Advertisement
E-Paper

হিন্দু আচার মেনেই মিলনের শ্রাদ্ধ করলেন মুসলিম বন্ধু

সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে সম্প্রতি দিল্লির তরুণ অঙ্কিত সাক্সেনাকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর মুসলিম প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। তাতে জড়িয়ে গিয়েছিল রাজনীতি, ধর্ম। কিন্তু, রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অঙ্কিতের বাবা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০৩:৩৮
বন্ধুত্বের জন্য: শ্রাদ্ধে রবি শেখ। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

বন্ধুত্বের জন্য: শ্রাদ্ধে রবি শেখ। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

বন্ধুত্ব যেন মিলিয়ে দিল দিল্লি, বর্ধমানকে।

সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে সম্প্রতি দিল্লির তরুণ অঙ্কিত সাক্সেনাকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর মুসলিম প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। তাতে জড়িয়ে গিয়েছিল রাজনীতি, ধর্ম। কিন্তু, রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অঙ্কিতের বাবা। গত ৩ জুন ইফতার পার্টি আয়োজন করেছিলেন বাড়িতে। অঙ্কিতের শ্রাদ্ধ করেন তাঁর বন্ধু আজহার। এখনও সন্তানহারা দম্পতির সুখে-দুঃখে মুসলিম পড়শিরাই পাশে রয়েছেন। সোমবার বর্ধমান শহরে যেন উঠে এল দিল্লির সেই সম্প্রীতির ছবি। বন্ধু মিলন দাসের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করলেন রিকশা চালক রবি শেখ।

রবি বলেন, ‘‘আমরা খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। ১০ বছরে এমন কোনও দিন নেই যে চায়ের দোকানে দেখা হয়নি। সেখানে ওর পরিবার নেই বলে শ্রাদ্ধ হবে না! তাই আমিই ১০ দিন ধরে সব রকম আচার মেনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা চাঁদা তুলে প্রায় ২০০ জন ভবঘুরে ও ভিখারিদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করেন এ দিন।

বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ নার্স কোয়ার্টারের বাসিন্দা রবি শেখ। মিলন ৩০ বছর আগে ওই এলাকায় আসেন। কোথায় তাঁর বাড়ি, নিজের কেউ আছেন কি না, তার হদিস পাননি কেউই। ওই এলাকায় চায়ের দোকান, রোল-মোগলাইয়ের দোকানে আস্তানা ছিল তাঁর। তাঁদের কাছেই কাজ করতেন, খাওয়াদাওয়া সারতেন। ওই মোড়ের রিকশা স্ট্যান্ডেই বছর দশেক আগে মিলনের আলাপ রবির সঙ্গে। ধীরে ধীরে গাঢ় হয় বন্ধুত্ব। রবির কথায়, “২৪ মে রাতে গল্প করে বাড়ি চলে যাই। সকালে রিকশা নিয়ে কাজে বেরোই। ফিরে এসে শুনি মিলন মারা গিয়েছে। এমন ধাক্কা আসবে বুঝিনি।’’

স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ বসির আহমেদ বলেন, ‘‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মিলন। পুলিশ পরিজনদের খোঁজ না পেয়ে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে সৎকার করতে চাইছিল। আমরা জানতে পেরে দেহ নিজেদের হেফাজতে নিই। কিন্তু মুখাগ্নি কে করবে? রবি বললেন, মুখাগ্নি তো বটেই, তিনিই শ্রাদ্ধ করবেন।’’

এ দিন নার্স কোয়ার্টার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারের উপর মিলনবাবুর মালা দেওয়া ছবি। তার নীচে বসে পুরোহিত লাল্টু ভট্টাচার্যের নির্দেশ মতো সাদা পাঞ্জাবি পরে, গলায় গামছা দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করছেন রবি।

শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের শেষে পুরোহিত বললেন, “এ রকম সৌভাগ্য আমার আর হবে কিনা জানি না। ধর্মের বেড়াজাল টপকে জিতে গেল বন্ধুত্ব।’’

Honour Killing Ankit Saxena Murder Muslim Iftaar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy