E-Paper

কালীগঞ্জ নিয়ে প্রতিবাদ বাড়াচ্ছে বামেরা, প্রশ্ন এআইসিসি-র নীরবতায়

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে মঙ্গল ও বুধবার সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে কালীগঞ্জের উপনির্বাচন ও তার পরবর্তী ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ০৬:৫২
কালীগঞ্জের তামান্না খাতুন খুনের প্রতিবাদে সিপিএমের ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভ মিছিল।

কালীগঞ্জের তামান্না খাতুন খুনের প্রতিবাদে সিপিএমের ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

উপনির্বাচনে শাসক দলের জয়োল্লাসের বোমায় কালীগঞ্জের মোলান্দি গ্রামের বালিকা তামান্না খাতুনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ আরও জোরালো করার পথে হাঁটছে সিপিএম। কালীগঞ্জে আগামী ২৮ জুন বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিল তারা। পরের দিন বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদল নিয়ে সেখানে যাওয়ার কথা প্রবীণ নেতা বিমান বসুর। কালীগঞ্জে সমঝোতা করে উপনির্বাচনে লড়ার পরে ওই বালিকা খুনের ঘটনায় প্রতিবাদে নেমেছে প্রদেশ কংগ্রেসও। তবে এমন নৃশংস ঘটনার পরেও এআইসিসি নেতৃত্বের তরফে কেন এক শব্দও নেই, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অন্দরেই।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে মঙ্গল ও বুধবার সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে কালীগঞ্জের উপনির্বাচন ও তার পরবর্তী ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেই ঠিক হয়েছে, দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে ২৮ তারিখ কালীগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল যাওয়ার কথা ২৯শে। রাজ্য কমিটির বৈঠকের পরে সেলিম বলেছেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়েছে। কালীগঞ্জের ঘটনা তা প্রমাণ করে দিয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শুধু একটা ঘটনাই নয়। শত শত মেয়ে-শিশুদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে, খুন হচ্ছে। তার প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি সব অংশকে।’’

বালিকা খুনের প্রতিবাদে এ দিনও রাজ্যের নানা জায়গায় স্থানীয় স্তরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে সিপিএম ও তাদের বিভিন্ন গণ-সংগঠন। ‘আমার বোন তামান্না, এই অন্যায় আর না’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমেছিল ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই। বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল বিজেপি কেন কালীগঞ্জের খুন নিয়ে সরব হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি পুলিশের কড়া সমালোচনা করেছেন সেলিম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের অভিযোগ, সেখানে বোমা জড়ো করা হচ্ছে বলে আগাম জানানো সত্ত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি, নির্বাচন কমিশনও কোনও নির্দেশ দেয়নি। তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ মিথ্যা বলছে। রাজ্য পুলিশের এক্স পোস্টে বলা হল, বোমার আঘাতে মৃত্যু। দশ মিনিটের মধ্যে বোমা শব্দটি তুলে নেওয়া হল। বলা হল, দুর্ঘটনাবশত স্প্লিন্টার লেগে মৃত্যু হয়েছে ওই বালিকার! এটা দুর্ঘটনা?’’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন অবশ্য দাবি করেছেন, তৃণমূলের ভোট-ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য তামান্নাকে খুন হতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষ ফের বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত চলছে, দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা হবে। পরিবারের মুখ বন্ধ করা বা বিরোধীদের আরও অনেক অভিযোগই ভিত্তিহীন।

কালীগঞ্জ-কাণ্ডের প্রতিবাদে দক্ষিণ কলকাতায় কংগ্রেসের বিক্ষোভ।

কালীগঞ্জ-কাণ্ডের প্রতিবাদে দক্ষিণ কলকাতায় কংগ্রেসের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রতিবাদ জারি রেখেছে কংগ্রেসও। যদুবাবুর বাজারের কাছে রাস্তা অবরোধ করে এ দিনও বিক্ষোভ করেছেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাতে কোনও ঘটনা ঘটলেই যে রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা-রা ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাঁরা এক বালিকার এমন মর্মান্তিক হত্যার পরে কেন সামান্য নিন্দাও করলেন না, সেই প্রশ্ন উঠছে দলের ভিতরেই। এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর রাজ্যে কংগ্রেসের নানা ‘নিরীহ’ কর্মসূচিতে এলেও এমন ঘটনায় তৃণমূলের সরকার বা শাসক দলকে বিঁধে কিছু বলেননি, তা-ও নজর এড়ায়নি। কংগ্রেসে কেউ কেউ কেরল রাজনীতির সমীকরণের যোগ টানলেও দক্ষিণী ওই রাজ্য থেকেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হওয়া এম এ বেবি কিন্তু কালীগঞ্জের বালিকা-কাণ্ডে মুখ খুলতে রেয়াত করেননি। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা আমাদের মতো লড়াই করছি। কালীগঞ্জে বাম সমর্থনে আমরা লড়েছি। কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে আবেদন করেও এআইসিসি-র কেউ কিছু বলেননি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Congress SFI DYFI

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy