Advertisement
E-Paper

বর্ধমানে জঙ্গি ডেরার কথা জানিয়েছিল ঢাকা

পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের আশ্রয়ে মৌলবাদীদের ডেরার যে তালিকা বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতকে দিয়েছিল, তাতে একেবারে গোড়ার দিকেই ছিল বর্ধমান শহরের নাম। বাংলাদেশ সরকারের এক শীর্ষ সূত্র এ খবর দিয়ে জানাচ্ছেন, রাজশাহিতে বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়া মৌলবাদীদের জেরা করেই বর্ধমান শহরের কোথাও বাংলাদেশি জঙ্গিদের সম্ভাব্য ঘাঁটির কথা জানা গিয়েছিল। সেখান থেকে বেশ কয়েক বার চোরা পথে রাজশাহিতে যে আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) এসেছে, সে খবরও বাংলাদেশ পুলিশের কাছে রয়েছে।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫১
খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে সিপিএমের মিছিল বর্ধমান শহরে। ছবি: উদিত সিংহ।

খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে সিপিএমের মিছিল বর্ধমান শহরে। ছবি: উদিত সিংহ।

পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের আশ্রয়ে মৌলবাদীদের ডেরার যে তালিকা বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতকে দিয়েছিল, তাতে একেবারে গোড়ার দিকেই ছিল বর্ধমান শহরের নাম। বাংলাদেশ সরকারের এক শীর্ষ সূত্র এ খবর দিয়ে জানাচ্ছেন, রাজশাহিতে বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়া মৌলবাদীদের জেরা করেই বর্ধমান শহরের কোথাও বাংলাদেশি জঙ্গিদের সম্ভাব্য ঘাঁটির কথা জানা গিয়েছিল। সেখান থেকে বেশ কয়েক বার চোরা পথে রাজশাহিতে যে আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) এসেছে, সে খবরও বাংলাদেশ পুলিশের কাছে রয়েছে। নিউ ইয়র্কে ভারত সরকারের হাতে কয়েক সপ্তাহ আগে সে তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে বলে ঢাকার ওই সূত্রের দাবি। বাংলাদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও মঙ্গলবার রাজশাহি থেকে বলেন, “যত দূর মনে পড়ছে বর্ধমানে জঙ্গিদের সম্ভাব্য ডেরার তথ্যও দিল্লিকে জানিয়েছিল ঢাকা।”

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের বক্তব্য, “বর্ধমানের বিস্ফোরণ অত্যন্ত সংবেদনশীল ঘটনা। জঙ্গি ডেরার বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে কী তথ্য মিলেছে, তার ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে সব কিছু এখনই সংবাদমাধ্যমকে বলা যাবে না।” তবে তিনি জানান, সচরাচর বিভিন্ন সূত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য হাতে এলেই সাধারণ ভাবে তা সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। রাজ্যের এক শীর্ষ স্তরের সচিবেরও দাবি, সুনির্দিষ্ট কোনও বার্তা না থাকলেও পুজোর সময়ে নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রের সাধারণ সতর্কবার্তা রাজ্য পেয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি-র দাবি, বর্ধমানের বিস্ফোরণে নিহত শাকিল আহমেদ বাংলাদেশ নাগরিক। কয়েক বছর আগে সে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। বাংলাদেশ পুলিশের জঙ্গি দমন শাখার এক কর্তা মঙ্গলবার জানাচ্ছেন, সংবাদমাধ্যম থেকেই তাঁরা এ খবর জেনেছেন। শাকিলের বাড়ি বাংলাদেশের ঠিক কোথায়, সে সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের হাতে নেই। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকেই বাংলাদেশ পুলিশ জেনেছে, ঢাকা বা তার উপকণ্ঠের বাসিন্দা হতে পারে সে। জঙ্গি দমন শাখার ওই কর্তা জানান, শাকিল অত্যন্ত পরিচিত নাম বাংলাদেশে। গত কয়েক বছর ধরে বেপাত্তা এমন ৪১ জন শাকিলের নাম পুলিশের খাতায় রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংস্রবের অভিযোগ রয়েছে। তাদের কারও পদবি আহমেদ, কারও গাজি, কারও আখতার, কেউ বা মৌলানা শাকিল। ওই কর্তা জানান, বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে শাকিলের বিষয়ে খোঁজখবর করার কোনও নির্দেশ এখনও তাঁরা পাননি। তবে বাংলাদেশে এখন ঈদের ছুটি চলছে। তাঁর ধারণা, ছুটির কারণেই হয়তো পুলিশের কাছে এই নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি। শাহরিয়ার আলম জানান, বর্ধমান বিস্ফোরণের পরে বেশ কয়েক দিন কেটে গেলেও ভারত সরকারের কাছ থেকে তাঁরা কিছু জানতে পারেননি। সম্ভবত টানা ছুটিই এর জন্য দায়ী। আলম জানান, তাঁর মন্ত্রক বুধবার ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনকে নোট পাঠিয়ে বর্ধমানের বিস্ফোরণ নিয়ে তথ্য জানতে চাইবে।

বাংলাদেশে মৌলবাদী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার ধারাবাহিক অভিযান চালানোর পরে সেই সব দুষ্কৃতীদের অনেকে পশ্চিমবঙ্গে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে আগেই দিল্লির কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ঢাকা। এমনকী বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদা-র বেশ কয়েক কোটি টাকাও বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারকে উচ্ছেদের চক্রান্তে মৌলবাদীদের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে তারা। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হোসেন মাহমুদ আলি গত মাসে নয়াদিল্লিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে এই অভিযোগ জানিয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় এই সব দুষ্কৃতী ও জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। দু’জনেই বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকার কাছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য চান। এর পরে নিউ ইয়র্কে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনাতেও বিষয়টি ওঠে। নরেন্দ্র মোদী শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। কারণ দু’দেশের নিরাপত্তার পক্ষেই বিষয়টি উদ্বেগের। বৈঠকের পরে শেখ হাসিনা বলেন, “দুই দেশই একে অপরের স্বার্থ-বিরোধী শক্তিকে তাদের মাটি ব্যবহার না-করতে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।”

এই বৈঠকের সময়েই বাংলাদেশ সরকার পশ্চিমবঙ্গে মৌলবাদী দুষ্কৃতীদের সম্ভাব্য শিবিরের বিষয়ে কিছু তথ্য ভারতের সরকারি পদাধিকারীদের হাতে তুলে দেয়। তাতে বর্ধমান ছাড়া নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগনা, দুই দিনাজপুর, মালদহ, হাওড়ার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি কলকাতার কয়েকটি মহল্লারও উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, শাসক দলের কিছু স্থানীয় নেতা অর্থের বিনিময়ে মৌলবাদীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এই সব দুষ্কৃতীদের তৃণমূল ব্যবহারও করছে। ঢাকার দাবি, কোনও কোনও দুষ্কৃতী সেখান থেকে বাংলাদেশে যাতায়াত করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখে। সিমি-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ। ঢাকার নালিশ, গত দু’বছরে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের নাশকতার কাজে কোটি কোটি টাকা এসেছে ইমরানের হাত ঘুরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছেন।

burdwan blast khagragadh jamat anamitra sengupta shakil ahmed hasem mollah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy