Advertisement
E-Paper

বৃষ্টির জল ধরে গাইঘাটার গ্রামে আর্সেনিক রুখছে দিল্লির সংস্থা

বাবা-মা’র পরে এক সময়ে তাঁর দাদাও মারা গিয়েছিলেন আর্সেনিকে। মধ্য-চল্লিশ নমিতা বিশ্বাস বলছেন, ‘‘এ বার বুঝি আমার দোরগোড়ায় অপেক্ষা করছে মৃত্যু।’’ কৈশোর অবস্থা থেকে আর্সেনিক বাসা বেঁধেছে তাঁর শরীরেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫০
সমাজসেবী বিন্ধেশ্বর পাঠককে স্বাগত জানাচ্ছেন নমিতা বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

সমাজসেবী বিন্ধেশ্বর পাঠককে স্বাগত জানাচ্ছেন নমিতা বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

বাবা-মা’র পরে এক সময়ে তাঁর দাদাও মারা গিয়েছিলেন আর্সেনিকে। মধ্য-চল্লিশ নমিতা বিশ্বাস বলছেন, ‘‘এ বার বুঝি আমার দোরগোড়ায় অপেক্ষা করছে মৃত্যু।’’ কৈশোর অবস্থা থেকে আর্সেনিক বাসা বেঁধেছে তাঁর শরীরেও।

নমিতার দুই ছেলে-মেয়ে। স্বামী পরিতোষ খেতমজুর। পরিবার সামলে স্ত্রীর আর্সেনিকের খরচ জোগাতে হিমসিম অবস্থা। নমিতা বলছেন, ‘‘হেরে যাবেন জেনেও একটা লড়াই চালাচ্ছেন আমার স্বামী। কিন্তু আমার রোগের চিকিৎসা সামাল দেওয়ার অবস্থা কী আর আমাদের!’’

ছেলেবেলা থেকে যে নলকূপের জল খেতেন তার আড়ালে যে আর্সেনিক লুকিয়ে রয়েছে তা জানা গিয়েছিল অনেক পরে। তারই খেসারত দিতে হয়েছে বাবা-মা-দাদাকে হারিয়ে। এখন বুঝি নমিতার পালা।

নমিতা একা নন, উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ব্লকের সুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তেঘরিয়া, বিষ্ণুপুর, মধুসূদনকাটি, নাগবাড়ির, মতো বহু গ্রামে ছায়া ফেলেছে আর্সেনিক। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে।

গাইঘাটার সেই আর্সেনিক-ধস্ত এলাকার দুঃস্বপ্ন মুছতে এ বার মধুসূদনকাটি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই এলাকায় কাজ শুরু করেছে দিল্লির পরিচিত একটি আর্সেনিক প্রতিরোধ সংস্থা ‘সুলভ ইন্টারন্যাশানাল সোশ্যাল সার্ভিস অর্গানাইজেশন’। যাদের পক্ষ থেকে এলাকায় শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির।

সমিতির চেয়ারম্যান হলধর সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে আসার পরে সমিতির উদ্যোগে একটি আর্সেনিক মুক্ত জল প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পাশে পাওয়া গিয়েছে ন্যাশানাল কোঅপারেটিভ ডেভলপভেন্ট কর্পোরেশনকে।’’ সেই প্রয়াসে সামিল হয়েছে দিল্লির সুলভ।

দিল্লির ওই সংস্থার পক্ষ থেকে সমিতির পুকুরে ২০১৪ সালে শুরু হয়েছে জল প্রকল্পের কাজ। সে সময়ে গাইঘাটা এসেছিলেন সমাজসেবী বিন্ধেশ্বর পাঠক। সংস্থার পক্ষে ব্যাখ্যা— ওই পুকুরে বৃ্ষ্টির জল ধরে রেখে তা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শোধন করা হচ্ছে। তার পর আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষার পরে তা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই পরীক্ষা-পর্ব চলছে শিবপুর বি-ই কলেজে। জল আর্সেনিক-মুক্ত হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে একটি ফরাসি সংস্থারও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

ওই সমিতির দাবি, প্রতি কুড়ি লিটার জল আর্সেনিক-আক্রান্ত ওই পাঁচটি গ্রামের মানুষ কিনতে পারেন দশ টাকায়। সমিতির গাড়িও বাড়ি বাড়ি জল ফেরি করে— কুড়ি লিটারের বোতল ১২ টাকায়।

শনিবার, বিন্ধেশ্বর পাঠক একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে মধুসূদনকাটি গ্রামে এসেছিলেন। বলছেন, ‘‘প্রকল্প কেম‌ন চলছে তা দেখতেই এসেছি। মানুষ উপকৃত হচ্ছেন জেনে ভালো লাগল, এটাই তো চেয়েছিলাম।’’

এলাকায় ২৩ জন এখন আর্সেনিক আক্রান্ত বলে সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে দশ জনকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুলভ সংস্থাই তাঁদের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।

রাজ্য আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘বছর কয়েক আগেও এলাকার মানুষ আর্সেনিক নিয়ে সচেতন ছিলেন না। গত কুড়ি বছরে এই এলাকায় আর্সেনিকের শিকার অন্তত ৩০ জন।’’

বিষ্ণুপুরের অনন্ত দাস বলছেন, ‘‘জল না খেয়ে তো থাকা সম্ভব নয়, তাই আর্সেনিক আছে জেনেও ওই নলকূপের জল খেতাম। এখন ওই সংস্থার চিকিৎসার পরে কিছুটা ভাল আছি।’’ সেই আশাতেই বুক বাঁধছে গাইঘাটার পাঁচটা গ্রাম।

sulabh international social service organisation arsenic gaighata sulabh gaighata arsenic rain water harvesting gaighata rain water harvesting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy