Advertisement
০৫ মে ২০২৪

তৃণমূলের অন্দরে দ্বন্দ্ব জারি, বোমায় নিহত ২

দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চেষ্টা করছেন তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণে আনতে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন বার্তা। কিন্তু তাতে যে মুড়ি ভিজছে না, তারই ইঙ্গিত মিলল বর্ধমানের কেতুগ্রাম এবং বীরভূমের বোলপুরে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৮:৫০
Share: Save:

দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চেষ্টা করছেন তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণে আনতে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন বার্তা। কিন্তু তাতে যে মুড়ি ভিজছে না, তারই ইঙ্গিত মিলল বর্ধমানের কেতুগ্রাম এবং বীরভূমের বোলপুরে। কেতুগ্রামে মঙ্গলবার বোমা ফেটে প্রাণ গিয়েছে দু’জনের। পুলিশের অনুমান, গোষ্ঠী-লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে সেই বোমা বাঁধা চলছিল। বোলপুরের বাহিরিতে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভের পিছনেও দলেরই দুই নেতা— গদাধর হাজরা ও কাজল শেখ শিবিরের বিবাদের ছায়া দেখছেন অনেকে।

ঘটনা জেনে তৃণমূলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘দলনেত্রী বলে দিয়েছেন, ‘সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে’। সে কথা মেনে চলতে হবে সবাইকে।’’

কেতুগ্রাম লাগোয়া এলাকায় কুঁয়ে নদীর বাঁধ সংস্কার করছে মুর্শিদাবাদের কান্দি সেচ দফতর। বরাদ্দ হয়েছে ২৭ লক্ষ টাকা। সেখানে মাটি ফেলার কাজ কে করবে, তা নিয়ে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের দুই তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার সানোয়ার শেখ ও সুখচাঁদ শেখের মধ্যে বিবাদ বাধে। এক বার সংঘর্ষ হয়। তার পরে কাজের মূল ঠিকাদার ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের মধ্যস্থতায় দু’পক্ষ অর্ধেক করে কাজ পাবে বলে ঠিক হয়। কাজ শুরু হলেও সপ্তাহখানেক আগে ফের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ সুখচাঁদ ও সানোয়ারকে গ্রেফতার করে। তাঁরা এখন জেল-হাজতে।

চেঁচুড়ি গ্রামে মঙ্গলবার রাতে বোমা ফেটে প্রাণ খোয়ানো গোলাম মেহেবুব শেখ (২৪) ও বাবু মাঝি (৩৫) এলাকায় সুখচাঁদের অনুগামী তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। বাবু মাঝির ভাই চাঁদকুমার মাঝি বলেন, “দাদা তৃণমূল করত। বোমা বাঁধতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটেছে।” ভরতপুর ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি নুর আলমের দাবি, “সানোয়ার বা সুখচাঁদ আমাদের লোক নয়।’’ কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতা জাহের শেখও ঘটনাটি ‘গ্রামীণ বিবাদের’ জের বলে দাবি করেন।

শাসক দলের অন্দরে শিবির-রাজনীতির দৌলতে বিধানসভা ভোটে বীরভূমের নানুর আসনটি হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। সেখানে আগের বারের বিধায়ক গদাধর হাজরা হার মেনেছেন জোটের প্রার্থী সিপিএমের শ্যামলী প্রধানের কাছে। শ্যামলীদেবীর জয়ের পিছনে নানুরের দলীয় নেতা কাজল শেখের ‘অবদানের’ কথা উঠে এসেছে তৃণমূলের নিজস্ব সমীক্ষায়। তৃণমূল সূত্রের দাবি, নানুর
বিধানসভার বাহিরি-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এক সময়ে কাজল শেখের অনুগামী ছিলেন। এখন তাঁরা দলের যুব সভাপতি গদাধর হাজরার দিকে ঝুঁকেছেন। সেই সূত্রেই ঝামেলা।

এ দিন ১০০ দিনের প্রকল্পের জব-কার্ড ও পাসবই আটকে রেখে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রথমে স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়, পরে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখান কিছু তৃণমূল সমর্থক। গদাধর-অনুগামীদের ক্ষোভ, ‘‘পঞ্চায়েতে এ সব ঝামেলা তারাই করছে, যারা সিপিএমকে জিতিয়েছে।’’

কাজল-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ‘‘যারা ক্ষমতায় আছে, তারা খেতমজুরদের টাকা নিয়ে নয়ছয় করলে, মানুষ তো চটবেই।’’ তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও মেনেছেন, বাহিরি-পাঁচশোয়ায় ১০০ দিনের কাজ নিয়ে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। তিনি শুধু বলেন, ‘‘দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee tmc Crude bomb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE