Advertisement
E-Paper

বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি, পোয়া বারো ডেঙ্গি-মশার

ডেঙ্গির দাপটে রাজ্যবাসী এমনিতেই নাকাল। তার উপরে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলছে হেমন্তের বৃষ্টি। পরজীবী-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মেঘলা আবহাওয়ায় মশার বংশবিস্তারের ধুম পড়ে যায়, অতিসক্রিয় হয়ে পড়ে ডেঙ্গি এবং অন্যান্য রোগের জীবাণুও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দফায় দফায় বন্যা, চাষ-আবাদের ক্ষয়ক্ষতির দায় আগেই চেপেছে তার ঘাড়ে। ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগের দাপটের জন্যও বৃষ্টি এ বার কাঠগড়ায়। বিশেষ করে এ বারের নিম্নচাপ অক্ষরেখা চাষের ক্ষতি এবং ডেঙ্গির মশা— দুইয়েরই আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞেরা।

ওই অক্ষরেখার দাপটে সোমবার সকাল থেকে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। বৃষ্টিও হয়েছে ছিটেফোঁটা। আজ, মঙ্গলবারেও আকাশ মেঘলা থাকবে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

ডেঙ্গির দাপটে রাজ্যবাসী এমনিতেই নাকাল। তার উপরে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলছে হেমন্তের বৃষ্টি। পরজীবী-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মেঘলা আবহাওয়ায় মশার বংশবিস্তারের ধুম পড়ে যায়, অতিসক্রিয় হয়ে পড়ে ডেঙ্গি এবং অন্যান্য রোগের জীবাণুও। এখানে-সেখানে বৃষ্টির জমা জলে ডিম পাড়ে মশা। এই খামখেয়ালি আবহাওয়ার মতি না-বদলালে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত কমার আশাও দেখছেন না তাঁরা।

এ দিন নবান্নে ডেঙ্গি-পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবহাওয়ার ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দীর্ঘদিন ধরে ঘনঘন বৃষ্টিপাতের জন্যই মশা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নিম্নচাপ অক্ষরেখার অবস্থান ঠিক কোথায়? আলিপুর হাওয়া অফিসের খবর, নিম্নচাপরেখাটি সোমবার রাতে ছিল পশ্চিমবঙ্গের উপরে। তার ফলে সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢুকছে। সেই জলীয় বাতাস ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করছে। তা থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, আজ, মঙ্গলবারেও অল্পবিস্তর বৃষ্টির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এই ধরনের অল্পবিস্তর বৃষ্টিতেই ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানান, অল্প বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় জল জমে। মশারা ডিম পাড়ে সেই জমা জলে। এখন কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা বহু ডেঙ্গিরোগী আছেন। মশা তাঁদের কামড়ানোর পরে সুস্থ মানুষকে কামড়ালে ওই রোগের জীবাণু আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিভিন্ন পুরসভার কর্তাদের অভিজ্ঞতা, জোরালো বৃষ্টি হলে নানা জায়গায় জমে থাকা জল ধুয়েমুছে বেরিয়ে যায়। ফলে মশার বংশবৃদ্ধি থমকে যায়। রোগব্যাধির আশঙ্কাও কমে। কিন্তু হাল্কা বৃষ্টি হলেই সমস্যা। অল্প বৃষ্টির জল ছাদে ফুলের টবে বা বাতিল পাত্রে জমে থাকে। অনেকেই সে-দিকে নজর দেন না। এই ধরনের জমা জলে বংশ বিস্তার করতে থাকে মশা। অসংখ্য নির্মীয়মাণ বাড়ি, মেট্রো স্টেশনেও জল জমে মশার বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে। নির্মীয়মাণ মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ে এ দিন তোপ দেগেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও।

হেমন্তে এসেও আবহাওয়ার তুঘলকিপনা চলতে থাকায় সর্দি, জ্বরের মতো পরজীবীবাহিত রোগও বা়ড়তে পারে বলে চিকিৎসকদের আশঙ্কা। ‘‘এই ধরনের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় হাওয়াবাহিত রোগ বাড়ে। শীত পড়লে এগুলোর দাপট কমে যাবে,’’ বলেন অমিতাভবাবু।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বিনয় গুছাইত জানাচ্ছেন, বৃষ্টি হলে মশাবাহিত রোগ তো বাড়বেই। সেই সঙ্গে সর্দিজ্বর, ভাইরাল ফিভারের মতো রোগ দাপট দেখাবে। কেননা ঋতু বদলের পর্বে ভাইরাসেরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাঁর পরামর্শ, এ সময়ে চট করে এসি ঘরে ঢোকা বা বেরোনো যাবে না। শরীরে আচমকা তাপমাত্রার বদল হলে ভাইরাসেরা আক্রমণ করে। শরীর খারাপ হলে ‘ডিহাইড্রেশন’ এড়াতে পর্যাপ্ত জল খেতে হবে।

শুধু মানবশরীরের ক্ষতি নয়। বৃষ্টি বাড়লে শীতের আনাজেরও দফারফা হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর। মাঠে যে-ধান রয়েছে, ক্ষতি হতে পারে তারও। পুজোর পর থেকে দু’টি নিম্নচাপের জেরে ধেয়ে আসা ঝোড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টিতে আনাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতি কাটবে কবে?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আশ্বাস, কাল, বুধবার থেকেই বৃষ্টি কমবে। কিন্তু তাপমাত্রা এখনই খুব বেশি নামার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

তাই প্রশ্ন উঠছে, বৃষ্টি কমলেও হেমন্ত ফিরে আসবে কি?

সদুত্তর নেই আবহবিদদের কাছে।

Dengue Rain ডেঙ্গি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy