প্রতীকী ছবি।
আশঙ্কা ছিল, ৩০-৩৫ হাজার। কিন্তু, রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তা এবং চিকিৎসকদের একাংশের এখন মনে হচ্ছে, সেখানেই থেমে থাকবে না সংক্রমণ। বরং চলতি মাসে, আর কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছতে পারে ৫০ হাজারে।
রাজ্যে সংক্রমণের মাত্রা গত কয়েক দিন ধরে যে গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এখন এমন সিঁদুরে মেঘ দেখছেন খোদ সরকারি স্বাস্থ্য কর্তারাই। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “ভাবগতিক মোটেই সুবিধার নয়। একটা বাড়িতে করোনা ঢুকলে প্রায় সকলেই আক্রান্ত হচ্ছেন। তাতে সংক্রমিতের সংখ্যা হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। ফলে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫-৫০ হাজার হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।” সূত্রের খবর, বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে দৈনিক যে আরটিপিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে, তাতে অন্তত ৮০-৮৫ শতাংশ পজ়িটিভ আসছে। শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, “এখন বহু মানুষ যেমন আক্রান্ত হচ্ছেন, তেমনই প্রচুর পরীক্ষাও করা হচ্ছে। আবার কলকাতার পজ়িটিভিটি রেট প্রায় ৪৪ শতাংশ। সেখানে আগামী দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকেই যায়।”
চিকিৎসকেরা এটাও জানাচ্ছেন, করোনার সংক্রমণ এখন এক-একটি ক্লাস্টার (পারিবারিক সংক্রমণ) ধরে হচ্ছে। আর তাই যত পরীক্ষা হচ্ছে, পজ়িটিভের সংখ্যাও ততই বাড়ছে। শহরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শীর্ষ কর্তা, চিকিৎসক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এক-একটি পর্বে ১০০টি নমুনা পরীক্ষা হলে অন্তত ৪২-৪৩টি তো পজ়িটিভ হচ্ছেই। কখনও তারও বেশি আসছে। তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এখন ক্লাস্টারে হানা দিয়েছে ভাইরাস।”
বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ বুধবার রাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪২১ জন। মঙ্গলবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২২ জন। ওই দিন করোনা পরীক্ষা ও আক্রান্তের আনুপাতিক হার অনুযায়ী পজ়িটিভিটি রেট ছিল ২৩.১৭ শতাংশ। বুধবার তা বেড়ে হয়েছে ২৪.৭১ শতাংশ। ওই দিন করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ৬২ হাজার ৪১৩ জনের। মঙ্গলবার অবশ্য সংখ্যাটি ছিল ৬০ হাজার ৫১১। এই পরিসংখ্যান থেকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তা থেকেই প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা বোঝা যাবে। এ দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় বুধবার আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৬৯ জন। অর্থাৎ রাজ্যের মোট আক্রান্তের মধ্যে কলকাতার বাসিন্দা ৪২.৬ শতাংশ।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি)-র ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ওমিক্রনের আর-নট ভ্যালু অর্থাৎ সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। তার ফলেই এত দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ, আগে সংক্রমিত হওয়ার কমপক্ষে ৩-৪ দিন পরে উপসর্গ দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু এখন সেটি কিছুটা হলেও বদল হয়েছে। তাঁর কথায়, “এখন সংক্রমিত হওয়ার এক-দুই দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। রোগটাও খুব বেশি দিন থাকছে বলে
মনে হচ্ছে না।” তবে শরীরে থাকা আগের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহজেই কাটিয়ে ওমিক্রন প্রবেশ করতে পারছে বলেও পর্যবেক্ষণ দীপ্যমানের। তিনি-সহ অন্যান্য চিকিৎসকেরাও জানাচ্ছেন, স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা কাজ করছে না বলেই বোঝা যাচ্ছে। তার ফলেই টিকাকরণের পরেও উপসর্গ নিয়েই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু টিকা নেওয়ার ফলে অনেক ‘টি-সেল’ ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। সেটাই সম্ভবত রোগটাকে মারাত্মক হতে দিচ্ছে না বলে আপাতত মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
ওমিক্রন কিংবা ডেল্টার মিউটেশন হয়ে তৈরি হওয়া নতুন প্রজাতির কারণে যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক কম। তা আপাতত ইতিবাচক ইঙ্গিত হলেও তার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী কি না, তা বুঝতে আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে চাইছে চিকিৎসকমহল। পাশাপাশি ওমিক্রনকে এখনই দুর্বল বলে মনে করতে নারাজ অধিকাংশ
চিকিৎসক ও গবেষকেরা। পিয়ারলেস হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (রিসার্চ)-এর অধিকর্তা চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের কথায়, “করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের বিষয়টি এখন সকলেই জানেন। কোভিড মুক্ত হয়েও, ফুসফুস, লিভার-সহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে বহু মানুষকে। তাই মাত্র ৪২ দিন বয়সের নতুন এই ভেরিয়েন্টের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কতটা, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত ভাবে মন্তব্য করা ঠিক নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy