Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধুদের কাঁধে বাড়ি ফিরলেন নিথর কুন্তল

তিনি, কাঞ্চজঙ্ঘায় চিরঘুমে তলিয়ে যাওয়া হাওড়ার আর এক সন্তান। এভারেস্টজয়ী কুন্তল কাঁড়ার।

বিদায়: বাড়িতে এল কুন্তল কাঁড়ারের দেহ। হাওড়ার অন্নপূর্ণা ক্লাবের মাঠে তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন পড়শি ও আত্মীয়েরা। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বিদায়: বাড়িতে এল কুন্তল কাঁড়ারের দেহ। হাওড়ার অন্নপূর্ণা ক্লাবের মাঠে তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন পড়শি ও আত্মীয়েরা। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে যাওয়ার আগে পর্বতারোহী অন্য বন্ধুদের বলে গিয়েছিলেন, শৃঙ্গ জয় করে করবেন। ফিরে সবাই মিলে আবার নতুন অভিযানের প্রস্তুতি নেবেন। কথা মতো তিনি ফিরলেন। তবে কফিনবন্দি হয়ে।

তিনি, কাঞ্চজঙ্ঘায় চিরঘুমে তলিয়ে যাওয়া হাওড়ার আর এক সন্তান। এভারেস্টজয়ী কুন্তল কাঁড়ার। ঠিক পাঁচ বছর আগে কাঞ্চনজঙ্ঘায় ছন্দা গায়েনের হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে যেমন মুষড়ে পড়েছিল গোটা শহর, তেমনই রবিবার কুন্তলের দেহ আসার পরে পাল্টে গিয়েছিল ছুটির সকালটা। সব ভুলে ফুল, মালা আর চোখের জলে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পথে নেমেছিলেন বন্ধুবান্ধব এবং স্থানীয় মানুষজন।

কাঠমান্ডু থেকে কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে পিস হেভনে কুন্তলের মরদেহ পৌঁছনোর খবর শনিবার রাতেই জেনে গিয়েছিলেন সকলে। যে ক্লাবে কুন্তলের পর্বতারোহণের হাতেখড়ি, সেই ক্লাব-সহ তাঁর পাড়ার ক্লাব এবং বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের সদস্যেরা এ দিন তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকে প্রস্তুত ছিলেন। ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন বাবা চণ্ডীচরণ কাঁড়ার ও মা নমিতা কাঁড়ার।

এ দিন সকাল পৌনে সাতটায় পিস হেভন থেকে রাজ্য যুবকল্যাণ দফতরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শববাহী যানে কুন্তলের দেহ প্রথমে আসে ডুমুরজলার মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবে। সেখান থেকে পাড়ার ক্লাব। এর পরে বন্ধুরাই কুন্তলের দেহ কাঁধে করে নিয়ে যান কাঁড়ার পুকুর লেনে তাঁর বাড়িতে। ততক্ষণে পঞ্চাননতলা রোডের আশপাশের বারান্দায়, ছাদে শুধু মানুষের মাথা।

ছেলের দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে কফিনের উপরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নমিতাদেবী। চোখের জল বাঁধ মানেনি আত্মীয়, বন্ধু, পড়শিদেরও। কাঁদতে কাঁদতে একটা কথাই বলছিলেন নমিতাদেবী, ‘‘ঘুমোনোর আগে ওর কপালে, মাথায় হাত বুলিয়ে না দিলে ও তো ঘুমতো না। তোমরা ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। আর কিছু চাই না।’’ শক্ত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও ছেলের কফিনের সামনে এসে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি চণ্ডীচরণবাবুও। স্বগতোক্তির মতো বলতে থাকেন, ‘‘আমার আর কাউকে কিছু বলার নেই। সব শেষ।’’

কুন্তল ও তাঁর সতীর্থ বিপ্লব বৈদ্যের দেহ পাহাড় থেকে নামানোর ব্যাপারে তদারকি করতে এবং আরও দুই জীবিত অভিযাত্রীকে উদ্ধার করতে কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন আর এক পর্বতারোহী মলয় মুখোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে কুন্তল অন্তত ১১টা অভিযান করেছে। বলেছিল, ফিরে এসে সবাই মিলে আর একটা অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তা আর হল না।’’

শেষযাত্রার আগে কুন্তলের দেহ এনে রাখা হয় স্থানীয় অন্নপূর্ণা ক্লাবের মাঠে। তাঁকে একটি বারের জন্য দেখতে তখন মাঠে ভিড় উপচে পড়েছে। এসেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী লক্ষীরতন শুক্ল-সহ বিশিষ্টেরা। তাঁরা দু’জনেই কুন্তলকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

ফুল-মালায় ঢাকা শববাহী গাড়িটা যখন সকাল সাড়ে ৮টায় বাঁশতলা শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দিল, তখন তাতে পা মিলিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mount Everest Kuntal Kanrar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE