E-Paper

এসআইআরের জন্য পরিচয়পত্র নিতে ভিড় মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে

ঠাকুরবাড়িতে এখন অনেকেই আসছেন হিন্দুত্বের শংসাপত্র, ‘মতুয়া কার্ড’ নিতে। বিহারে এসআইআর-প্রক্রিয়া চলাকালীন বাড়তে শুরু করে ভিড়।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:১০
শান্তনু ঠাকুর।

শান্তনু ঠাকুর। —ফাইল চিত্র।

একটু-একটু করে এগোচ্ছে লাইন। তাতেই ছিলেন ওঁরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর বাসিন্দা দম্পতি এসেছিলেন ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের যশোর থেকে এ দেশে এসেছেন। জানালেন, ২০১২ সালে ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম উঠেছে। ভোটও দেন। তাঁদের কথায়, ‘‘মতুয়া মহাসঙ্ঘের পরিচয়পত্র এবং হিন্দুত্বের কার্ড হাতে পেয়েছি। এ দিন এসেছি নাগরিকত্বের আবেদন করতে। চিন্তায় আছি, এসআইআর (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) হচ্ছে। ভোটার তালিকায় নাম কাটা যাবে না তো!’’ শিবিরের অন্যতম উদ্যোক্তা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘যাঁদের নাম কাটা যাবে, তাঁরা হয় তো এক-দু’বার ভোট দিতে পারবেন না। তবে সিএএ-তে নাগরিক হিসাবে নাম ওঠার পর থেকে পারবেন।’’

ঠাকুরবাড়িতে এখন অনেকেই আসছেন হিন্দুত্বের শংসাপত্র, ‘মতুয়া কার্ড’ নিতে। বিহারে এসআইআর-প্রক্রিয়া চলাকালীন বাড়তে শুরু করে ভিড়। ত্রিপলের ছাউনির তলায় বসা স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকের কাছেই ল্যাপটপ। সেখানে নাম নথিভুক্তি, নথি যাচাই চলছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পরিচয়পত্র, হিন্দুত্বের শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) আবেদনের করার ব্যবস্থাও আছে। নাটমন্দিরে এবং গদিঘরে ফ্লেক্স-ব্যানারে লেখা, ‘মতুয়া সম্প্রদায় তথা হিন্দুদের হিন্দুত্বের শংসাপত্র প্রদান শিবির’ বা ‘সিএএ-তে আবেদন করার শিবির’।

শিবিরের আয়োজক অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ, যার নেতৃত্বে বিজেপি সাংসদ শান্তনু এবং তাঁর দাদা, গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। দু’পক্ষের শিবির আলাদা। শান্তনুর শিবির থেকে হিন্দুত্বের যে পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে, তার রং গোলাপি। সুব্রতের শিবির থেকে দেওয়া কার্ডের রং হলুদ। জানা গেল, প্রথমে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পরিচয়পত্র তৈরি করতে হবে। সে জন্য একটি ছবি লাগবে, সঙ্গে ৬০-১০০ টাকা। সে পরিচয়পত্র অনেকটা এটিএম কার্ডের মতো। পরিচয়পত্র পেলে, হিন্দুত্বের শংসাপত্রের জন্য আবেদনের পালা। এ ক্ষেত্রে আধার কার্ড থাকলে সুবিধা। একটি ছবিও লাগবে। তার জন্যও ৬০-১০০ টাকা দিতে হচ্ছে। পরিচয়পত্র এবং শংসাপত্র হাতে পাওয়া ইচ্ছুকদের অনলাইনে সিএএ-তে আবেদন করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাবড়া থেকে আসা এক মহিলা বললেন, ‘‘২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আমার নাম আছে, স্বামীর নেই। আগেই মহাসঙ্ঘের পরিচয়পত্র পেয়েছি। আজ এসেছি হিন্দুত্বের শংসাপত্রের জন্য।’’

সুব্রত বলেন, ‘‘তিন মাসে ৫০ হাজারের মতো হিন্দুত্বের কার্ড এবং ৪৫ হাজারের মতো মতুয়া মহাসঙ্ঘের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। যাঁরা সিএএ-তে আবেদন করতে চাইছেন, তাঁদের আবেদন করে দেওয়া হচ্ছে।’’ শান্তনুর বক্তব্য, ‘‘এসআইআর-এ কোনও উদ্বাস্তু মতুয়ার নাম ভোটার তালিকা থেকে কাটা গেলে, সিএএ-র মাধ্যমে তাঁদের দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’’

শান্তনুর দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একই নামের অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর। তাঁর কথায়, ‘‘সিএএ ২০১৯ সালে পাশ হয়েছে। এত দিন কেন উদ্বাস্তু মতুয়াদের সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া হল না? মতুয়াদের শান্তনুরা ভাঁওতা দিচ্ছেন।’’ শান্তনু-শিবিরের অবশ্য দাবি, সিএএ-তে আবেদনের ভিত্তিতে মতুয়া উদ্বাস্তুদের অনেকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়েছেন। বনগাঁর পুরপ্রধান তৃণমূলের গোপাল শেঠ টাকার বিনিময়ে হিন্দুত্বের শংসাপত্র দেওয়ার বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব মহলে অভিযোগ করেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Matua Community Gaighata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy