Advertisement
E-Paper

প্রযুক্তির হাত ধরেই বুলি ফুটল ‘নীরব’ প্রেমে

প্রবাদেই বলা হয়, শতং বদ মা লিখ। তুমি মুখে হাজার বার বল, কিন্তু লিখো না। ওঁদের কিন্তু মনের কথা লিখে জানানো ছাড়া উপায় ছিল না।

সব্যসাচী ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২১
বৌভাতের অনুষ্ঠানে ইন্দ্রজিৎ-সুপর্ণা। মালবাজারে। — নিজস্ব চিত্র

বৌভাতের অনুষ্ঠানে ইন্দ্রজিৎ-সুপর্ণা। মালবাজারে। — নিজস্ব চিত্র

প্রবাদেই বলা হয়, শতং বদ মা লিখ। তুমি মুখে হাজার বার বল, কিন্তু লিখো না। ওঁদের কিন্তু মনের কথা লিখে জানানো ছাড়া উপায় ছিল না।

ভালবাসার কথা জানিয়ে দেওয়ার সেই লেখাই চিরস্থায়ী হয়ে গেল। বিবাহ-বন্ধনে বাঁধা পড়লেন ইন্দ্রজিৎ ও সুপর্ণা। জন্ম থেকেই দু’জনে মূক ও বধির। কিন্তু প্রযুক্তির বেঁধে দেওয়া সুতোতেই তাঁরা ভাষার মালা গেঁথেছেন পরিচয়ের পর থেকেই। হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট হোক বা ইমো, স্কাইপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিও চ্যাট — তাঁদের এই ‘নীরব’ প্রেমের সাক্ষী ছিলেন দু’জনের বাড়ির লোকেরা। তাই ন’মাস পরে শুক্রবার জলপাইগুড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যখন চার হাত এক হল তখন পরিজনদের চোখের কোণ চিকচিক করছে।

সোমবার মালবাজারে বৌভাতের অনুষ্ঠানে সেই জল বাঁধ ভাঙল। নবদম্পতির আনন্দের প্রকাশ দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি অনেক নিমন্ত্রিতই। অনেকের মনে পড়ে গেল ‘কোশিস’ ছবিতে সঞ্জীব কুমার ও জয়া ভাদুড়ি অভিনীত মূক-বধির দম্পতির কথা। কেউ আবার হালের ‘বরফি’ ছবিতে রণবীর-প্রিয়ঙ্কার প্রেমের কাহিনির সঙ্গে মিল পেলেন।

বছর একত্রিশের ইন্দ্রজিৎ দিল্লির গুরুগোবিন্দ সিংহ ইন্দ্রপ্রস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী। মামার বাড়ি মালবাজারের কলোনি ময়দানে। মামা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মালবাজার পুরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। মামার বাড়ি থেকেই বিয়ের সব আয়োজন হয়েছে তাঁর। ইন্দ্রজিতের দাদা প্রসেনজিতের বিয়ে হয়েছে গত মার্চে। দাদার জন্য পাত্রী খুঁজতে গিয়েই জলপাইগুড়ির সুপর্ণার খোঁজ পান চক্রবর্তী পরিবার। ইন্দ্রজিতের বাবা প্রশান্তবাবু ও মা মঞ্জুদেবী ইন্দ্রজিতের সঙ্গে সুপর্ণার দেখা করিয়ে দেন। ওরা প্রথম দেখাতেই সম্মতি জানিয়ে দেন।

সুপর্ণাদেবী রাজ্য প্রতিবন্ধী স্তরের প্রথম সারির অ্যাথলিট। জলপাইগুড়ির একটি মূক ও বধির স্কুলের শিক্ষিকাও। প্রথম পরিচয়েই মনে ধরেছিল দু’জনের দু’জনকে। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটই হয়ে যায় মুখের ভাষা। এর পর প্রেম। মোবাইলে দিল্লি থেকে জলপাইগুড়ির দূরত্ব যেন কমতে কমতে পাশের বাড়ি হয়ে গিয়েছে। গত ন’মাস এই প্রেমের সাক্ষী যাঁরা সেই ইন্দ্রজিতের দাদা প্রসেনজিৎ, সুপর্ণার দিদি অপর্ণারা জানালেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপে লিখে চ্যাট আর মেসেঞ্জারে ভিডিও চ্যাটে মশগুল থাকত ওরা। মুখে শব্দ নেই তো কী? মনের ভাব আদানপ্রদানে বিন্দুমাত্র অসুবিধায় পড়তে দেখিনি ওদের।’’

বৌভাতের দিনও সুপর্ণাকে মোবাইলের খুঁটিনাটি বোঝাতে দেখা গেল ইন্দ্রজিতকে। তবে ন’মাস তো কম নয়! অধৈর্য্য লাগেনি? উত্তরে ইন্দ্রজিৎ হোয়াটসঅ্যাপে লেখেন ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতা, ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা...’। সুপর্ণার হাসি তখন বলে দিচ্ছে, এই শীতকালেরই অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা।

Couple Deaf and dumb Technology
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy