনেছেন, যা তাঁরাও জানতেন—এ কী করে সম্ভব!
শিয়ালদহ শাখায় বিধাননগর এমন এক স্টেশন যেখানে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা বা ফিরতি যাত্রার জন্য কোনও আলাদা প্ল্যাটফর্ম নেই। বিশেষ ট্রেন দিতে গেলে ব্যবস্থা করতে হবে শিয়ালদহ থেকেই।
কিন্তু গৌতমবাবুদের যুক্তি, ব্যস্ত সময়ে শিয়ালদহ থেকে ছাড়লে সেখান থেকেই সাধারণ যাত্রীরা অর্ধেক ট্রেন ভরিয়ে ফেলবেন! বিশেষ ট্রেনে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা কি তা হলে বিধাননগরে মারামারি করবেন? আর ৫০ হাজার সমর্থকও যদি সে দিন ট্রেনে চাপেন, ন্যূনতম পাঁচ টাকা করে ধরলেও তাঁদের টিকিট থেকে এমনিতেই বিরাট লাভ হবে রেলের। তার বিনিময়ে একটা বিশেষ ট্রেন পেতে কী এমন অসুবিধা?
রেল বোঝাতে ব্যস্ত যে, টিকিটের প্রশ্ন এটা নয়। বিধাননগর থেকে ট্রেন চালানোর ‘অপারেশনাল’ অসুবিধাই মস্ত। ডাউন ট্রেন বিধাননগরে এসে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের নামিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে না ঢুকে বাইরে কোচ ইয়ার্ডে জিরিয়ে নিয়ে আবার বিধাননগরে ফিরে আসবে, এমন বন্দোবস্ত করাও মুখের কথা নয়। সিস্টেমের অসুবিধা, খরচের প্রশ্ন আছে। শেষ পর্যন্ত রেল মন্ত্রক অবশ্য বিষয়টা দেখতে বলেছে শিয়ালদহের ডিআরএম দফতরকে। তারাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেবে।
খোদ গৌতমবাবু প্রকাশ্যে শুধু বলছেন, ‘‘বিশেষ ট্রেনের একটা ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। বিজেপি সরকার কী করবে, দেখা যাক!’’ জেলার নানা প্রান্ত থেকে সে দিন প্রায় ১২০০ বাসেও লোক আসবে বলে তিনি জানাচ্ছেন।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য মেনে নিচ্ছেন, ‘‘তেমন হলে শিয়ালদহ থেকেই না হয় বিশেয ট্রেন দিক। তা হলেও কিছু কাজ তো হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy