Advertisement
২৪ মে ২০২৪

শুকনো হাওয়া গিলে কুমির ল্যাজেগোবরে

ফিরতি বর্ষার ধাক্কা তার গতিপথকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। এ বার সাগরপাড়ি দিতে দিতে কার্যত লেজেগোবরে অবস্থা বঙ্গোপসাগরের ‘কুমিরের’! যার পিছনে শুকনো উত্তুরে হাওয়াকেই দায়ী করছেন আবহবিজ্ঞানীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

ফিরতি বর্ষার ধাক্কা তার গতিপথকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। এ বার সাগরপাড়ি দিতে দিতে কার্যত লেজেগোবরে অবস্থা বঙ্গোপসাগরের ‘কুমিরের’! যার পিছনে শুকনো উত্তুরে হাওয়াকেই দায়ী করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, শুকনো উত্তুরে হাওয়া গিলে ফেলেই বেকায়দায় পড়েছে কুমির। সাগরের উপরেই সে প্রাণ হারাবে কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।

মৌসম ভবন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় কিয়ান্ত শক্তি খুইয়ে অতিগভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল। এবং ক্রমাগত শক্তি কমছে তার। আজ, শুক্রবার সে সাদামাটা নিম্নচাপের চেহারা নেবে বলেই মৌসম ভবনের পূর্বাভাস।

কিয়ান্ত নামটি মায়ানমারের দেওয়া। সে দেশের মোন উপজাতির ভাষায় এর অর্থ কুমির। বুধবার আবহবিদেরা বলেছিলেন, অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর এবং ওঙ্গোলের মাঝামাঝি কোনও জায়গা দিয়ে ডাঙায় উঠবে কুমির। কিন্তু শক্তি খোয়ানোর জেরে এ দিন কুমিরের ডাঙায় ওঠা নিয়েও ফের ধন্দ তৈরি হয়েছে। আবহবিদদের কেউ কেউ বলছেন, দুর্বল হতে হতে সাগরের উপরেই মিলিয়ে যেতে পারে সে।

গোড়ার দিকে কুমির মায়ানমারে যেতে যেতে বাঁক নিয়ে ওড়িশা-বাংলা উপকূলের দিকে মুখ ঘুরিয়েছিল। কিন্তু এ দিকে আসা হয়নি তার। আবহবিদেরা জানান, ফিরতি বর্ষা বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুই তাকে দক্ষিণ ভারতের দিকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল। সে দিকে যাওয়ার পথে বুধবার গভীর রাত থেকে আচমকা শক্তি খোয়াতে শুরু করে সে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে যায় তার ‘চেহারা’।

জীবকূলে নোনা জলের

কুমিরের হিংস্র স্বভাব ‘বিখ্যাত’। বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের কুখ্যাতিও কম নয়। তা এ হেন ‘কুমির’ নামধারী সাগরের ঘূর্ণিঝ়ড়ের এমন বেহাল দশা হল কী ভাবে?

মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের ব্যাখ্যা, মধ্য ভারত থেকে সাগরের উপরে শুকনো উত্তুরে হাওয়া বয়ে এসেছে। সেই শুকনো হাওয়া ঢুকে পড়েছে কিয়ান্তের ভিতরে এবং তা ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে থাকা জলীয় বাষ্পকে শুষে নিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। ক্রমশ আরও দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে কিয়ান্ত। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, সাধারণত সাগরের উপরে থাকার সময় জোলো হাওয়া শুষে শক্তি বাড়াতে থাকে ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু এ বার মধ্য ভারত থেকে বয়ে যাওয়া শুকনো হাওয়ার দাপট এতটাই যে জোলো হাওয়া শুষেও সামলাতে পারছে না সে। কুমিরের লেজের ঝাপ্টায় কালীপুজোর আগে আচমকাই বিগড়ে গিয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া। বুধবার সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ঢুকতে শুরু করেছিল। রাতে বহু জায়গায় বৃষ্টিও হয়েছে। এ দিনও আকাশের মেঘ কাটেনি। কারণ, কুমির দুর্বল হওয়ার আগেই লেজের ঝাপ্টা দিয়েছিল এ রাজ্যের গায়ে। তার ফলেই আবহাওয়ার এই পটপরিবর্তন।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস এ দিন জানান, কিয়ান্তের পরে সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢুকছে। তার উপরে বঙ্গোপসাগর থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখাও তৈরি হয়েছে। ফলে আজ, শুক্রবারও হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে কালীপুজোয় সুসংবাদ রয়েছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, কালীপুজোয় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা কম। বড়জোর হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kiante cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE