E-Paper

গাড়ির গতির হদিস পেতে ফেরারির দ্বারস্থ কলকাতা পুলিশ

বেপরোয়া ভাবে চালানোর জেরেই ফেরারি গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়েছে, না কি কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি এর জন্য দায়ী— সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই এগোতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:২৮
দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনাস্থলের সরাসরি কোনও সিসিটিভি ফুটেজ নেই। গাড়ি পরীক্ষা করেও তেমন কিছু জানা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ঘটনার এক দিন পরেও পুলিশ জানতেই পারল না, রেড রোড সংলগ্ন হসপিটাল রোডে বিলাসবহুল ফেরারি গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ল কী কারণে! জানা গেল না, ঠিক কত গতিতে চলার কারণে গাড়িটি উল্টে গেল! গাড়িটি যিনি চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশ জেনেছে, সেই অমৃত সিংহ সাইনি এখনও হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গাড়িটির প্রস্তুতকারক সংস্থা ফেরারির দ্বারস্থ হচ্ছেন ফরেন্সিক তদন্তকারীরা। তার পরেই এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে পুলিশের দাবি। কারণ, বেপরোয়া ভাবে চালানোর জেরেই ফেরারি গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়েছে, না কি কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি এর জন্য দায়ী— সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই এগোতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

বুধবার সকালে রেড রোড সংলগ্ন হসপিটাল রোডে দ্রুত গতিতে ছুটে আসা একটি ফেরারি গাড়ি বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গাড়িটির গতি এতটাই বেশি ছিল যে, সেটি এর পরে ঘুরতে ঘুরতে উল্টেপাল্টে যায় এবং একটিগাছে ধাক্কা মারে। এর জেরে গাড়ির পিছনের দিকটি কার্যত ভেঙে ভিতরের দিকে ঢুকে আসে। খুলে বেরিয়ে যায় গাড়ির পিছনের দিকের একটি চাকা। সেই সময়ে রাস্তার ওই অংশেকাজ করা এক সাফাইকর্মীর পায়ে গুরুতর চোট লাগে। গাড়িতে থাকা অমৃত, তাঁর ছেলে এবং ওই সাফাইকর্মীকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অমৃত ও তাঁর ছেলেকে আলিপুরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সাফাইকর্মী এসএসকেএম হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। অমৃতের বুকে চোট লেগেছে। তবে তাঁর ছেলেকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এর পরেই এই গাড়ি কী ভাবে দুর্ঘটনায় পড়ল, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, ফেরারি ২৯৬ জিটিবি মডেলের গাড়িটির বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ এবং পেট্রল— দু’টিতেই চলে গাড়িটি। ছয় সিলিন্ডারের ‘সুপার কার’ গোত্রের গাড়িটি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে মাত্র ২.৯ সেকেন্ডে। ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতি তুলতে গাড়িটির সময় লাগে ৭.৩ সেকেন্ড। রয়েছে ‘কোয়ালিফাইং’, ‘পারফরম্যান্স’, ‘হাইব্রিড’ এবং ‘ইলেকট্রিক’ মোড। গাড়িটি সর্বোচ্চ গতি তুলতে পারে ঘণ্টায় প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। রেড রোডে গাড়িটি ঠিক কত গতিতে চলছিল, সেটাই এখন মূল চর্চার বিষয় কলকাতা পুলিশের অন্দরে। এ ব্যাপারে জানতে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের তরফে গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। যদিও অতীতে ডোমজুড় হাইওয়েতে ব্যবসায়ী শিবাজী রায়ের ফেরারি ক্যালিফর্নিয়া টি কনভার্টিবল গাড়ি সম্পর্কে তদন্তে নেমে ধাক্কা খেতে হয়েছিল পুলিশকে। কারণ, বিলাসবহুল এই গাড়ির তথ্য প্রস্তুতকারী সংস্থার সাহায্য ছাড়া বার করতে পারেননি তদন্তকারীরা। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা শেষ পর্যন্ত ফেরারি সংস্থার কাছে গাড়িটি সম্পর্কে তথ্য চেয়ে পাঠান।

এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এই ধরনের গাড়িতে স্টিয়ারিংয়ের তলায় একটি ‘মডিউল’ থাকে। ওই মডিউলে দুর্ঘটনার আগের পাঁচ মিনিট পর্যন্ত গাড়ির নানা কার্যকলাপ ধরা পড়ে। মডিউলটি খুলতে ‘সিডিআর’ (ক্র্যাশ ডেটা রিভাইভার)প্রস্তুতকারক সংস্থার একটি সফটওয়্যার রয়েছে। ওই সফটওয়্যারটি ফেরারি সংস্থার কাছ থেকে পেতে ইমেল করা হচ্ছে। মডিউল খুলতে পারলেই নিশ্চিত করে জানা সম্ভব, গাড়িটি ঠিক কত গতিবেগে চলছিল,দুর্ঘটনার আগে সেটি কোনও বাঁক নিয়েছিল কিনা এবং গাড়ির ভর ও গতিবেগের ভারসাম্য ঠিক ছিল কি না।’’ তত দিন হয়তো ফেরারি দুর্ঘটনা রহস্যেই ঢাকা থাকবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Road Accident red road

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy