Advertisement
E-Paper

আসছে না শীত, কমছে না ডেঙ্গিও

মশার তেল, ফগিং মেশিন কিংবা সাফাইয়ের উপরে ভরসা নেই, মানুষ এখন অধীর অপেক্ষায় কবে শীতকাল আসবে। নভেম্বর এসে গেল। যে পরিমাণ হিমের পরশ এখন থাকার কথা তা নেই। বরং আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপের খবরে দুশ্চিন্তায় সল্টলেক, নিউ টাউন, রাজারহাট, বাগুইআটি থেকে শুরু করে দক্ষিণ দমদম ও দমদম এলাকার মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৪

মশার তেল, ফগিং মেশিন কিংবা সাফাইয়ের উপরে ভরসা নেই, মানুষ এখন অধীর অপেক্ষায় কবে শীতকাল আসবে।

নভেম্বর এসে গেল। যে পরিমাণ হিমের পরশ এখন থাকার কথা তা নেই। বরং আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপের খবরে দুশ্চিন্তায় সল্টলেক, নিউ টাউন, রাজারহাট, বাগুইআটি থেকে শুরু করে দক্ষিণ দমদম ও দমদম এলাকার মানুষ। মাঝখানে কিছুটা কমেছিল ডেঙ্গির প্রকোপ। কিন্তু গত সপ্তাহের বৃষ্টির পরে ফের ফিরে এসেছে তা। পরিস্থিতি আসলে কতটা খারাপ, তা বুঝতে বিধাননগর পুরসভা ফের বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে।

বাসিন্দাদের দাবি, এ বারের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখে এই বিস্তীর্ণ এলাকায় মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ পরিকাঠামো তৈরি করুক পুর-প্রশাসনগুলি। বৃষ্টির অপেক্ষা না করে জানুয়ারি থেকেই এলাকা ভিত্তিক মশা মারার অভিযান শুরু হোক। বিধাননগর পুরসভা অবশ্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে দাবি করেছে। পুরসভা জানিয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য কেনা হচ্ছে একটি করে ফগিং মেশিন। পাশাপাশি পতঙ্গ বিশারদ নিয়োগ করে একটি ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ দমদম ও দমদম পুরসভাও জানিয়েছে, আগামী বছরের শুরু থেকেই মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজ চালু করা হবে।

কিন্তু সে তো ভবিষ্যতের কথা। আপাতত মশাবাহিত রোগ কী ভাবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়ে চিন্তার দুই পুরসভাই। যদিও বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘গত পনেরো দিনে ডেঙ্গির দাপট প্রায় ৭০ ভাগ কমেছে। কিন্তু জ্বরের খবর আসছে প্রতিদিন, সংখ্যায় অবশ্য কম। নতুন করে বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।’’ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অবশ্য বলছেন, এ বার যে ডেঙ্গিটা হানা দিচ্ছে তাতে সহজেই রোগীরা কাহিল হয়ে পড়ছেন। খুব দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ছে।

বিধাননগর পুরসভা সূত্রে খবর, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার মধ্যে প্রায় ৫০০ জনের শরীরে ডেঙ্গির উপসর্গ মিলেছিল। ডেঙ্গিতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অক্টোবরের গোড়ায় কিছুটা কমলেও পুজো থেকে ফের ডেঙ্গির দাপট অব্যাহত। নতুন করে প্রায় ৬০০ জন বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত হন।

বাগুইআটির এক বাসিন্দার কথায়, চার-পাঁচ মাস আগে পুরকর্মীদের মধ্যে সেই তৎপরতা চোখে পড়ত না। ইদানীং তৎপরতা বাড়লেও জ্বর কমছে না। ডেঙ্গিও হচ্ছে। দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্তা জানান, আগের তুলনায় মশাবাহিত রোগীর সংখ্যা কমলেও এখনও প্রতি দিন ৫-৬ জন জ্বরের চিকিৎসা করাতে আসছেন, তার মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। একই ছবি রাজারহাট-নিউ টাউন, বাগুইআটি বা বিধাননগরের হাসপাতালগুলিতেও। তবে পুরপ্রশাসনগুলি মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ নিয়ে নির্দিষ্ট করে কোনও তথ্য দিতে পারেনি।

হিসেব মতো বর্ষাকাল শেষ হলেও কমেনি ডেঙ্গির দাপট। ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি ভাইরাস সতেজ থাকছে রোগীদের দেহে। তাই রোগীকে মশা কামড়ানোর পরে যাকে ওই মশা কামড়াচ্ছে তার দেহেও সেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এই মরসুমে অনেকেরই রক্তের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেরিতে এসেছে। ফলে জ্বর হওয়ার তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট না আসার জেরে অন্যদের দেহে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু ডেঙ্গি হয়েছে কি না, তা তাড়াতাড়ি জানতে পারলে রোগ নিধনও দ্রুত সম্ভব হবে। কমবে সংক্রমণের ঝুঁকিও। এ ছাড়া এখন বাড়ির বাইরে মশা বংশবিস্তার না করলেও বাড়ির ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় মশা বংশবিস্তার করছে। পরজীবী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর কথায়, ‘‘রক্তের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষা না করে জ্বর হলেই আক্রান্তকে মশারির মধ্যে রাখা দরকার। তাহলে ডেঙ্গির সংক্রমণ ছড়াবে না।’’ একই মত পতঙ্গবিদ অমিয় হাটির। অমিয়বাবু বলেন, ‘‘ডেঙ্গির সংক্রমণ রুখতে জ্বর হলেই রক্তের নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে এবং রোগীকে প্রথম তিনদিন মশারির মধ্যে রাখতে হবে।’’

Dengue Kolkata Winter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy