Advertisement
E-Paper

সব খেয়ে নিল কালিন্দী, শুকনো খাবার চাইছে সাতরা

ভেসে ওঠার মরিয়া চেষ্টা চলছে সুন্দরবনের উত্তর থেকে দক্ষিণে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ১৫:৫৫
টিকে থাকার ন্যূনতম জিনিসগুলো চাই এখন সুন্দরবনের।

টিকে থাকার ন্যূনতম জিনিসগুলো চাই এখন সুন্দরবনের।

এক বুধবার জীবন লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল আমপান (প্রকৃত উচ্চারণে উম পুন)। ঠিক পরের বুধবার রাতে ফের হিম হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের বুক। কোনও পূর্বাভাস মেলেনি হাওয়া অফিস থেকে। হঠাৎ করেই জোর বৃষ্টি আর সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি, ভাঙা কপালে কী লেখা আছে— ভাবনা শুরু হয়েছিল দুরুদুরু বুকে। শেষ পর্যন্ত তেমন জোরালো কিছু হয়নি। তবু এই লন্ডভন্ড পরিস্থিতিতে এই ঝড়জলও তো বড় উৎপাতের মতোই। বৃহস্পতিবার সকালেও বৃষ্টি হয়েছে। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাষ দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। নতুন করে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণকর্মীরা।

এ সবের মধ্যে ভেসে ওঠার মরিয়া চেষ্টা চলছে সুন্দরবনের উত্তর থেকে দক্ষিণে। উত্তরে মূল জঙ্গল লাগোয়া দ্বীপ যোগেশগঞ্জের মাধবকাঠি, আমপানের তাণ্ডবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর একটা। আড়াইশোর মতো পরিবার। রায়মঙ্গলের বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে সবার ভবিষ্যৎ। একই অবস্থা নিকটবর্তী গ্রাম মালেকানগুমটির। দেড়শোর মতো পরিবার এখানে। এই দুই গ্রামেই ভাঙা বাঁধ অস্থায়ী ভাবে হলেও ফের তুলে ফেলা গিয়েছে এর মধ্যে। ফলে নতুন করে জোয়ারের জল আর ঢুকছে না। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ মোটামুটি পৌঁছচ্ছে। কিন্তু এর উল্টো ছবিও রয়েছে অনেক জায়গাতেই।

হাসনাবাদের খাঁপুকুর এবং তৎসংলগ্ন গ্রামগুলো এখনও জলে ডোবা। বাঁধ ভাঙা অবস্থাতেই রয়েছে। ভাণ্ডারখালির কাছে শীতলিয়া গ্রামেরও এক ছবি। নদীর সঙ্গে সঙ্গে এখনও জোয়ার-ভাটা খেলছে এই সব এলাকায়।

জল নামার পরও বিপন্ন বহু মানুষের ভবিষ্যৎ।

বেশ খারাপ অবস্থা দুলদুলির চরসাহেবখালি সাতরায়। ২৯৫ পরিবারের বাস এখানে। কালিন্দীর বাঁধ ভেঙে গত ২২ তারিখ সব ভেসে গিয়েছে। মঙ্গলবার যোগেশগঞ্জের হেমনগর থেকে পরিস্থিতি দেখতে দেখতে এখানে পৌঁছন আমপান রিলিফ নেটওয়ার্কের সদস্য সৌভিক মিস্ত্রি। তাঁর থেকে জানা গেল, সরকারি ত্রাণ পৌঁছেছে। চিড়ে-গুড়-জলের পাউচ স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যদের উদ্যোগে দেওয়াও হয়েছে কিছু কিছু। কিন্তু প্রয়োজন আরও বেশি। “জল নামেনি। গ্রামের লোকজন জানালেন জোয়ারের সময় গলা সমান জল উঠে যাচ্ছে,”— বললেন সৌভিক। তাঁর কথায়, “শুকনো খাবারদাবার পাঠান দাদা, এমনটাই বারবার বলছিলেন সে গ্রামের মানুষ।”

আরও পড়ুন: মুরগির খামারে মাথা গুঁজেছেন সায়রা

সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বহু বেসরকারি এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগও ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিপন্ন মানুষদের পাশে। বৃহস্পতিবার ঝড়জল মাথায় নিয়েই উত্তর ২৪ পরগনার পাটলিখানপুর দ্বীপে পৌঁছেছে দুর্গাপুরের একটি দল। এক দিকে ডাঁসা, অন্য দিকে গৌরেশ্বরের বাঁধ ভেঙে এই দ্বীপের মহিষপুকুর, ঘেরিপাড়া, চকপাটলি-সহ বিভিন্ন গ্রামের হাজার দুয়েক পরিবার প্লাবনের শিকার। দুর্গাপুর থেকে রাজেশ সেন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে এ দিন ট্রাকে করে ৫০০ প্যাকেট খাবারদাবার-সাবান-জিওলিন ইত্যাদি নিয়ে গিয়েছেন ঘেরিপাড়ায়। এখানে শ-পাঁচেক পরিবারেরই বাস।

আরও পড়ুন: অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আর কত দিন কষ্টে কাটবে

“একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম। এত মানুষ বিপন্ন, তার মধ্যে ৫০০ প্যাকেট নিয়ে গিয়ে কাড়াকাড়ির মধ্যে পড়ে যাব না তো! গিয়ে বুঝলাম ভুল ভেবেছিলাম। ওখানকার মানুষই কাঁধে-মাথায় করে সব ভারী মোট তিন কিলোমিটার হেঁটে আমাদের নিয়ে গেলেন গ্রামে। সবটাই সুশৃঙ্খল ভাবে। কেউ আগে ভাগে কিছু পাওয়ার জন্য দৌড়ে আসেননি। এমন মনুষ্যত্বের ছবি দেখে আমরা অভিভূত। কিছু দিতে এসেছিলাম। নিয়ে গেলাম অনেক বেশি কিছু,”— টেলিফোনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন রাজেশবাবু।

তবে আপাতত এখনও বাইরের সাহায্যের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে সুন্দরবনকে। কত দিন থাকতে হবে কেউ জানে না। খাবার চাই, জল চাই, জামাকাপড় চাই, ত্রিপল চাই... টিকে থাকার ন্যূনতম জিনিসগুলো চাই এখন সুন্দরবনের। আর চাই দ্রুত বাঁধ মেরামতি। জল না গেলে নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টাটাও তো করা যাবে না। আর জল নামার পরও কৃষিজমির অবস্থা কী দাঁড়াবে কে জানে! নোনা জল কত বছরের জন্য উর্বরতা কেড়ে নেবে, তার উপরও অনেকটা নির্ভর করে আছে সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ‌।

ছবি: সৌভিক মিস্ত্রি।

Sundarbans Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy