Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Cyclone Amphan

আমপানের ক্ষতিপূরণে দুর্নীতি, খুন-পাল্টা খুনে উত্তপ্ত কুলতলি

অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্থের বদলে তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠদের পকেটে চলে যাচ্ছে সরকারি টাকা ও ত্রাণের জিনিসপত্র।

উত্তপ্ত কুলতলির মৈপীঠ এলাকা। তৃণমূলের এক নেতাকে খুনের পর, এসইউসিআই-এর এক নেতার বাড়ি জ্বালিয়ে তাঁকে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তপ্ত কুলতলির মৈপীঠ এলাকা। তৃণমূলের এক নেতাকে খুনের পর, এসইউসিআই-এর এক নেতার বাড়ি জ্বালিয়ে তাঁকে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২০ ১৯:৪৭
Share: Save:

আপমানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও দেখা যাচ্ছিল। এ বার সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির মৈপীঠ এলাকা। শুক্রবার রাতে তৃণমূলের এক নেতাকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করার পর, এসইউসিআই-এর এক নেতার বাড়ি জ্বালিয়ে তার চাল থেকে তাঁকে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ক্ষতিপূরণ বিলির ক্ষেত্রে শাসক দলের ওই এলাকার নেতাদের ভূমিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন এসইউসিআই নেতারা। অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্থের বদলে তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠদের পকেটে চলে যাচ্ছে সরকারি টাকা ও ত্রাণের জিনিসপত্র। প্রতিবাদে শামিল হন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। দফায় দফায় তাঁরা এ বিষয়ে মৈপীঠ কোস্টাল থানায় স্মারকলিপি জমা দেন। কিন্তু, তার কোনও প্রতিকার মিলছিল না। ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে মৈপীঠের তৃণমূল নেতা গোপাল মাঝির অনুগামী বলে পরিচিত অশ্বিনী মান্নাকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। এই ঘটনায় এসইউসিআই-এর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের। নাম জড়িয়ে যায় সুধাংশু জানা নামে এক ব্যক্তির। এই ঘটনার পরেই শনিবার একদল যুবক উত্তর বৈকুণ্ঠপুরে সুধাংশুর বাড়িতে হামালা করেন। লন্ডভন্ড করে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁর বাড়ি। এর পর ওই বাড়ি থেকেই ওই এসইউসিআই নেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এসইউসিআই কর্মীদের অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে লড়ছিলেন সুধাংশু। তাই তাঁকে এ ভাবে খুন করা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, অশ্বিনীকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে সুধাংশু এবং তাঁর অনুগামীরা। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাঁর বাড়িতে চড়াও হন। ভয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।

শনিবার দিনভর এই ঘটনায় উত্তপ্ত কুলতলির মৈপীঠ এলাকা। বারুইপুর জেলা পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে। এই ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশিও। ইতিমধ্যে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘কারা কারা ভোটে দাঁড়াতে চান, হাত তুলুন’, বৈঠকে দিদির গুগলি

এ বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রথমসারির নেতা ফিরহাদ হাকিমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “শুনেছি আমাদের একজন মারা গিয়েছেন। ঠিক কী হয়েছে জানি না। পরে বলব।” জেলার যুব তৃণমূল নেতা সওকত মোল্লা জানান, অশ্বিনীকে খুন করা হয়েছে। আরও কয়েক জনকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনায় এসইউসিআই জড়িত।

আরও পড়ুন: দেড় মাস পরে ‘যাচাই’, বঞ্চিত বহু ক্ষতিগ্রস্ত

অন্য দিকে, এই ঘটনার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন এসইউসিআই নেতা তরুণ নষ্কর। তিনি বলেন, “আমপানের পর পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল। ডেপুটেশন জমা দেওয়ার পর অশ্বিনীর বাইক বাহিনী মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন। জনরোষেই এই ঘটনা ঘটেছে।”

স্থানীয় সূত্রে খবর, সুধাংশু এসইউসিআই করলেও, মাস ছয়েক আগে গোপাল মাঝির হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি তাঁর অনুগামীরা। অশ্বিনী মান্না-সহ অন্যদের রোষানলে পড়েন সুধাংশু। এর পর তাঁকে আর তৃণমূল করতে দেখেননি স্থানীয়রা। আমপানের পর ত্রাণ বিলি নিয়ে মানুষের সমস্যাকে হাতিয়ার করে ফের এসইউসিআই-এর জমি শক্ত করতে ময়দানে নামে সুধাংশু। তা নিয়েই অশ্বিনীর সঙ্গে ফের শুরু হয় রেষারেষি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE