E-Paper

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী কি নওশাদই, উভয় সঙ্কটে বাম শিবির

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ নওশাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে ঘরোয়া ভাবে কথা বলেছেন। নওশাদ প্রায়শই বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটে যারা তৃণমূলের সঙ্গে আছে, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৩
Nawsad Siddique.

নওশাদ সিদ্দিকী। —ফাইল চিত্র।

ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে এ বার লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে চাইছেন নওশাদ সিদ্দিকী। প্রাথমিক ভাবে তাঁকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েও রেখেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। কিন্তু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে আইএসএফ বিধায়ককে নিয়ে উভয় সঙ্কটও আছে বাম শিবিরে!

কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে অন্যতম বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে আইএসএফ। ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদের নেতৃত্বে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই এলাকায় তো বটেই, অন্য জেলার আরও কিছু সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত অঞ্চলে আইএসএফের লড়াই নজর কেড়েছে। বিধায়ক নওশাদ গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছেন, তাতে সরকার-বিরোধী লড়াইয়ে তাঁর পরিচিতি আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতেই নওশাদ ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চাইছেন। ওই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটারের অনুপাত উল্লেখযোগ্য। সব মিলিয়ে নওশাদকে সামনে রেখে বাম-কংগ্রেস এবং আইএসএফ একত্রে দাঁড়ালে লড়াই ভাল হবে বলেই রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের অভিমত।

এই সমীকরণ মাথায় রেখেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রাথমিক ভাবে নওশাদের ইচ্ছায় সায় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু জট পেকেছে অন্যত্র। একে তো বিরোধী শিবিরে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই নওশাদ ডায়মন্ড হারবারের কথা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন। এই নভেম্বরেই বামফ্রন্টের শরিক, ফ্রন্টের বাইরের বাম দল, কংগ্রেস এবং আইএসএফের সঙ্গে লোকসভা ভোট নিয়ে সিপিএমের আলোচনা শুরু করার কথা। নওশাদ সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি। তা ছাড়া, বাম শিবিরের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতা করার পরে সংখ্যালঘু জনমানসে সিপিএমের নিজস্ব প্রভাব আরও কমে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘু মনে বামেদের সেই পরিসর অনেকটাই নিয়ে ফেলেছে আইএসএফ। এর পরে ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের বিরুদ্ধে নওশাদকে সামনে রেখে লড়তে গেলে ভবিষ্যতের প্রশ্নে সিপিএম তথা বামেদের আরও ক্ষতি হবে না তো?

সূত্রের খবর, সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ নওশাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে ঘরোয়া ভাবে কথা বলেছেন। নওশাদ প্রায়শই বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটে যারা তৃণমূলের সঙ্গে আছে, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে বিজেপির সুরের মিল আছে এবং এতে বাম ও কংগ্রেসের অস্বস্তিও আছে। সিপিএম নেতারা মনে করছেন, সবর্ভারতীয় স্তরের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমীকরণ যে বাংলায় খাটবে না, সেই বাস্তবতা মেনে নিয়ে চলা হোক। তাঁদের মতে, নওশাদকে তাঁর বক্তব্যের ধরনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

নওশাদ অবশ্য বলছেন, বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’দলের বিরুদ্ধেই বামেদের মতো তাঁদেরও লড়াই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার দল অনুমতি দিলে ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। কারণ, ডায়মন্ড হারবার মডেলের নামে শোষণ হচ্ছে। মেটিয়াবুরুজ পোশাক শিল্প, ১৬ বিঘা বস্তি, রাস্তাঘাট, গ্রামে গ্রামে সিন্ডিকেট তৈরি হওয়া নিয়ে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। আমার ইচ্ছা অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে প্রাক্তন করা!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত এবং পুরভোটে লুট হয়েছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন ওঁরা (তৃণমূল)। ওঁদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না!’’

তৃণমূল পাল্টা প্রচার চালাচ্ছে নওশাদের সঙ্গে বিজেপির ‘গোপনে সমঝোতা’র অভিযোগ এনে। দু’দিন আগে অভিষেক মন্তব্য করেছেন, ‘‘ডায়মন্ড হারবারে কেউ কেউ দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। দাঁড়াতেই পারেন। এটাই গণতন্ত্র। ডায়মন্ড হারবারে উত্তরপ্রদশ বা গুজরাত থেকেও কেউ এসে দাঁড়াতে পারেন।’’ বিজেপির দিকে ইঙ্গিত করার জন্যই উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতের কথা অভিষেক এনেছেন বলে শাসক দল সূত্রের ব্যাখ্যা। আবার ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক সওকাত মোল্লা কটাক্ষ করেছেন, ‘‘কুঁজোরও মাঝে মাঝে চিৎ হয়ে শোওয়ার ইচ্ছা হয়! অভিষেক প্রচারে না এলে নওশাদ সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে হারবেন। আর অভিষেক প্রচারে বেরোলে ওঁর জামানত জব্দ হবে!’’

নওশাদের সঙ্গে ‘আঁতাঁতে’র গুঞ্জন উঠতে থাকায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘বিধায়ক এবং নেতা হিসেবে বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে ওঁর লড়াইকে কুর্নিশ করি। কিন্তু আইএসএফ এবং বিজেপির রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা। ডায়মন্ড হারবারে সমর্থনের প্রশ্ন নেই, সেখানে বিজেপির প্রার্থী থাকবে।’’

ঘটনাপ্রবাহের জেরে ঘনিষ্ঠ মহলে নওশাদের মন্তব্য, ‘‘আমি তৃণমূলের বিরুদ্ধে বললে কেউ বলবে বিজেপির দালালি করছে! আর বিজেপির বিরুদ্ধে বললে তখন বলা হবে তৃণমূলের দালাল! এই ভাবেই লড়ে যেতে হবে।’’ তবে ডায়মন্ড হারবারে তাঁর প্রার্থী হওয়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে ভাঙড়ে লড়াইয়ের কী হবে, সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজতে হবে!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nawsad Siddique CPM ISF

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy