Advertisement
E-Paper

বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাড়ছে, হেলমেট না-পরার প্রবণতাও! উদ্বিগ্ন পরিবহণ দফতর চাইছে আরও কঠোর পুলিশি হস্তক্ষেপ

পরিবহণ দফতরের একাংশের দাবি, পরিসংখ্যানই প্রমাণ করছে যে হেলমেট নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও সাধারণ বাইক আরোহীদের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত শৃঙ্খলাবোধ এখনও যথেষ্ট তৈরি হয়নি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৫৯
রাজ্যে দিন দিন বাড়ছে হেলমেটবিহীন বাইক চালানোর প্রবণতা।

রাজ্যে দিন দিন বাড়ছে হেলমেটবিহীন বাইক চালানোর প্রবণতা। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যে দিন দিন বাড়ছে হেলমেটবিহীন বাইক চালানোর প্রবণতা। সম্প্রতি পরিবহণ দফতরের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই তথ্য উঠে এসেছে। হেলমেট না পরে বাইক চালানোর ঘটনা প্রতি বছরই আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাজ্য জুড়ে ৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৪১৬টি হেলমেটবিহীন বাইক চালানোর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৩৮-এ। ২০২৪ সালে তা আরও বাড়ে — রেকর্ড করা হয় ১১ লক্ষ ৬৪ হাজার কেস। আর চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই রাজ্যে ৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪৮৪টি হেলমেটবিহীন বাইক চালানোর ঘটনা ধরা পড়েছে।

পরিবহণ দফতরের একাংশের দাবি, এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করছে যে, হেলমেট নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও সাধারণ বাইক আরোহীদের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত শৃঙ্খলাবোধ এখনও যথেষ্ট তৈরি হয়নি। পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের জোরদার অভিযান চললেও অনেক বাইক আরোহীই আইন ভাঙছেন নিয়মিত ভাবে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি উপনগরী ও গ্রামীণ এলাকাতেও হেলমেট না পরে বাইক চালানোর প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে।

শুধু হেলমেট না-পরাই নয়, আরও একটি প্রবণতা প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইক চালানোর সময় কানে মোবাইলের হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা বা ফোনে কথা বলার ঘটনাও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবহণ দফতরের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে এই ধরনের ২২,৩৪০টি কেস নথিভুক্ত হয়েছিল। সেখানে চলতি বছর, মাত্র কয়েক মাসেই সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৪৫,১৪৬-এ পৌঁছে গিয়েছে।

পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেছেন, “এখন অনেক বাইক আরোহী বাড়ির কাছাকাছি দূরত্বে যাতায়াতের সময় হেলমেট পরার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। দুর্ঘটনার বড় অংশই ঘটে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই। অনেক সময় বাড়ির কাছে এসে বাইকচালকেরা গতি বাড়িয়ে ফেলেন, কিংবা একেবারেই হেলমেট না পরে গন্তব্যে যেতে চান — ফলে মারণ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যে মোট বাইক দুর্ঘটনার অন্তত অর্ধেকেরও বেশি ক্ষেত্রে হেলমেটবিহীন চালকদের মৃত্যু ঘটে। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে পর্যন্ত সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলেই মত তাঁদের। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত ভাবে কঠোর নজরদারির জন্য ক্যামেরা ও ই-চালানের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও দিচ্ছেন পরিবহণ বিশেষজ্ঞেরা।

পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘সবার আগে মানুষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা যতই আইন করি না কেন, মানুষ সচেতন না হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো যাবে না। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বাইক কিনছি, অথচ হেলমেট পরছি না, এটা করা যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের দুর্ঘটনা কমানোর জন্যই তো ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ কর্মসূচির সূচনা করেছেন। জেলাভিত্তিক পুলিশ প্রশাসন, পরিবহণ দফতর একত্রে হাতমিলিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে, সচেতনতা শিবিরও করছে। আমরা আশা করব, এই প্রয়াসে সাধারণ মানুষ সঠিক ভাবে সাড়া দেবেন। তবেই হেলমেট না পরার প্রবণতা, কানে হেডফোন দিয়ে বাইক চালানোর মতো বিষয়গুলি বন্ধ হবে।’’

পরিবহণ দফতর ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনগুলিকে বলেছে হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ করতে। পরিসংখ্যান, বাস্তব চিত্র এবং মৃত্যুর হার — এ সব বিষয় মাথায় রেখে রাজ্যের পরিবহণ দফতর ও পুলিশ-প্রশাসন এখন নতুন করে হেলমেট না পরা এবং মোবাইল ব্যবহারের নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নেমেছে কড়া হাতে। তবু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে — সচেতনতার এই অভাবের সংস্কৃতি বদলাতে কতটা সময় লাগবে?

bike accident State Transport department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy