Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পের দাবিতে ফের বিক্ষোভ, উত্তপ্ত বোলপুর

ক’দিন আগের কথা। জয়দেবের বাউল মঞ্চ থেকে হঠাৎ বোলপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য, তাঁর সাধের প্রকল্প গীতবিতান থিমসিটি ও বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কেমন চলছে, তা চোখে দেখা।

শিবপুর মৌজায় পাঁচিল ভেঙে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ জমি-মালিকদের একাংশের। সোমবার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

শিবপুর মৌজায় পাঁচিল ভেঙে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ জমি-মালিকদের একাংশের। সোমবার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

ক’দিন আগের কথা। জয়দেবের বাউল মঞ্চ থেকে হঠাৎ বোলপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য, তাঁর সাধের প্রকল্প গীতবিতান থিমসিটি ও বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কেমন চলছে, তা চোখে দেখা। ওই প্রকল্প যেখানে গড়ে উঠছে, সেই শিবপুর মৌজাই ফের তেতে উঠল জমিদাতাদের একাংশের আন্দোলনে। ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোমবার প্রকল্প এলাকায় ঢুকে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করলেন তাঁরা।

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাঁরা শিল্পের জন্য জমি দিয়েছিলেন। শিল্প ও কর্মসংস্থান না হলে সরকার জমি ফেরত দিক। ২০০১-য় শিবপুরে শিল্প-তালুক গড়তে প্রায় ৩০০ একর জমি নেয় বাম সরকার। রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের ওই জমিতে অবশ্য কেউ শিল্প গড়েনি৷ শিল্প গড়া এবং জমির বর্ধিত দামের দাবিতে ‘শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে বাম আমলেই শুরু হয় আন্দোলন।

পালাবদলের পরে, ২০১২ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অধিগৃহীত জমিতে আইটি-হাবের শিলান্যাস করেন। ২০১৫-র শেষে তিনি ঘোষণা করেন— শিবপুরে ১৩১ একর জমিতে ‘গীতবিতান’ আবাসন গড়বে সরকার। পাশে ২০ একর জমিতে বিশ্বভারতীর ধাঁচে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কথাও এ বছরের গোড়ায় জানান মুখ্যমন্ত্রী। অধিগৃহীত জমির ৫০ একরে ‘বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার’ (কুটির শিল্পের জন্য) ও ১০ একরে আইটি-হাব হওয়ার কথা।

যদিও শিল্পের জন্য নেওয়া জমিতে আবাসন নয়, গড়তে হবে শিল্পই— এই দাবিতে অনড় জমিদাতাদের একাংশ। সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর মামলার রায়ের পরে, গত সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে একই দাবিতে ওই এলাকায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এ দিন সকালেও তাঁদের কয়েক জন অধিগৃহীত জমির সাবিরগঞ্জ এলাকার সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভেঙে দেন। টায়ার জ্বালিয়েও প্রতিবাদ জানানো হয়। গীতবিতান প্রকল্প এলাকায় কাশীপুরের দিকে পানীয় জল ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত জলের ট্যাঙ্ক ও পাইপ এবং শ্রমিকদের অস্থায়ী আবাসনেও তাঁরা ভাঙচুর চালান। হামলার মুখে পড়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুবিমল পাল, এসডিপিও (‌বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়।

কিন্তু কেন হিংসার পথে? আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘‘জমিতে শিল্প চেয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে দরবার করেও কিছু হয়নি। কৃষিজমি বাঁচাও কমিটিও আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাই এই আন্দোলন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে ওই কমিটির সভাপতি তথা এলাকার তৃণমূল নেতা মোজাম্মেল হকের দাবি, ‘‘তৃণমূল সরকার ওঁদের ন্যায্য দাবিদাওয়া পূরণ করবে।’’

তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের আবার দাবি, ওখানে কোনও আন্দোলন হচ্ছে না। জনা কুড়ি লোক এবং কিছু স্বার্থান্বেষী এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। সিপিএম টাকা দিয়ে এটা করাচ্ছে। তাঁর সংযোজন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় মানে তো কয়েক হাজার লোকের চাকরি। আর চাকরি মানেই তো শিল্প। ক্ষতিগ্রস্তেরা ২০ হাজার টাকা করে পাবেন। সে টাকা দ্রুত দিয়ে দেওয়া হবে।’’ বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘টাকা দিয়ে আন্দোলন করাটা অনুব্রতবাবুদের সংস্কৃতি। আমাদের আন্দোলন করার হলে সামনে থেকে দলের ঝান্ডা নিয়েই করব। তবে, শিবপুরের আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Industrialization Bolpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE