Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে খুন

ছাদে পায়চারি করাই ভাল, বলছেন চুঁচুড়াবাসী

ভোরের আলো-বাতাসও আর নিরাপদ রইল না হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ায়।বুধবার ভোরে পথে বের হয়ে খুন হয়েছেন এক বৃদ্ধা। ছিনতাই রুখতে গিয়ে আহত হয়েছেন আরও একজন। বস্তুত গত কয়েক মাস ধরেই চুঁচুড়ায় আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা প্রতিদিন বাড়ছে। কিছু দিন আগেই হুগলি স্টেশন রোড এলাকায় সন্ধ্যায় ভরা বাজারের মধ্যে মোটর বাইক নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা।

জখম হেমপ্রভা। —নিজস্ব চিত্র।

জখম হেমপ্রভা। —নিজস্ব চিত্র।

তাপস ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০৩:০৪
Share: Save:

ভোরের আলো-বাতাসও আর নিরাপদ রইল না হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ায়।

বুধবার ভোরে পথে বের হয়ে খুন হয়েছেন এক বৃদ্ধা। ছিনতাই রুখতে গিয়ে আহত হয়েছেন আরও একজন। বস্তুত গত কয়েক মাস ধরেই চুঁচুড়ায় আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা প্রতিদিন বাড়ছে। কিছু দিন আগেই হুগলি স্টেশন রোড এলাকায় সন্ধ্যায় ভরা বাজারের মধ্যে মোটর বাইক নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়। এক স্কুল ছাত্রীর পায়ে গুলি লাগে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীদের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের জেরেই এই কাণ্ড। সাময়িক ভাবে ঘটনাটি নিয়ে হইচই শুরু হলেও কিছু দিন পরেই সব থিতিয়ে যায়। ফের নতুন একটি ঘটনা সামনে এসে পড়ে।

কিছু দিন আগে চুঁচুড়া শহরে আক্রান্ত হয় পুলিশই। আদালত থেকে জেলে ফেরার পথে গাড়ির ভিতরেই পুলিশকর্মীদের আক্রমণ করে কিছু বন্দি। পুলিশকে মারধর করে, ব্লেড চালিয়ে পালায় কয়েক জন। পলাতকদের মধ্যে পোলবায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ধৃত দাগি অপরাধী জিকো-সহ তার অন্য সাগরেদরাও ছিল। ওই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়। জিকোকে ফের ধরতে কালঘাম ছুটে যায় পুলিশের।

অন্য আরও একটি ঘটনায়ও পুলিশের কাজকর্ম প্রশ্নের মুখে পড়ে সম্প্রতি। চুঁচুড়া আদালতের লকআপের সেই ঘটনায় এ বারও আক্রান্ত হয় পুলিশ। ভদ্রেশ্বর থানার ওসি ভোলানাথ ভাদুড়ি হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত দিপুয়া পুলিশের উপরে চড়াও হয়। পুলিশকে মারধরের আগে কোর্ট লকআপের সিসিটিভি ভেঙে দিয়েছিল ওই দুষ্কৃতী। হামলার ঘটনা যাতে ক্যামেরাবন্দি না হয়, সে জন্যই রীতিমতো ছক কষেছিল ওই বন্দি। কোর্ট লকআপের মধ্যে দিপুয়াকে ঠেকাতে গেলে কোর্ট ইনস্পেক্টরকেও সে মারধর করে। বুকে ঘুষি খেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

চুঁচুড়াবাসীর প্রশ্ন, পুলিশই যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষকে কতটুকু সুরক্ষা দিতে পারবে তারা। বুধবার বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় আরও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সকালে যাঁরা হাঁটেন, তাঁদের অনেকেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ভোরে না হেঁটেও উপায় নেই তাঁদের অনেকের। প্রবীন এক নাগরিকের কথায়, “সুস্থ থাকতে গিয়ে আক্রান্ত হতে চাই না। এর থেকে বরং ছাদের উঠেই পায়চারি করব এ বার থেকে।” শহরের বাসিন্দা এক ব্যাঙ্ক কর্মীর কটাক্ষ, “পুলিশ আসলে ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিয়েই সদা ব্যস্ত। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য থানায় কত জন পুলিশ কর্মী থাকেন?”

হুগলি জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অবশ্য এ দিন বলেছেন, “তল্লাশি শুরু হয়েছে। পুলিশ সব দিক বিবেচনা করে দেখছে।” কিন্তু একের পর এক ঘটে চলা অপরাধের সাক্ষী চুঁচুড়াবাসী এখন এই আশ্বাসে আর বিশেষ ভরসা রাখতে পারছেন কই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tapas ghosh morning walk murder cinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE