Advertisement
E-Paper

আমপানের এক মাস আজ: শুকোয়নি ক্ষত, তবু ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

সকলে হাতে কবে পৌঁছবে টাকা, কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে জীবন, জানেন না সুন্দরবনবাসী।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ০৫:৪৪
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ক্ষত এখনও দগদগে।

কোথাও দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে খড়ের চালার ঘর। কোথাও মুখ থুবড়ে পানের বরজ। ঠিক এক মাস আগে, ২০ মে সাগরের ধবলাট পঞ্চায়েতের এই ধবলাট শিবপুর গ্রামেই জলপথ ছেড়ে প্রথম আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আমপান। তারপর মাস পেরোলেও গ্রামের শ্রী ফেরেনি।

নিজের ভাঙা ঘর এখনও সারিয়ে উঠতে পারেননি স্বরূপ পাত্র। লকডাউনের সময়ে ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরে পড়েছেন আরও বড় বিপত্তিতে। জানালেন, পঞ্চায়েত থেকে একখানা ত্রিপল মিলেছে। ক্ষতিপূরণের তালিকায় নাম উঠেছে বলে জেনেছেন। কিন্তু টাকা চোখে দেখেননি। বললেন, ‘‘সব তছনছ হয়ে গিয়েছে। না পেলাম ক্ষতিপূরণ, না পাচ্ছি ত্রাণ। কোনও মতে এক-আধবেলা চেয়েচিন্তে খেয়ে দিন কাটছে।’’

আমপানের দিন পাঁচেকের মাথায় উত্তাল মুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে এলাকায় পা ফেলা গিয়েছিল। দুর্যোগের একমাসের মাথায় ফের গিয়ে দেখা গেল, জমিতে নোনা জল ঢুকে যাওয়ায় চাষবাস শুরু হয়নি। মাছের পুকুর নষ্ট হয়েছে। পানের বরজ এখনও শুয়ে আছে মাটিতে। মুরগির খামার ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে। অনেকের গবাদি পশু মারা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: লকডাউন শিথিল হতেই ফের খনন শুরু ইস্ট-ওয়েস্টে

পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সজল বারিক জানালেন, সরকারি ক্ষতিপুরের টাকা জেলা থেকে পাঠানো হচ্ছে। এলাকার ৪ হাজার পরিবারের বাড়ির সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছিল। নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত হাজার দেড়েক পরিবার টাকা পেয়েও গিয়েছে। বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডলের আশ্বাস, পর্যাক্রমে সব ক্ষতিগ্রস্তই টাকা পাবেন।

কিন্তু তত দিন কী ভাবে আছেন মানুষ, সে খোঁজ কে রাখে!

আমপানের পর থেকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশের এখনও এমনই হাল। ত্রাণ নিয়ে স্বজনপোষণ, দুর্নীতির অভিযোগে নানা জায়গায় ঘেরাও-বিক্ষোভ-অবরোধ চলছে। পাথরপ্রতিমা, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালির বহু গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ ফেরেনি। তা নিয়েও ক্ষোভ চরমে। পানীয় জলের সঙ্কট চলছে কোথাও কোথাও। কৃষিঋণ মকুবের দাবি ক্রমে জোরদার হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতির উপরে বড়সড় আঘাত হেনেছে আমপান। কৃষি ছাড়াও মাছ চাষের বড়সড় ক্ষতি হয়েছে। ভেড়ির পর ভেড়ি নোনা জল ঢুকে নষ্ট হয়েছে মাছ। ভেঙে যাওয়া নদীবাঁধে এখনও প্রলেপ পড়েনি সর্বত্র।

আরও পড়ুন: আমপানে স্বজনহারার যন্ত্রণা নিয়েই চলছে একার লড়াই

কেন্দ্র সরকারের কাছে ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে রাজ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে এসে এক হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক ভাবে দেওয়ার কথা জানিয়ে গিয়েছেন। রাজ্য সরকারও জানিয়েছে ইতিমধ্যে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন।

কিন্তু সকলে হাতে কবে পৌঁছবে টাকা, কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে জীবন, জানেন না সুন্দরবনবাসী। তবু তারই মধ্যে চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। ধবলাটের বাসিন্দা প্রহ্লাদ মাল ধারদেনা করে বাড়িতে অ্যাসবেস্টস লাগিয়েছেন। ইতিমধ্যে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন।

বাড়িতে বলে গিয়েছেন, ঝড়-জল যা-ই আসুক, খেয়েপরে বাঁচতে তো হবে!

Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy