বঙ্গোপসাগরের উপর ‘সাধারণ’ থেকে ‘গভীর’ হল নিম্নচাপ। ধীরে ধীরে তা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিম্নচাপের শক্তি যত বাড়ছে, তত সমুদ্রের উপর তার গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার এই নিম্নচাপ থেকে যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হবে, তার নাম হবে মোন্থা। ‘প্রবল’ আকারে তা অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এর ফলে অন্ধ্রপ্রদেশ তো বটেই, তামিলনাড়ু, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে ঝড়বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর যে নিম্নচাপটি ছিল, তা গত ছ’ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়েছে এবং গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আপাতত তা আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৬৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে, তামিলনাড়ুর চেন্নাই থেকে ৭৯০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ পূর্বে, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে, অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে এবং ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে।
আরও পড়ুন:
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই গভীর নিম্নচাপ আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে সরবে এবং শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। তখন তার নাম হবে মোন্থা। উত্তর-উত্তর পশ্চিমে সরতে সরতে ২৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে মোন্থা। ২৮ তারিখ রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কাকিনাড়ার কাছে কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যবর্তী উপকূলে তা স্থলভাগে আছড়ে পড়বে। এই সময়ে উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছে যেতে পারে ১১০ কিলোমিটারের গণ্ডিও।
সাধারণত, ঘূর্ণিঝড় পুরোপুরি তৈরি হয়ে না গেলে আবহাওয়া দফতরের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে তার নাম ঘোষণা করা হয় না। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়গুলির জন্য আগে থেকেই একাধিক নাম স্থির করা হয়েছে। এক-একটি দেশের দেওয়া নাম ক্রমানুসারে ব্যবহৃত হয়। সেই ক্রম অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরের পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নাম হওয়ার কথা মোন্থা। এ ক্ষেত্রে সেই নাম তাই ব্যবহার করা হচ্ছে। মোন্থা নামটি তাইল্যান্ডের দেওয়া। এই শব্দের অর্থ ‘সুন্দর সুগন্ধী ফুল’।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছে হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ। এ ছাড়া, কলকাতার জন্যেও আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কলকাতায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায়।