Advertisement
১১ মে ২০২৪

ঝিলে ডুবে মৃত্যু, তদন্তে বেরোল খুন

ঘটনাটি ঘটেছিল গত মে মাসের ৭ তারিখ। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি অতিরিক্ত মদ্যপান করার পরে ঝিলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বলে মনে হওয়ায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ।

আদালতের পথে ধৃতেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

আদালতের পথে ধৃতেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০৩:১৬
Share: Save:

বন্ধুর ফোন পেয়ে স্কুটার নিয়ে গড়িয়া থেকে হাওড়ার কামরাডাঙায় ছুটে এসেছিলেন তুষার ঘোষ নামে এক যুবক। এর পরে পাঁচ বন্ধু ও এক বন্ধুর প্রেমিকার সঙ্গে তিনি গিয়েছিলেন মুম্বই রোডের সলপ এলাকার একটি পানশালায়। সেখানে রাত পর্যন্ত আকণ্ঠ মদ্যপান করেছিলেন তাঁরা। এর পরের দিন সকালে তুষারের দেহ ভাসতে দেখা গিয়েছিল সলপ থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে জগাছার সরকারি প্রেস কোয়ার্টার্সের ভিতরের একটি ঝিলে। তাঁর সঙ্গে থাকা স্কুটারটি যেমন উধাও হয়ে গিয়েছিল, তেমনই মিলছিল না দামি মোবাইল-সহ তাঁর দু’টি সোনার আংটি এবং নগদ ১০ হাজার টাকা।

ঘটনাটি ঘটেছিল গত মে মাসের ৭ তারিখ। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি অতিরিক্ত মদ্যপান করার পরে ঝিলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বলে মনে হওয়ায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। টানা এক মাস তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, তুষার ঘোষ নামে বছর উনত্রিশের ওই যুবকের মৃত্যু মদ্যপান করে ঝিলে পড়ে গিয়ে হয়নি, বরং তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে ঝিলে ঠেলে ফেলে দিয়ে খুন করা হয়েছে। খুনের উদ্দেশ্য ছিল ছিনতাই। পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে খুনের অভিযোগে কামারডাঙা ও ডুমুরজলা আবাসন থেকে তিন তরুণ ও এক তরুণীকে গ্রেফতার করেছে জগাছা থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা খুনের অভিযোগ স্বীকার করেছে। ধৃতদের নাম শুভম অধিকারী, সুগত মাকাল, প্রেম সাউ এবং রিয়া ভট্টাচার্য। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বয়স ১৮ থেকে ২১-এর মধ্যে। অভিযুক্ত আর এক জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গড়িয়ার বাসিন্দা তুষারের সঙ্গে ধৃত তরুণদের দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। সেই সূত্রে প্রায়ই কামারডাঙার বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের মদ্যপানের আসর বসত। তদন্তকারীদের দাবি, সেই আসরে বেশি টাকা খরচ করতেন তুষারই। পুলিশ জানায়, তুষার তেমন কোনও কাজ না করলেও বাবা রেলের পদস্থ কর্মচারী হওয়ায় তাঁর টাকার অভাব ছিল না। পকেটে সব সময়েই ৮-১০ হাজার টাকা থাকত। ধৃতেরা সকলেই সে কথা জানত। তাই বেকার শুভম, সুগত, প্রেমরা তুষারকে ‘ফান্ড ব্যাঙ্ক’ হিসেবে ব্যবহার করত। পুলিশের দাবি, মৃত যুবকের মহিলা সঙ্গের প্রতি আসক্তি ছিল। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছিল ধৃতেরা।

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন, গত ৬ মে সুগত ফোন করে এক তরুণীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবে বলে তুষারকে ডেকে আনে। এর পরে সলপের একটি পানশালায় নিজের প্রেমিকার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় তুষারের। এমনকি অভিযোগ, ওই তরুণীকে তুষারের ঘনিষ্ঠ হতেও বাধ্য করে সুগত। সে সময়ে উপস্থিত ছিল বাকিরাও। পুলিশ জানায়, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে পানশালায় মদ্যপান করার পরে তারা সলপের ভিতরের পথ ব্যবহার করে চলে আসে জগাছার সরকারি প্রেস কোয়ার্টার্সের ভিতেরর ওই ঝিলের পাশে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, সেখানেও ফের আর দফায় মদ্যপান করানো হয় তুষারকে। এর পরে সম্পূর্ণ বেহুঁশ হওয়ার পরে তাঁর আংটি, টাকা, মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাঁকে ঠেলে জলে ফেলে দেওয়া হয়।

কিন্তু পুলিশ কী করে এই খুনের কিনারা করল?

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র প্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমেই তদন্তকারীদের সন্দেহ হয়, ওই যুবক জলে ঢুবে মারা গেলেও তাঁর স্কুটার ও মোবাইল কোথায় গেল। ওই দু’টি জিনিসের খোঁজ করতেই মোবাইল নম্বরের টাওয়ার লোকেশন দেখা শুরু হয়। ঘটনার দিন মোবাইলে কাদের সঙ্গে ওই যুবকের কথা হয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়। এর পরে কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ করেই বেরিয়ে আসে, ঘটনাটি পরিকল্পিত খুন।’’

তদন্তকারীরা জানান, খোয়া যাওয়া স্কুটার, মোবাইল ও নগদ ১০ হাজার টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। এ দিন ধৃতদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে হাওড়া আদালতে তোলা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পরে ফের ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drownig Dead Alcohol Lake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE