Advertisement
E-Paper

‘মৃত্যুকুম্ভ’ প্রশ্ন জিইয়ে রাখতে শুভেন্দুর মিছিলের আগের দিন হঠাৎ আসরে সুকান্ত, অবরোধ কলকাতায়

সুকান্ত মজুমদার যে বিকেলে পথে নামবেন, বুধবার সকাল পর্যন্তও তার কোনও আভাস ছিল না। বেলা ১২টা নাগাদ আচমকাই রাজ্য বিজেপির তরফে জানানো হয় যে, মুখ্যমন্ত্রীর ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্যের প্রতিবাদে রাজ্য বিজেপির সভাপতি পথে নামছেন।

Day before Suvendu’s rally, Sukanta hits Kolkata street, Blocks road to protest Mamata’s ‘Mrityu-Kumbh’ comment

(বাঁ দিকে) মঙ্গলবার রণংদেহি শুভেন্দু। বুধে অবরোধ সুকান্তের (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:১৭
Share
Save

রাজ্যপাল না-থাকায় এক দিন পিছিয়ে গিয়েছিল বিজেপির প্রতিবাদ কর্মসূচি। কিন্তু মাঝের দিনটায় যাতে বিষয়টি ঝিমিয়ে না-যায়, তাই আচমকা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হল। বিকেলের ব্যস্ত সময়ে আধ ঘণ্টারও বেশি অবরোধ করে রাখা হল উত্তর কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত মোড়। মুখ্যমন্ত্রীর ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্যকে বিজেপি যে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চায় না, তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল বুধবার।

মুখ্যমন্ত্রীর ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবারই রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতারা তো বটেই, কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষকও তোপ দেগেছিলেন। বৃহস্পতিবার বিধানসভা থেকে রাজভবন পর্যন্ত বিধায়কেরা প্রতিবাদ মিছিল করবেন বলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল না। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার যে বিকেলে পথে নামবেন, বুধবার সকাল পর্যন্তও ছিল না তার কোনও আভাস। বেলা ১২টা নাগাদ আচমকাই রাজ্য বিজেপির তরফে জানানো হয় যে, মুখ্যমন্ত্রীর ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্যের প্রতিবাদে রাজ্য বিজেপির সভাপতি পথে নামছেন। মহাত্মা গান্ধী রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে বিজেপির তরফে ঘোষণা করা হয়।

Day before Suvendu’s rally, Sukanta hits Kolkata street, Blocks road to protest Mamata’s ‘Mrityu-Kumbh’ comment

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও মহাত্মা গান্ধী রোডের সংযোগস্থলে সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে অবরোধ। —নিজস্ব চিত্র।

এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মূলত উত্তর কলকাতা জেলা কমিটিকে। জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ সেই নির্দেশ অনুযায়ী বিক্ষোভস্থলে জমায়েতের ব্যবস্থা করেন। তবে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা কলকাতার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র মীনাদেবী পুরোহিত এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজল ঘোষ বিক্ষোভস্থলে পৌঁছোনোর আগে পর্যন্ত ভিড় সে ভাবে জমেনি। মীনা ও সজল পৌঁছতেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। বিকেল ৪টে নাগাদ মহাত্মা গান্ধী রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে পৌঁছোন সুকান্ত। সঙ্গে সঙ্গে সব ক’টি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা। মহাকুম্ভ থেকে আনা জলের ছোট কলসি হাতে নিয়ে সুকান্ত বিক্ষোভে শামিল হন।

এমনিতেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ কলকাতার সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তাগুলির অন্যতম। তার উপরে বিকেল ৪টে। স্কুল-কলেজ, অফিসকাছারি ছুটির সময়। ফলে রাস্তায় যানবাহন আরও বেশি। সেই রকম সময়ে অবরোধ শুরু হওয়ায় প্রায় গোটা উত্তর কলকাতায় তার প্রভাব পড়ে। শিয়ালদহ এবং হাওড়ার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা মহাত্মা গান্ধী রোডও বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের বিভিন্ন ক্রসিং থেকে পুলিশ অন্যান্য রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে দিতে শুরু করে। যথেষ্ট সংখ্যক বাহিনী মোতায়েন ছিল। পুলিশ বলপ্রয়োগের রাস্তাতেও হাঁটেনি। প্রায় ৩৫ মিনিট অবস্থান বিক্ষোভ চালানোর পরে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। সুকান্তের নেতৃত্বে মিছিল করে বিজেপি কর্মীরা ফিরে যান মুরলীধর সেন লেনের দলীয় কার্যালয়ের দিকে।

মঙ্গলবার বিধানসভায় বক্তৃতা করার সময় মুখ্যমন্ত্রী মহাকুম্ভ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মহাকুম্ভ আমি না-ই বা বললাম! ওটা এখন মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুকূপের মতো।’’ তবে এক নিঃশ্বাসেই মমতা বলেন, ‘‘আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি। শ্রদ্ধা জানাই। পবিত্র গঙ্গা মাকে আমি সম্মান করি। কিন্তু পরিকল্পনা না-করে এত হাইপ তুলে এত লোকের মৃত্যু! বললেন ৩০ জন। কথাটা কি সঠিক? কত মৃতদেহ ভাসিয়ে দিয়েছেন নদীতে? কত? হাজার হাজার!’’

প্রত্যাশিত ভাবেই মমতার বক্তব্যের শেষাংশ (মহাকুম্ভকে সম্মান করা, শ্রদ্ধা জানানো) বাদ দিয়ে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ শব্দবন্ধটি নিয়েই মঙ্গলবার থেকে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। সোমবার থেকে এমনিতেই মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারকে ‘হিন্দু-বিরোধী’ বলে আক্রমণ করছিলেন শুভেন্দু-সহ বিজেপির অন্য বিধায়কেরা। মঙ্গলবার বিরোধীদলহীন সভাকক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর ‘মৃত্যুকুম্ভ’ শব্দবন্ধ ব্যবহারের বিষয়টি জেনে বিজেপি তাদের হাতিয়ারে আরও শান দিতে শুরু করে। শুভেন্দু, সুকান্ত তো বটেই, কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেন। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানানোর তোড়জোড় শুরু করে পরিষদীয় দল। কিন্তু রাজভবন থেকে খবর আসে যে, রাজ্যপাল বুধবার পর্যন্ত বাইরে থাকছেন। তাই বৃহস্পতিবার সময় চেয়ে নেওয়া হয়। শুভেন্দু ঘোষণা করে দেন, বৃহস্পতিবার প্রথমে বিধানসভা চত্বরে মিছিল করবেন বিজেপি বিধায়কেরা। তার পর সেই মিছিল রাজভবনে যাবে। মহাকুম্ভকে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ বলা এবং বিরোধী দলনেতা-সহ চার বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাবেন।

বিজেপি সূত্রের খবর, বিধায়কদের মিছিল যে হেতু বৃহস্পতিবার, তাই বুধবার পুরোপুরি চুপ করে বসে না-থাকার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্য সভাপতি। শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিধায়কেরা যে দিন রাজ্যপালের কাছে যাবেন, তার আগের দিনও ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে তিনি নিজেই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন। রাজ্যপালকে সুকান্ত বুধবার চিঠিও লিখেছেন। তাতেও শুভেন্দুর সুরেরই প্রতিধ্বনি। মুখ্যমন্ত্রীর ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্য এবং বিরোধী দলনেতা-সহ ৪ বিজেপি বিধায়ককে ‘অন্যায় ভাবে’ সাসপেন্ড করার প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন তিনি।

বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়ার্ধে মিছিল হবে বিধানসভায়। তার পর সেখান থেকে হেঁটেই রাজভবনে যাবেন বিধায়কেরা।

Road blockade Sukanta Majumdar Mamata Banerjee Suvendu Adhikari Maha Kumbh 2025 West Bengal Politics

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}