Advertisement
E-Paper

আইডিতে বিশেষজ্ঞের আকাল, নাকাল রোগীরা

মধ্যমগ্রামের ব্যবসায়ী, বছর পঁয়তাল্লিশের সঞ্জয় রায়চৌধুরীর চিকেন পক্স হয়েছিল ২৫ মার্চ। সঙ্গে প্রচণ্ড পেট ব্যথা। পরীক্ষায় দেখা যায়, পক্স থেকেই প্যাংক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন সঞ্জয়বাবু। তাঁকে আরজিকর এবং এসএসকেএমের মতো প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পক্সের মতো ছোঁয়াচে রোগের রোগীকে ভর্তি করা যাবে না।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৩

মধ্যমগ্রামের ব্যবসায়ী, বছর পঁয়তাল্লিশের সঞ্জয় রায়চৌধুরীর চিকেন পক্স হয়েছিল ২৫ মার্চ। সঙ্গে প্রচণ্ড পেট ব্যথা। পরীক্ষায় দেখা যায়, পক্স থেকেই প্যাংক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন সঞ্জয়বাবু। তাঁকে আরজিকর এবং এসএসকেএমের মতো প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পক্সের মতো ছোঁয়াচে রোগের রোগীকে ভর্তি করা যাবে না। সরকারি ব্যবস্থায় তাঁর চিকিৎসা করা যাবে একমাত্র বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।

সঞ্জয়বাবুর বাড়ির লোক জানান, পক্স রোগীকে প্রথমে কিন্তু তাঁরা আইডিতেই নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসা করার মতো কোনও গ্যাসট্রোএন্টারোলজিস্ট আইডিতে নেই বলে তাঁদের জানানো হয়।
তাই সঞ্জয়বাবুকে সেখানেও ভর্তি করানো যায়নি।

একই ভাবে হেনস্থার মুখোমুখি রাজারহাট চৌমাথার বছর পাঁচেকের ছোটন পোড়েলের পরিবার। ছোটনের মাম্পসের সঙ্গেই মেনিনজাইটিস ধরা পড়ে। তাকে বেলেঘাটার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেখানে তিনটি আইসোলেশন বেডের প্রত্যেকটিতেই তখন রোগী ভর্তি। মাম্পস ছোঁয়াচে রোগ। ফলে অন্য শয্যায় তাকে ভর্তি করা যাবে না। ছোটনকে আইডিতে রেফার করা হয়। ছোটনের পরিবারের অভিযোগ, ওই শিশুকে ভর্তি নেয়নি আইডি-ও। কারণ, আইডিতে কোনও শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। নেই নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ। ফলে ভর্তি করা গেলেও যে চিকিৎসা ছোটনের দরকার, তা সে পাবে না। হন্যে হয়ে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হয়ে শেষ পর্যন্ত উল্টোডাঙার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হয়েছে ছোটনের।

সংক্রমণ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘‘শীতের শেষ থেকে বসন্তের শেষ পর্যন্ত, মূলত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এ রাজ্যে চিকেন পক্স, মাম্পস, মিজলস বা হামের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ে। এদের অনুসঙ্গ বা অনুসারি হিসেবে এখন একাধিক রোগ হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।’’ তাই আইডি হাসপাতালে কেন অন্য রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সংক্রমণ বিশেষজ্ঞেরা। এমন এক বিশেজ্ঞের কথায়, ‘‘যে সব রোগীর পক্সের সঙ্গে নিউমোনাইটিস, কার্ডাইটিস, প্যাংক্রিয়াটাইটিস, মাম্পসের সঙ্গে অর্কাইটিস, মেনিনজাইটিস বা মিজলসের সঙ্গে রেসপিরেটরি ট্র্যাক ইনফেকশন হবে, তাঁরা কি সরকারি পরিকাঠামোয় কোনও চিকিৎসা পাবেন না?’’

সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করতে যখন জেলায় জেলায় আইটিইউ, এসএনসিইউ খোলা হচ্ছে, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হচ্ছে তখন রাজ্যের একমাত্র ছোঁয়াচে রোগের চিকিৎসার হাসপাতাল আইডির পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগে কেন সরকারের ভ্রূক্ষেপ নেই, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠেছে।

আইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের ওখানে সব সময় ১৩০-১৪০ জন করে রোগী ভর্তি থাকেন। রোজ আউটডোর চলে। এই সব কিছুর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলতে রয়েছেন দু’জন মেডিসিন (তার মধ্যে এক জন আবার এনআরএস থেকে ডিটেলমেন্ট-এ আছেন) বিশেষজ্ঞ ও এক জন ইএনটি বিশেষজ্ঞ। পক্স বা মাম্পসের রোগী কোনও শারীরিক জটিলতা নিয়ে ভর্তি হলে তাঁরা কী ভাবে চিকিৎসা করবেন? হাসপাতালে এক জনও শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে কোনও শিশু মাম্পস, পক্স বা মিজলসের জটিলতা নিয়ে এলে তাকেও ভর্তি নিতে চাওয়া হয় না।

সুকুমার মুখোপাধ্যায়, অপূর্ব ঘোষের মতো প্রবীণ চিকিৎসকদের মতে, যত দিন যাচ্ছে ছোঁয়াচে রোগের জটিলতা বাড়ছে। একটা রোগের সঙ্গে অনেকগুলো রোগ মিশে থাকছে। এবং পক্স, হামের মতো অসুখে যে হেতু এমনিতেই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাই এই সময় রোগী সহজেই অন্য রোগে আক্রান্ত হন। ফলে আইডির মতো হাসপাতালে অবশ্যই একাধিক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করা বা নিয়মিত অন্য হাসপাতাল থেকে তাঁদের এনে রোগী দেখার ব্যবস্থা করা উচিত।

আইডি এবং বিসি রায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা আগে একাধিক বার এই বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনের কানে তুলেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। তবে সব শুনে রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘এমনিতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আকাল। থাকলেও সব জায়গায় তাঁদের নিয়োগ করা সম্ভব নয়। তবে বিষয়টি যে এত গুরুতর পর্যায়ে গিয়েছে সেটা আইডি কর্তৃপক্ষ আমাদের স্পষ্ট জানাননি।’’ সুশান্তবাবুর পরামর্শ, ‘‘এই ধরনের রোগী ভর্তি হওয়া মাত্র তাঁরা যদি আমাদের জানান, তা হলে আমরা অবশ্যই এ বার থেকে অন্য হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ এনে দেখানোর ব্যবস্থা করব।’’

crisis doctors Beleghata ID Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy