Advertisement
E-Paper

বিপদ সামনে, দু’বছর আগেই বলেছিল ব্যাঙ্ক

শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়। বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার অবৈধ কাজ-কারবার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আগাম সতর্ক করেছিল রাজ্য পর্যায়ের ব্যাঙ্কার্স কমিটি (এসএলবিসি)-ও। এবং ২০১২-র সেপ্টেম্বরে কমিটির যে বৈঠকে রাজ্যকে সাবধান করা হয়, সেখানে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র স্বয়ং হাজির ছিলেন! সারদা-কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, রাজ্যে বেআইনি লগ্নি ব্যবসার রমারমার বিষয়টি তাঁর গোচরে এসেছে ২০১৩-র পয়লা বৈশাখের (১৪ এপ্রিল) পরে।

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৮

শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়। বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার অবৈধ কাজ-কারবার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আগাম সতর্ক করেছিল রাজ্য পর্যায়ের ব্যাঙ্কার্স কমিটি (এসএলবিসি)-ও। এবং ২০১২-র সেপ্টেম্বরে কমিটির যে বৈঠকে রাজ্যকে সাবধান করা হয়, সেখানে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র স্বয়ং হাজির ছিলেন!

সারদা-কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, রাজ্যে বেআইনি লগ্নি ব্যবসার রমারমার বিষয়টি তাঁর গোচরে এসেছে ২০১৩-র পয়লা বৈশাখের (১৪ এপ্রিল) পরে। তার আগে এ সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। বাস্তব যদিও অন্য কথা বলছে। তথ্য ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এসএলবিসি’র তরফে ২০১২-র সেপ্টেম্বরেই সম্ভাব্য বিপদটির দিকে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সে বছরের সেপ্টেম্বরে আয়োজিত কমিটির সভায় খোদ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর সামনে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (ইউবিআই)-র তদানীন্তন চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর (সিএমডি) ভাস্কর সেন বলেছিলেন, “গ্রামীণ শাখা সূত্রে খবর মিলছে, ভবিষ্যতের অবাস্তব আশ্বাস দিয়ে কিছু নন-ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান গ্রামের মানুষজনের কাছ থেকে টাকা তুলছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এ নিয়ে সাবধান হওয়া দরকার।”

প্রসঙ্গত, ভাস্করবাবুই সে সময় এসএলবিসি-র চেয়ারম্যান। এবং তাঁর ব্যাঙ্ক ইউবিআই রাজ্যের ‘লিড’ ব্যাঙ্ক।

এমতাবস্থায় রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওঁর মুখে এ হেন সতর্কবাণীকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূণর্র্ হিসেবে দেখছেন ব্যাঙ্ক-কর্তারা। ওঁঁদের দাবি ভাস্করবাবুর বক্তব্যটি সভার কার্যবিবরণীতেও লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। ফলে ঘটনাটা রাজ্য সরকার জানত না এমন যুক্তি আদৌ ধোপে টেকে না। “রাজ্য প্রশাসন যদি হুঁশিয়ারি শুনে তখনই অবৈধ লগ্নিসংস্থার পায়ে বেড়ি পরানোর চেষ্টা করত, তা হলে হয়তো বহু মানুষকে বাঁচানো যেত সর্বনাশের কবল থেকে।” মন্তব্য এক পদস্থ ব্যাঙ্ক-আধিকারিকের।

বস্তুত ব্যাঙ্ক-কর্তাদের অনেকের দাবি: রাজ্যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিরাট অংশ যে পথে বসতে চলেছেন, ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্ত দেখে তাঁরা তার আগাম আঁচ পেয়েছিলেন। ওঁদের বক্তব্য: ২০১১-র মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল যখন ক্ষমতায় এল, তার কিছু আগে থেকেই ব্যাঙ্কে-ব্যাঙ্কে গৃহস্থ-আমানতের বহর কমতে শুরু করেছে। কারণ অনুসন্ধান করতে দিয়ে ধরা পড়ে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একটা বড় অংশের সামনে অবাস্তব সুদের টোপ ঝুলিয়ে টাকা তুলছে সারদা-সহ বেশ কয়েকটি অর্থলগ্নি সংস্থা। ঠিক হয়, এসএলবিসি-র বৈঠকে প্রসঙ্গটি তোলা হবে।

সেই মতো ২০১২-র ২৫ সেপ্টেম্বরে আয়োজিত এসএলবিসি-বৈঠকে প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়, যেখানে ভাস্করবাবু প্রশাসনকে সতর্ক করেন। ব্যাঙ্ক-সূত্রের খবর: বৈঠকটিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি আসেননি। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু। হাজির ছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং জাতীয় কৃষি-গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক (নাবার্ড)-এর শীর্ষ প্রতিনিধিরাও। দু’বছর আগের ওই বৈঠক সম্পর্কে ভাস্করবাবু বলছেন, “ওখানে অর্থমন্ত্রীকে এ-ও জানিয়েছিলাম যে, ব্যাঙ্কে আমানতের পরিমাণ কমেছে।”

কিন্তু তার পরেও রাজ্য সরকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় তৎপর হয়নি বলে ব্যাঙ্ক-কর্তাদের একাংশের অভিযোগ। উপরন্তু ধোঁয়াশা, ২০১২-র সেপ্টেম্বরে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী সব জেনে যাওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে বললেন যে, তিনি ২০১৩-র এপ্রিলের আগে কিছু জানতেন না? প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি অর্থমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে ঠিকঠাক অবহিত করেননি? নাকি সব জেনে-শুনেও ‘প্রভাবশালীদের’ চাপে কেউ মুখ খোলেননি?

অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যা কী?

জানার উপায় নেই। কারণ মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে অমিতবাবু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এ নিয়ে কোনও কথা বলবেন না। রাজ্যের অর্থ-সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

saradha scam sudipto sen debjani shyamal sen commission cbi ashok sengupta state news online news online state news latest online new
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy