Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাম জার্সি বদলে রজ্জাক তৃণমূলে, ‘কথা’ রাখলেন শুভেন্দু!

বৃহস্পতিবার বিকেলে, জলঙ্গির কলেজ মাঠে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাত থেকে দলবদলের পতাকা নেওয়ার পরে সেই রাজ্জাকই প্রায় নির্বিকার ডিগবাজি খেয়ে জানিয়ে দিলেন, ‘‘সন্তানের জন্ম দিয়ে খেতে না দিতে পারা বাবার মতো যন্ত্রণা হচ্ছিল, কোনও কাজ করতে পারছিলাম না জলঙ্গির মানুষের জন্য। এ বার তাঁদের কাজ করে পাশে দাঁড়াব বলেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম।’’

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক। জলঙ্গিতে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক। জলঙ্গিতে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
জলঙ্গি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫২
Share: Save:

তাঁর দলবদল নিয়ে জেলা যখন নিশ্চিত, বুধবার রাতে, জলঙ্গির বাম বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক ব্যাঙ্গ করে বলেছিলেন, ‘‘জল্পনায় কান দেন কেন!’’ তার পরে, পুরনো রেকর্ডের মতো ইনিয়ে বিনিয়ে দীর্ঘ কথনে জানিয়েছিলেন, রাজনীতিতে বামপন্থী হিসেবেই তাঁর আজন্ম পরিচয়, সে পরিচয় বদলের কোনও সম্ভাবনাই এখন নেই।

বৃহস্পতিবার বিকেলে, জলঙ্গির কলেজ মাঠে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাত থেকে দলবদলের পতাকা নেওয়ার পরে সেই রাজ্জাকই প্রায় নির্বিকার ডিগবাজি খেয়ে জানিয়ে দিলেন, ‘‘সন্তানের জন্ম দিয়ে খেতে না দিতে পারা বাবার মতো যন্ত্রণা হচ্ছিল, কোনও কাজ করতে পারছিলাম না জলঙ্গির মানুষের জন্য। এ বার তাঁদের কাজ করে পাশে দাঁড়াব বলেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম।’’

তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তখন মুচকি হাসছেন শুভেন্দু, ‘‘কী কথা রাখলাম তো!’’ তার পরে ভেঙে ভেঙে চেনা গলায় যোগ করলেন, ‘‘কানাইদাকে (মণ্ডল) দিয়ে এগারো এগারো করেছিলাম, এ বার রাজ্জাক সাহেবকে দিয়ে বারো করে দিলাম। বাম কংগ্রেস মিলিয়ে এখন মুর্শিদাবাদে দশ জন বিধায়ক পড়ে থাকল বিরোধীদের।’’

জেলা পর্যবেক্ষক হিসেবে মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই বিরোধী শক্তি ভাঙার ‘দায়’ নিয়েছিলেন তিনি। এমনই অভিযোগ করেছিল বাম-কংগ্রেস। জেলায় শুভেন্দুর সভা মানেই বিরোধী শিবির থেকে কেউ না কেউ ডিগবাজি খেয়ে তৃণমূলের হাত ধরবে, এ প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিছু দিন আগে অন্য বাম বিধায়ক কানাই মণ্ডল দলবদল করার পরে শুভেন্দু খোলাখুলিই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘পরের জনসভায় চোখ রাখুন।’ তা নিয়ে জেলা জুড়ে জল্পনা কম হয়নি। এ দিন সেই জল্পনায় ইতি টানলেন রাজ্জাক।

ক্রমান্বয়ে দল ভাঙার এই ঘটনায় কিঞ্চিৎ বিব্রত হয়েই কিছু দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যা য় বলেছিলেন, দলভাঙার খেলায় তাঁরা আর নেই।

এ দিন শুভেন্দু অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘দিদির সঙ্গে কথা বলেই রাজ্জাক সাহেবকে দলে নেওয়া হয়েছে।’’ বৃহস্পতিবার জলঙ্গিতে ব্রিগেড প্রস্তুতি সভায় ভিড় উপচে পড়েছিল, ‘এ বার কে’ তা দেখার জন্য। শুভেন্দুর হাত ধরে শেষতক রাজ্জাক মঞ্চে উঠতেই মাঠ জুড়ে সেই রহস্যের কুয়াশা কাটে।

জলঙ্গির সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক ইমরান হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘রাজ্জাক সাহেব তৃণমূলে গিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। জলঙ্গির তৃণমূলে এক সভাপতির সঙ্গে ইটভাটার ব্যবসা ছাড়াও রাজ্জাক সাহেবের আরও অনেক বিষয় নিয়ে দলে ক্ষোভ বাড়ছিল। মানুষ ওঁর থেকে দুরে সরে যাচ্ছিল। তার সব থেকে বড় প্রমাণ, এ দিন ওঁর সঙ্গে একজন সিপিএম কর্মীও তৃণমূলে যোগ দেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abdur Razzak Mandal CPM TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE